সিলেট হবিগঞ্জ এবং হবিগঞ্জ- মৌলভীবাজার-সিলেট রুটে বিরতিহীন বাসের চরম নৈঃরাজ্য
জনদুর্ভোগ লাঘবে নেই কার্যকর পদক্ষেপ
খুটির জোর কোথায় ?
:: সাইফুর রহমান কায়েস ::
হবিগঞ্জ সিলেট বাস মালিক সমিতির স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের কবলে পড়েছে সরকারের বিআটিসির যাত্রীসেবার উদ্যোগ। এতদাঞ্চলের দীর্ঘকালের জনদাবীর প্রেক্ষিতে নতুন বছরের শুভেচ্ছা হিসাবে ১লা জানুয়ারী সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন বারোটি বাস। ছয়টি বাস হবিগঞ্জ- আউশকান্দি- সিলেট এবং ছয়টি বাস হবিগঞ্জ- শ্রীমঙ্গল – মৌলভীবাজার- সিলেট রুটে চলাচল শুরু করেছে। কিন্তু চালুর দিন থেকেই পরিবহন রুটে বিরতিহীনের শ্রমিক মালিকদের বাধা,হুমকি,ধমকি এবং চরম নৈঃরাজ্যের কবলে পড়েছে। তিনদিন তারা ধর্মঘটের নামে সারা সিলেট বিভাগকে অচল করে রাখেন। জনসাধারণকে জিম্মি করে সরকারের পরিবহন সেবার উদ্যোগকে নস্যাৎ করার এক সূক্ষ্মতম গভীর ষড়যন্ত্রের বীজ বপন করতে থাকেন। তারা সম্মানিত যাত্রীসাধারণকে জিম্মি করার উল্লাসে মেতে উঠেন। তাদের এই অপচেষ্টা যে শুধু যাত্রীদের জিম্মি করা তাই নয়, একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র্বে জনকল্যাণমুখী সরকারকেও জিম্মি করার শামিল। বিআরটিসি বাস থেকে নেমে যেতে বাধ্য করা, বাসের কাউন্টারে হামলা করে কর্মচারী ও কর্মকর্তা,শ্রমিক,চালকদের শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করা,গাড়ি ভাঙচুর, পথিমধ্যে দুটি বিরতিহীন বাসের মাধ্যমে চাপা দিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এই চাপা তো বিআরটিসি বাসকে চাপা দেয়া নয়, এটি সতেরো কোটি মানুষকে চাপা দেয়ার শামিল। সরকারের নীতি ও আদর্শকে চাপা দেয়ার শামিল। তাদের ঔদ্ধত্যের পেছনের রহস্য কোথায়? অনুসন্ধানে জানা যায় বাস মালিক সমিতির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন বিএনপি নেতা শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন শঙখ শুভ রায়। এই রায় বাহাদুর আবার হবিগঞ্জের পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। যিনি সরকারের নীতি ও আদর্শকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখান তিনি কিভাবে আওয়ামীলীগের মনোনয়নের বিনিময়ে জনপ্রতিনিধি হবার স্বপ্নে বিভোর হলেন? এইসব লুটেরা, মাস্তান আর দুর্বৃত্ত কখনো জনগণের নেতা হতে পারেন না। দেশ আজ কি তবে নষ্টদের অধিকারে চলে গেছে? বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় দুর্বত্তায়ন কাম্য নয়।
এদিকে প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের সাজ সাজ ভাব চোখে পড়লেও কার্যত তারা নতজানু হয়ে পড়েছেন বলেই অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে। কেনোনা, সরকারী পরিবহন সেবার প্রকল্পের আওতায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দ্বারা পরিচালিত বাসগুলোর সেবার পরিসীমা না বাড়িয়ে সংকুচিত করে এনে বারোটি বাসের স্থলে ছয়টি করায় বিষয়টি আরো সুষ্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কারণ পরিবহন রুটে নৈঃরাজ্যের হোতাদের কাউকেই এখন পর্যন্ত গ্রেফতারের কোনো খবর আমাদের গোচরে আসে নি। উপরন্তু পরিবহন রুটের মাস্তানদের বাড় বাড়ন্ত জনপ্রশাসকেই শুধু চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে তাই নয়, সরকারকেও মেরুদণ্ডহীন হিসাবে দেশবাসীর সামনে হেয়প্রতিপন্ন করছে।
জনগণকে জিম্মি করে চলে আসা বিরতিহীন বাসগুলোর স্বেচ্ছাচারিতাএখন আরো চরমে উঠেছে। বিরতিহীন বাসগুলোর যাত্রীসেবা বলতে কিছুই আর অবশিষ্ট নাই। অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনে নেই কোনো বিধিনিষেধ। ফলে এরা তাদের বাসগুলোকে একেকটি খোয়াড়ে পরিণত করেছেন। তারা তাদের যাত্রীসেবার মান না বাড়িয়ে সরকারের পরিবহন সেবাকে বাধাগ্রস্ত করার মাধ্যমে দেশকে তাদের জমিদারী এবং জনগণকে তাদের প্রজারূপে গণ্য করার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার আড়ালে একটি স্বৈরতান্ত্রিক সামন্তবাদী যুগের সূচনা করেছেন বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। তাদের এই হীনচেষ্টাকে রুখে দিতে প্রয়োজন গণ আন্দোলন এবং রাজনৈতিক এবং সামাজিক উদ্যোগ। যদিও এখন পর্যন্ত সামাজিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কোন আন্তরিক উদ্যোগ চোখে পড়ে নি।
আমরা আশা করবো যাত্রীসাধারণকে বিরতিহীন নামক পরিবহন রুটের দানব এবং মাস্তানদের কবল থেকে মুক্ত করতে সরকার আরো বেশি আন্তরিকতা নিয়ে যাত্রীসেবার আওতাকে সীমিতকরণ নয়, বরং বাড়াতেই কার্যকর,কঠোর এবং অনঢ় অবস্থান গ্রহণ করবেন।
লেখক: প্রধান সম্পাদক, শব্দকথা টোয়েন্টিফোর ডটকম।