প্রচ্ছদ

কুমারগাঁও গ্রিডে অগ্নিকান্ড, বিদ্যুৎহীন সিলেট

  |  ১৭:৪২, নভেম্বর ১৭, ২০২০
www.adarshabarta.com

আদর্শবার্তা ডেস্ক :

সিলেটের কুমারগাঁওয়ে বিদ্যুতের গ্রিড উপকেন্দ্রে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে। অগ্নিকান্ডে পুরো সিলেট বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। অন্ধকারে পতিত হন প্রায় ২০ লাখ গ্রাহক। বাসা-বাড়িতে দেখা পানিসহ নানা সংকট। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন শিশু, বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। কিভাবে আগুনের সূত্রপাত হলো এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি।

মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে কুমারগাঁওয়ে পিডিবির ৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তে আগুনের লেলিহান শিখা দাউ দাউ করে ছড়িয়ে পড়ে। আতংক দেখা দেয় আশপাশের এলাকায়। দ্বিকবিদিক ছুটতে থাকেন স্থানীয় মানুষ ও পথচারীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ একটা আওয়াজ শুনে তারা দেখতে পান আগুনের শিখা। এর পরেই আগুন বৃদ্ধি পেতে থাকে। অগ্নিকা-ে সকাল ১১টা ২ মিনিট থেকে সিলেট ছাড়াও মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার ব্রিগেডের ৭ টি ইউনিট প্রায় দেড়ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। প্রথমে ৫টি ইউনিট কাজ শুরু করে। পরে আরো দুটি ইউনিট যোগ দিয়ে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নেভাতে গিয়ে জয়ন্ত কুমার নামে ফায়ার সার্ভিসের এক সদস্য দগ্ধ হন। তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগুনে প্রায় ৭০ কোটি টাকার ২৫/৪১ এমবিএ দুটি ট্রান্সফরমার পুড়ে গেছে। ট্রান্সফরমারগুলোর বাইরের অংশ পুড়লেও ভেতরে কোনো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অপরদিকে গ্রিডে অগ্নিকা-ের ঘটনায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন উপ কেন্দ্রের সংশ্লিষ্টরা। মঙ্গলবার রাতে তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স সিলেটের উপ পরিচালক শওকত হোসেন বিকেল ৪ টার দিকে বলেন, গ্রিড লাইনের আগুন নিয়ন্ত্রণে। ট্রান্সমিটারের জ্বালানি তেল থেকে এই আগুনের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন ও বিতরণ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মোকাম্মেল হোসেন বিকেল ৩ টায় বলেন, “আগুনে দুটি ট্রান্সফরমার পুড়ে গেছে। এ অবস্থায় পুরো সিলেটে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।” তিনি বলেন, এটি মূলত জাতীয় গ্রিডের সঞ্চালন লাইন। আগুন লাগার কারণে জাতীয় গ্রিডেও বিদুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। এই মুহূর্তে ২০ লাখের মত গ্রাহক বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছেন। কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হল জানতে চাইলে মোকাম্মেল হোসেন বলেন, “সাব স্টেশনে অনেকগুলো প্যানেল আছে। কোনটি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে তা আমরা বলতে পারছি না।” তবে আগুনে বিদুৎ উপকেন্দ্রের ‘বেশ ক্ষয়ক্ষতি’ হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের পরিচালক ( পিআর) সাইফুল হাসান চৌধুরী মঙ্গলবার বেলা পৌনে ৪টায় জানান, বিদ্যুৎ বিভাগ পরিস্থিতি উত্তরণের চেষ্টা চালাচ্ছে। ৫/৬ ঘন্টাও লাগতে পারে স্বাভাবিক হতে। কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হয়েছে। কেবল সিলেট নগরীতে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হতে কিছু সময় লাগছে।

পিজিসিবির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াকুব এলাহী চৌধুরী জানান, সকাল ১১টায় ৩৩/১১ কেভি বিদ্যুৎ সরবরাহ ট্রান্সফরমারে আগুন লেগে যায়। এই ট্রান্সফরমারটি দিয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) উপকেন্দ্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে। সেখান থেকে আমাদের উপকেন্দ্রের ১৩২/৩৩ কেভি একটি ট্রান্সফরমারে আগুন লেগে যায়। বড় দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ওই উপকেন্দ্রের চারটি ট্রন্সফরমারে বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঘটনা তদন্তে প্রধান প্রকৌশলী ইকবাল আজমের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে তারা প্রতিবেদন জমা দেবেন।

পিজিসিবি সূত্র বলছে, কুমারগাও উপকেন্দ্র থেকে ছাতক, সুনামগঞ্জ এবং বিয়ানীবাজার উপকেন্দ্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। ফলে কুমারগাও বন্ধ করে দেওয়াতে ছাতক, সুনামগঞ্জ এবং বিয়ানীবাজার এলাকার সাবস্টেশনগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কুমারগাও উপকেন্দ্রে চারটি ১৩২/৩৩ কেভি একটি ট্রান্সফরমার রয়েছে। এরমধ্যে একটি ট্রান্সফরমার পুড়ে গেলেও বাকি তিনটি ভালো আছে বলে আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। এখন উপকেন্দ্রের অন্য তিনটি ট্রান্সফরমার পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। সেগুলো ঠিক থাকলে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে পারে।

একটি সূত্র বলছে, এই উপকেন্দ্রে প্রায় সময়ই ধোয়া উড়তে দেখা যায়। আবার এই ধোয়া নিভেও যায়। এখানে ব্যবস্থাপনায় যথেষ্ট ক্রুটি আছে। দায়িত্বরতদেরও আছে গাফিলতি। আর এই ছোট ছোট ঘটনাই কাল বড় ঘটনায় রূপ নিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ বলছেন, কখনো বিদ্যুৎকেন্দ্র, আবার কখনো সঞ্চালন গ্রিড উপকেন্দ্র – একের পর এক আগুনের ঘটনায় ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা। ঠিকঠাক নকশা না হওয়া, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, দায়িত্বে অবহেলা আর অদক্ষতাকেই নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহের অন্তরায় । যার কারণে প্রায়ই ঘটছে এমন দুর্ঘটনা।

এদিকে, আগুন লাগার খবর পেয়ে দুপুরে কুমারগাও গ্রিড স্টেশন এলাকায় যান সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম। তিনি বলেন, পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুতের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎহীনতার কারণটি জনগনকে জানাতে মাইকিং করানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনেরও সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। তারা অগ্নিকান্ডের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপন করবেন। রাত ৯ টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সিলেট নগরী ছিলো বিদ্যুতহীন অন্ধকারে। বাসা-বাড়ীতে চরম পানি সংকট। পানির জন্য চলছে এক রকমের হাহাকার। হাসপাতালগুলোর চিত্র আরো বিপর্যস্ত। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই বন্ধ হয়ে যায় দোকান পাট। এক পর্যায়ে নগরী হয়ে যায় ভুতুড়ে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন রাতেই কিছু এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহ সম্ভব হবে।

(সুত্র: দৈনিক জালালাবাদ)