কানাইঘাট দর্জিমাটির আলাউর রহমানের মৃত্যু, সুষ্ট বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি
মখলিছুর রহমান :
আইয়ামে জাহিলিয়াতের মতো এখনও সামান্য হাওরের খাস জমি নিয়ে প্রাণ দিতে হচ্ছে নিরাপরাধ মানুষকে। বিধবা হচ্ছে নারী। এতিম হচ্ছে শিশু। সর্বোপরি একটি পরিবার হচ্ছে নিঃস্ব-দিশেহারা। এলাকা ভিত্তিক এই মারামারিতে যে মৃত্যু বরণ করেছেন তার পরিবারের এখন কে দায়িত্ব নিবে? ফৌদ এলাকার মানুষের দায়িত্ব হবে এই পরিবারকে ক্ষতিপুরণ দেওয়া। জোরালোভাবে বিচারদাবি করা। এই নেক্ষারজনক হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমুলক বিচার নিশ্চিত করা।
গত ২৮ জানুয়ারী কানাইঘাট উপজেলার ঝিংগাবাড়ী ইউপির ফৌদ ৮ মৌজার সাথে পাশ্ববর্তী জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর এলাকার কিছু লোক জনের সাথে বড় হাওরের পাও দওয়া কুড়িনিয়ে উভয় পক্ষের মারা–মারি সংঘটিত হয়। এতে উভয় পক্ষের লোক জন আহত হন। গুরুতরআহত অবস্থায় ফৌদ ৮ মৌজার পক্ষের দর্জিমাটি গ্রামের সহজ সরল আলাউর রহমানকে গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর, মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে ৬ এপ্রিল ২০২১ (মঙ্গলবার) মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। এতে এলাকায় তীব্র উত্তেজনা এবং ক্ষোভ বিরাজ করছে।
নিহত আলাউর রহমাননের পিতার নাম আব্দুর রব (বতু)। নিহত যুবকটির বয়স আনুমানিক ৩৫ বছর।
জানা যায়, এ ঘটনায় জড়িত রয়েছেন হরিপুরের সাথে কানাইঘাট উপজেলার ফাগু গ্রামের কিছু লোকজন। ফৌদ ৮ মৌজার দাবী ফাগু গ্রামের কতিপয় লোকজন ভাড়াটিয়া হরিপুরের কিছু উশৃংখল লোক দিয়ে তাদের জমি দখল করার চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায় যে, পাও দওয়া খুড়িটির মালিকানা ছিল ফৌদ এলাকার। কিন্তু ফাগু গ্রামের কিছু লোক হটাৎ মালিকানা দাবি করে এই জলাশয় হরিপুরের লোকের কাছে লিজ দিয়েদেয়। এর প্রেক্ষিতে মামলা হয়। মামলার রায় হয় ফৌধের পক্ষে। এমতাবস্তায় ফাগুর লোকজন আপিল করলে, সালিশে নির্ধারিত হয় যে, পূর্ণাঙ্গ রায় না হওয়া পর্যন্ত এই কুড়িটিতে কোন পক্ষ মাছ ধরতে পারবেন না। ঝিঙ্গাবাড়ি ইউনিয়ন ও হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এই কুড়িতে একজন পাহারাদার নিযুক্ত করেন। এমতাবস্তায় হটাৎ ফাগু গ্রামের লোকজন হরিপুরের কিছু কুচক্রী মহল নিয়ে রাতের অন্ধকারে মাছ ধরে নিয়ে যান। পরদিন নিরস্র ফৌদবাসি ঘটনাস্থল দেখতে গেলে উৎপেতে থাকা ফাগু ও হরিপুরের লোকজন প্রতিপক্ষের লোকজনের উপর এলোপাতাড়ি হামলা চালায়। এতে অনেক লোক আহত হন। এই হামলায় আলাউর রহমান মারাত্বকভাবে আহত হন এবং টানা তিন মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ৪ই এপ্রিল সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে মৃত্যুবরণ করেন।
অকালে ঝরে যাওয়া আলাউর রহমানের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। মাত্র তিন বছরের একটি অবুঝ মেয়ে আজ এতিম। অল্পবয়সী স্ত্রী আজ বিধবা। গর্বধারিনী মা হলেন আজ সন্তানহারা। দেশে বিদেশের সব মানুষ এই হত্যাকান্ডের সুষ্ট বিচার দাবি করেছেন। মিডিয়াতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ট বিচারের দাবি করেছেন দর্জিমাটি গ্রামের বাসিন্দা সাইদুর রহমান মেম্বার, সমাজসেবী আব্দুল করিম, মতসীন আলী, আব্দুল্লাহ আল মামুন, সমাজকর্মী, রাজনীতিবিদ ও চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সায়েম আহমদ সহ অনেকেই।
স্থানীয় সুত্র জানায়, ২৮ জানুয়ারীর মারামারির পর কানাইঘাট থানায় উভয় পক্ষ মামলা করেছেন। ইতিমধ্যে আলাউর রহমানের পরিবার ও ফৌদবাসি কানাইঘাট থানায় আগের মামলাকে হত্যা মামলায় রূপান্তরের জন্য সব ধরণের ব্যবস্হা নিয়েছেন। পুলিশ নিহত আলাউর রহমানের বাড়ি পরিদর্শন করেছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।