প্রফেসর ড. হারুন রশীদ-এর কবিতা “বাতাসে করোনার ঢেউ”
বাতাসে করোনার ঢেউ
প্রফেসর ড. হারুন রশীদ
বাতাসে করোনার ঢেউ
তরঙ্গায়িত হয় দ্রুত লয়ে,
ড্রপলেটগুলো তাতে ভেসে চলে
আপন গতিতে ক্ষিপ্রতার সাথে,
উদ্ভূতুরে আচরণ তাদের
বহুরূপী তারা –
ক্ষণে ক্ষণে পোশাক বদলায়
রপান্তরের নিয়মে মিউটেশন আকারে।
বাতাসে করোনার ঢেউ
শন শন শব্দে ঝড় তোলে,
আপডেট জানালেন-
গভীর গবেষণায় নিমগ্ন
উদ্ভ্রান্ত-দিকভ্রান্ত ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা,
কিংকর্তব্যবিমূঢ় বিশ্ব স্বাস্থ্যব্যবস্থাপনা;
অনুমান নির্ভর প্রকল্প তৈরিতে
গলদঘর্ম বিশ্ববিজ্ঞানীরা-
গানিতিক হিসেব মিলছে না,
সুনিশ্চিত সুনির্দিষ্ট ফলাফল নেই
জীববিজ্ঞান অথবা ভাইরোলোজিতে,
কোনো পরীক্ষা-নীরিক্ষা-পর্যবেক্ষণে।
বাতাসে করোনার ঢেউ
জানা-অজানা বহুরূপী ভেরিয়াণ্ট-
কখনও চৈনিক পোশাকে
ইতালীয় আবরণে,
কখনও যুক্তরাজ্যের আচ্ছাদনে
দক্ষিণ আফ্রিকার খোলসে,
কখনও বা ভারতীয় আচার-অনুষ্ঠানে
অন্ধত্ব-গোড়ামীর আধিক্যে,
অতঃপর যুক্তরাষ্ট্রীয় মোড়লীপনায়
বৈশ্বিক চেহারায় আবির্ভূত।
বাতাসে করোনার ঢেউ
ভেঙে ভেঙে ছড়িয়ে পড়ে-
ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ড্রপলেট আকারে
বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে,
অতি উৎসাহী অতি উৎফুল্ল
বাঙালি জনগোষ্ঠীর স্বভাবজাত-
স্বতঃস্ফূর্ত আবেগে
আচারে আচরণে,
অনিয়মের গলি-ঘুপচির পথ বেয়ে
দেহ-মন-মস্তিষ্কের পরতে পরতে।
বাতাসে করোনার ঢেউ
রক্তমাংসে কোভিডের আনাগোনা,
দূর থেকে দার্শনিকের দৃষ্টিতে
যুক্তির আলো ফেলে বুঝতে চাই,
কিন্তু সব দার্শনিক বোঝাপড়াই
যেন খেই হারিয়ে যায়,
এলোমেলো ভেসে বেড়ায়-
করোনা ঢেউয়ের উজান স্রোতে।
বার্গসঁ-র সজ্ঞা অথবা হেগেলীয় প্রজ্ঞা
কান্টের সংবেদনশক্তি আর বোধশক্তি,
পিথাগোরীয় সংখ্যাতত্ত্ব কিংবা
এরিস্টটলীয় অধিবিদ্যা,
ব্রিটিশ অভিজ্ঞতাবাদ কিংবা
‘স্বর্ণযুগ’ এর তত্ত্ব বলে খ্যাত
মার্কিন প্রয়োগবাদ (পুঁজিবাদের দর্শন)-
এসব কোনো তত্ত্বেই
পাঠোদ্ধার মিলছে না
করোনার হাজারো মিউটেশন আচরণের।
অবশেষে করোনার বিরুদ্ধ স্রোতে
ঢেউগুলো ঠেলে ঠেলে
পুনরায় ফিরে আসি
প্রকৃতিবাদের হাত ধরে,
জীববিজ্ঞানের পথ পরিক্রমায়
বিবর্তনের দার্শনিক ভাবনায়-
অস্তিত্বের সংগ্রামে
টিকে থাকার লড়াইয়ে।
লেখক: অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, দর্শন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।