প্রচ্ছদ

সাহিত্য একাডেমি’র দশ বছর

  |  ১৭:৫২, ডিসেম্বর ০২, ২০২০
www.adarshabarta.com

:: এবিএম সালেহ উদ্দীন ::

সাহিত্য একাডেমি নিয়ে আলোকপাত করতে গেলে
অনেক স্মৃতি হৃদয়ে বাজতে থাকে ।
অনুরণিত হতে থাকে অতীতের দশটি বছর । এই বছরগুলোর মধ্যে ‘নয় বছর দুই মাস’সুন্দর পৃথিবীর সজীবতার সঙ্গে হাঁটি হাঁটি পা করে সাহিত্য একাডেমিও
সজীবতার ঔজ্জ্বল্যে বিকশিত হয়েছে । ২০২০ এর মার্চ মাসে যখন সমগ্র পৃথিবী স্থবির হয়ে গেল । স্তব্ধ ! সবকিছু থেমে গেল । পৃথিবীর মানুষের করুণ মৃত্যুতে সদা জাগ্রত নিউইয়র্ক শহরেও বয়ে গেছে মৃত্যুর মিছিল ! চতুর্দিকে স্বজন হারার আর্তনাদ,বেদনাঝরা শোক,আশঙ্কা,উৎকন্ঠায় সমগ্র পৃথিবী নিশ্চল, নিস্তব্ধ । মানুষের পাহাড় পরিমান কষ্টবোধের মধ্যে সাহিত্য একাডেমি’র সঙ্গে জড়িত সাহিত্যপ্রেমীগণ যেমন দু:চিন্তায় দিনাতিপাত করেছেন,তেমনই প্রতিমাসের শেষ শুক্রবারের প্রানবন্ত সাহিত্য আসরের ইমেজ-স্পন্দনও থেমে আছে । কিন্তু কারো সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়নি । দূরত্ব বজায় রেখে ভার্সুয়াললি দেখা হয়েছে এবং অব্যাহত রয়েছে (সাধ্যানুপাতে)সকলের সঙ্গে সকলের নিয়মিত
যোগাযোগ । ভালোবাসার আপন মানুষদের খোঁজ-খবর নেয়ার কমতি হয়নি ।
সাহিত্য একাডেমি’র নিয়মিত, পরিশীলিত ও সুনিয়ন্ত্রিত প্রতিটি আসরের পল-অনুপলে কত স্মৃতির মাখামাখি । স্নিগ্ধ স্মৃতির পরশে কতজনের মনের সাথে মিশে যাওয়া । সেই শুরু থেকে কতজনকে টেনে আনা ও সান্নিধ্যের মোহময়তায় আবিষ্ট থাকা । সাহিত্য একাডেমির অনুষ্ঠানকে শীলিত ,মার্জিত ও মননধর্মী করে তোলার চেষ্টা করা ।
মনে পড়ে , নভেম্বরের (২০১০) সেই একটি শুক্রবার ।একেবারে হাতেগোনা কয়েকজন কবি ও কবিতাপ্রেমীর মিলিত প্রয়াসে সাহিত্য একাডেমির যাত্রা শুরু । জ্যাকসন হাইটস-এর উপকন্ঠে ‘ইস্ট ওয়েস্ট কোসিং সেন্টার’এর কর্ণধার পরিচালক মোশাররফ হোসেন প্রতিটি আসরের সঙ্গে একনিষ্ঠ ও নিরলসভাবে লেগে থাকলেন । তেমনই প্রতিটি আসরকে সফল করে তুলবার নিরলস উদ্যমশীলতায় জড়িয়ে রইলেন বেশ কয়েকজন প্রাণবান মানুষ । কেউ সামনে,কেউ নেপথ্যে । এই সাহিত্য আসরে যারাই যোগ দেন,সৌজন্যতায়,মুগ্ধতায় আকৃষ্ট হয়ে যান ।
প্রথমে ক্ষুদ্রাকার হলেও সেই শুরুটার মধ্যে যে, আন্তরিকতা ছিল, তা এখনও অটুট রয়েছে । কোন বন্যা-বাদল, ঝড় বৃষ্টি , এমনকি কোন কঠিণ তুষারপাতের মধ্যেও সাহিত্য একাডেমি আসর অনুষ্ঠান বন্ধ থাকেনি । প্রতিটি অনুষ্ঠান চলেছে যথারীতি । এই কঠোর নিয়মতান্ত্রিকতার ফলে ‘সাহিত্য একাডেমি’ নিউইয়র্কের সাহিত্যাঙ্গনে পরিচিতি ও প্রশংসা কুড়িয়েছে ।

লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য নিষ্ঠাবোধ ও আন্তরিকতা থাকলে কোন শ্রমই বিফলে যায় না । সাহিত্য একাডেমির অনায়াস কর্ম-তৎপরতা তার জলন্ত
উদাহরণ । যেখানে কবি ও কবিতার সমন্বিত প্রয়াস, মননশীল শিল্প-সাহিত্যের কথা, আর বহুমুখে কবিতার উচ্চারণ । কবি- সাহিত্যিক, শিল্পী, কলা- কুশলী,সাংবাদিক ও সংস্কৃতিসেবীসহ সকল অংশগ্রহনকারীর আনন্দ-উচ্ছ্বাস ও অপরিমেয় সম্ভাবনার সমাহারে,প্রবীন ও নবীনের মেলবন্ধন ।
গ্যাটে বলেছেন : ” কবিতা মানুষের চিরায়ত সম্পদ । শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সর্বত্র সবখানে মানুষের হৃদয়ে তাকে স্থাপন করার শক্তি যোগায়” ।
আমার প্রত্যাশা—‘সাহিত্য একাডেমি’র কাজগুলো সেরকমই মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিবে ।’
বিগত দিনগুলোতে সাহিত্য একাডেমি
সাড়ম্বরপূর্ণ শততম আসর,বড় বড় অনুষ্ঠান,আলোচনা সভা,এবং সেমিনারসহ সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখেছে । নিউইয়র্ক শহরের জ্যাকসন হাইটস,ব্রঙ্কস এবং সুদূর আলবানিতেও সাহিত্য একাডেমির চমৎকার অনুষ্ঠান হয়েছে ।
বিশ্বব্যাপী ভয়ংকর করোনা ভাইরাসে মানুষের করুণ মৃত্যুতে কেউই ভালো নেই । এমনকি সাহিত্য আসরে নিয়মিত যোগদানকৃত এমন প্রিয় স্বজনদেরও আমরা
হারিয়েছি । সকলের পরম শান্তির জন্য মহিয়ানের নিকট অনন্ত প্রার্থনা । তাঁদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধান্জলি ।
সর্ব প্রকার জীর্ণতা ও স্থবিরতা কাটিয়ে পৃথিবী আবার জেগে উঠুক । সাহিত্য একাডেমিও হয়ে উঠুক প্রাণবন্ত ।
সবাইকে অফুরন্ত শুভেচ্ছা ।

দু:সহ যন্ত্রণার অবসানকল্পে এবং
সকলের সুস্থতা ও সুখময় জীবনের প্রত্যাশায় একাকীত্বের নি:সীম নির্জনে আমার একান্ত প্রার্থনা:-

‘বিশ্বজুড়ে নৃশংসতার আগুন
মানুষের লাশ দেখে দেখে
হতশ্বাসের প্রলয়রেখায় দাঁড়িয়ে,তবু বলি
হে পৃথিবী!
তুমি বাঁশরী হও…
বিমুগ্ধ লাবণ্যের নীল আকরে সতেজ হও
নিস্তব্ধতার অগুন্ঠন খুলে
নিউইয়র্ক, তুমি ঝলসে ওঠো…
তোমার সদর জমিনে ঝংকৃত হোক তারার নূপুর ।
দু:সহ যন্ত্রণার আঁধার চিড়ে
বিশ্ব তুমি আলোকিত হও…
————————————
দ্রষ্টব্য: আমার ফোনে অনুষ্ঠানের ছবি কখনো তোলা হয়নি । যদিও সবার ছবি হৃদয়ের স্মৃতিপটে ।
এই লেখার সব ছবি প্রিয়জনদের পোস্ট থেকে নেয়া । তাদের প্রতি
আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ।