প্রচ্ছদ

দেওয়ালী উৎসবে আলোকিত হোক বিশ্ব

  |  ১৫:১৩, নভেম্বর ১৩, ২০২০
www.adarshabarta.com

:: তানিজা খানম জেরিন ::

আগামী ১৪ই নভেম্বর ভারত বাংলাদেশসহ বিশ্বে বসবাসকারী প্রবাসী ও অভিবাসী সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বী করোনাকালেও সীমিত আকারে দেওয়ালী উৎসব বা কালীপুজা উদযাপন করবে। দেওয়ালী সর্বভারতীয় হিন্দুদের একটি প্রধান ধর্মীয় উৎসব। চতুর্দশীর দিন অমাবস্যার সন্ধ্যায় দুই বাংলাতেই ঘটা করে শ্যামাপুজা বা কালীপুজা উদযাপন করা হয়। দেশে থাকাকালীন সময়ে পত্র পত্রিকা বা ম্যাগাজিনে ভারতের বিভিন্ন অংশে আমি দেওয়ালী উৎসবের খবর পড়েছি কিন্তু আমাদের বাংলাদেশসহ ভারতের পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি প্রদেশে কালীপুজাই মূলত দেওয়ালী উৎসব নামে পরিচিত। আমাদের এ অঞ্চলে নবদ্বীপের বিখ্যাত তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ আগান্বাগীশকে বাংলায় কালীমূর্তি ও কালীপুজার প্রবর্তক মনে করা হয়। উল্লেখ্য ইতিহাস মতে আমাদের পূর্বাঞ্চলে নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ই পুজা উদযাপন ও প্রসারে বিরাট ভূমিকা রাখেন।

দেওয়ালী বা দিপান্বিতা বা দীপাবলী সুখরাত্রি, সুখসুপ্তিকা, এবং যক্ষরাত্রি যে নামেই উদযাপন করিনা কেন এর অর্থ হল প্রদীপের সমষ্টি এবং হৃদয়ের আলোয় অনুভব করা, হৃদয়ের আলো দেখা এবং অশুভ শক্তিকে বিতারণ করা। দেওয়ালী মূলত পাঁচদিন ব্যাপী উৎসব এই উৎসবের দিন ঘরে ঘরে মাটির মুচিতে প্রদীপ জ্বালিয়ে অমঙ্গল বিতারণের প্রতীক হিসেবে দেওয়ালী উৎসবটি বিশ্বব্যপী প্রায় সার্বজনীন। আলোকের প্রজ্জ্বলন শুধু হিন্দুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনা বরং বিশ্বে আলোকোৎসবের বন্যায় প্রত্যেক মানবের জীবন থেকে সব অন্ধকার দূর করে আলোয় উদ্ভাসিত করে। দক্ষিণ ভারতের অনেকেরই ধারণা দেওয়ালী উৎসব হলো স্বর্গের দেবতাকে মর্তের কুটিরে বরণ করে নেয়ার উৎসব ।

দেওয়ালী উত্তর ভারতের কিছু অংশে বিভিন্নভাবে পালিত হয় অনেক অঞ্চলে চৌদ্দরকম শাকের মিলিত একটি মহাভোজ পর্ব খেয়ে থাকেন। দেওয়ালী উপলক্ষে বিশ্বে সর্বত্রই মিষ্টি, শনপাপড়ি ও লাড্ডু বিতরণ একটি প্রচলিত রেওয়াজ। মহারাষ্ট্রসহ আশেপাশের আরো দু/একটি প্রদেশের হিন্দুরা রাম সীতার বারো বছর বনবাস থেকে ফেরত আসার দিনটিকে দেওয়ালী উৎসব হিসেবে পালন করে থাকেন। আরো উল্লেখ্য দ্বাপর যুগে শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশে তার স্ত্রী সত্যভামা দেবী নবকাসুরকে হত্যা করেন এই জন্য দক্ষিণভারতীয়রা শান্তির প্রতীক হিসেবে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালাত। ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের শিখ ধর্মাবলম্বীরা ষষ্ঠ গুরু হরগোবিন্দ ও আরো ৫২ জন রাজার সাথে কারাগার থেকে মুক্তির দিনকেই দেওয়ালী উৎসব হিসেবে পালন করে থাকে। বুদ্ধদেবের গৃহত্যাগের স্মরণে বুদ্ধিস্টরা তিব্বত, মায়ানমার ও থাইল্যান্ডও দেওয়ালী উৎসব পালন করে। দেওয়ালী হলো ভ্রাতৃত্বের উৎসব এবং অনেক অঞ্চলে আলোকসজ্জ্বায় বাড়ী ঘর আলোকিত করে ও অনেক সুন্দর সুন্দর দৃষ্টিনন্দন আলপণা আঁকে।

না; এবার করোনা সঙ্কটের জন্য জ্যাকসন হাইটসের ব্যবসায়ী সমিতির উদ্দোগে যে দিনব্যাপী দেওয়ালী মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো সেটা থেকে নিউইয়র্কবাসী বঞ্ছিত হলো। দেওয়ালী মেলা হবেনা এবার নিউজার্সী অঙ্গরাজ্যেও। গতবছরও আমরা জ্যাকসন হাইটসে মেলায় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নৃত্যাঞ্জল়ীর পরিবেশনার সাথে জড়িত ছিলাম। নিউইয়র্কে বাংলাভাষী হিন্দুদের কালী পুজাও এবার হাতে গোনা তিন/চারটি মন্দিরে অনুষ্টিত হবে কিন্তু করোনা সংক্রমণের আতঙ্কে পরিদর্শনে যেতে হবে মুখোশ পরে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে। শৈশবের স্মৃতি বিজরিত ময়মনসিংহ নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জের জাকজমকপূর্ণ কালী পুজার উৎসবটি হবে সীমিত আকারে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে। অজ্ঞতা ও নিরাশার অন্ধকার দূর করে আলোয় উদ্ভাসিত হোক করোনা আতঙ্কিত এই বিশ্ব। বর্তমান বিশ্বে মানব কূল নিপীড়ন, লাঞ্ছিত, বঞ্ছিত, অনাচার, জুলুম অন্যায় অত্যাচারে নিষ্পেষিত ও জর্জরিত। বিশ্বে প্রতিটি মানব আজ অদৃশ্য শত্রু করোনা ভাইরাসের ভয়ে আতঙ্কিত জীবন যাপন করছে। দেওয়ালীর শুভ সন্ধ্যায় মাটির মুচিতে প্রদীপ জ্বালিয়ে দূর হোক যত অশুভ শক্তির দাপট নিপাত যাক সব ষড়যন্ত্র মুঁছে যাক মানবের সকল কষ্ট যন্ত্রনা দূর হয়ে যাক মনের কালিমা। দেওয়ালীর আলোয় উদ্ভাসিত হোক মানবের অন্তর আত্মা হৃদয়ের আলোয় আলোকিত হোক এ ভূবন; জ্বলুক আলো – অন্ধকার দূর হোক, এ প্রত্যাশা সর্বক্ষণ।

লেখক: কলামিস্ট, নিউইয়র্কে বসবাস করেন।