তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্ব আসরে ডিজিটাল বাংলাদেশ
আদর্শবার্তা ডেস্ক :
প্রযুক্তির মেলবন্ধনে ‘আইসিটি দ্য গ্রেট ইকুলাইজার’ প্রতিপাদ্যে ১১-১৪ নভম্বের দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অলিম্পিক খ্যাত আর্ন্তজাতিক সম্মেলন ‘ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অন ইনফরমেশন টেকনোলজি (ডব্লিউসিআইটি)‘র ২৫তম আসর। করোনার সংক্রমণ মাথায় রেখে হাইব্রিড (সশরীর ও অনলাইনে) মডেলে অনুষ্ঠিত হয় এবারের আসর। চার দিনব্যাপী এ আয়োজনে বিশ্বের ৭৫টিরও বেশি দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, উদ্যোক্তা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধি এবং দর্শক অংশগ্রহণ করেন। ‘ডব্লিউসিআইটি ২০২১’ সম্মেলনের সমান্তরালে একই সময়কালে অনুষ্ঠিত হবে এশিয়া এবং ওশেনিয়া অঞ্চলের আন্তর্জাতিক সম্মেলন অ্যাসোসিও ‘ডিজিটাল সামিট ২০২১’।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মিলনমেলা
চার দিনব্যাপী এ বিশ্ব সম্মেলনের বিভিন্ন সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন সারাবিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিভিন্ন সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ। মিলনমেলায় ৭৫টিরও বেশি দেশ থেকে যোগ দেন শতাধিক তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ।তাদের মধ্যে ছিলেন আধুনিক ইন্টারনেটের অন্যতম জনক মি. ভিন্ট সার্ফ , আধুনিক ইন্টারনেটের অন্যতম জননী ড. রাদিয়া পারম্যান ও ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের উদ্ভাবক স্যার টিমোথি বারনার্স লি, উইটসা মহাসচিব জেমস এইচ পয়জান্ট, ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের (সেন্টার ফর দ্য ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশন, চায়না) উপ প্রধান ডেনিয়েল কেরিমি, উই রোবটিক্সের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ড. পেট্রিক মেয়ার, চীন ভিত্তিক আলীবাবার মূল কোম্পানি অ্যান্ট গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (আলিপে ও গ্লোবাল পেমেন্ট পার্টনারশিপ) গৌমিং চেং, ইন্টেল করপোরেশনের চেয়ারম্যান ওমর এস ইশরাক প্রমুখ।
এছাড়া দেশীয় বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এশিয়ার নোবেল হিসেবে খ্যাত ম্যাগসেসে পুরস্কার বিজয়ী বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরি, বাংলাদেশে চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অণুজীববিজ্ঞানী ও পরিচালক সেঁজুতি সাহা এ আয়োজনকে সমৃদ্ধ করেন।
ডিজিটাল বাংলাদেশ উপস্থাপনা
বৈশ্বিক এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তথ্যপ্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব বিষয়েই ছিল বিভিন্ন সেমিনার ও সেশন। চারদিনের এ সম্মেলনে ডিজিটাল বাংলাদেশের সাফল্য ও অর্জন তুলে ধরার পাশাপাশি চতুর্থ শিল্প বিল্পবের কথা মাথায় রেখে আইওটি, বিগডেটা, মেশিন লার্নিং, রোবটিক্সের মতো আধুনিক ও স্মার্ট প্রযুক্তির সর্বশেষ সংযোজন নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক এ আয়োজনে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশের অগ্রগতি তুলে ধরতে সম্মেলনের প্রথম দিন ছিল ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ নাইট’। এ আয়োজনে বাংলাদেশের বিগত ১২ বছরের তথ্য-প্রযুক্তিতে অগ্রগতি উপস্থাপন করা হয়। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে স্বাধীন সর্বোভৌম রাষ্ট্র ও তথ্যপ্রযুক্তিতে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর গৃহিত উদ্যেগসমূহ উপস্থাপন করা হং। এ দিনে ‘অ্যাসোসিও অ্যাওয়ার্ড নাইট’ অনুষ্ঠানে এশিয়া-ওশেনিয়া অঞ্চলে তথ্যপ্রযুক্তিতে বিশেষ অবদানের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। তৃতীয় দিন স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অগ্রগতি, অর্জন-গৌরবের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। এ দিন ‘উইটসা আইসিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড নাইট’ অনুষ্ঠানে সারাবিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তিতে বিশেষ অবদানের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। চতুর্থ দিন ডব্লিউসিআইটির রজত জয়ন্তী উদযাপন ও সমাপনী আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার, বিপিও এবং আউটসোর্সিং নিয়েও ছিল একাধিক সেমিনার। বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স। এ আয়োজনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
পুরস্কার
সম্মেলনে উইটসা এবং অ্যাসোসিওর পক্ষ থেকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত কর হয়। এতে ‘এমিনেন্ট পার্সনস অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কারে ভূষিত হন বাংলাদেশের প্রধান্ত্রী শেখ হাসিনা। এরআগে প্রথমবারের মতো ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলা এ পুরস্কারে ভূষিত হন। এ ছাড়া এ পুরস্কার পেয়েছেন ইন্টারনেটের অন্যতম জনক ভিন্ট সার্ফ।
এ ছাড়া ভিন্ন তিনটি ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ আরও তিনটি পুরস্কার অর্জন করেছে। এরমধ্যে ‘সাসটেইনেবল গ্রোথ/সার্কুলার ইকোনমি’ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ, ‘ইনোভেশন ই-হেলথ সলিউশন’ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে জাতীয় স্বাস্থ্য বাতায়ন-১৬২৬৩ এবং ‘ই-এডুকেশন অ্যান্ড লার্নিং’ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ)।মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, মিয়ানমার, হংকং, নেপাল, তাইওয়ান, গ্রিস, রাশিয়া প্রভৃতি দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোগ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত হয়েছে।
এদিকে ‘অ্যাসোসিও লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০২১’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। এছাড়া বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে তথ্যপ্রযুক্তিতে সাফল্য অর্জন করায় বিভিন্ন দেশের সরকারি-বেসরকারি সংস্থাও উদ্যোগকে পুরস্কৃত করে সংস্থাটি। এ বছর বাংলাদেশ থেকে কম্পিউটার সার্ভিসেস লিমিটেড, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি), ডেভেলপমেন্ট অব ন্যাশনাল আইসিটি ইনফো নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট (ইনফো-সরকার), বইঘর এবং জাতীয় স্বাস্থ্য বাতায়ন বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে অ্যাসোসিও পুরস্কার অর্জন করেছে।
এ আয়োজনের বিভিন্ন পর্বে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, উইটসা চেয়ারম্যান ইয়ানিস সিরোস, উইটসা মহাসচিব জেমস এইচ পয়সান্ট, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সভাপতি শাহিদ-উল-মুনীর, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুল মান্নান প্রমুখ।
আয়োজন সম্পর্কে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘এ বিশ্ব সম্মেলন মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের তথ্যপ্রযুক্তির সংশ্লিষ্টদের ও বিশেষজ্ঞদের সাথে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ফলে তথ্যপ্রযুক্তির আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধি, উন্নয়ন ও বিকাশে অবদান রাখবে। তিনি তথ্যপ্রযুক্তি খাতের আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গুরুত্বারোপ করেন।’
এর আগে এ আয়োজনের পার্টনার হিসেবে আছে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর, কন্ট্রোলার অব সার্টিফাইং অথরিটিজ (সিসিএ), ডিজিটাল সিকিউিরিটি এজেন্সি, এটুআই, এলআইসিটি, বেসিস, বাক্কো, ই-ক্যাব এবং আইএসপিএবি, বিআইজেএফ ও টিএমজিবি। আন্তর্জাতিক এ সম্মেলনের প্লাটিনাম স্পন্সর ওয়ালটন, গোল্ড স্পন্সর ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ব্রোঞ্জ স্পন্সর হুয়াওয়ে, জনতা ব্যাংক, মিনিস্টার টিভি এবং থাকরাল ইনফরমেশন সিস্টেমস। এছাড়া ইন্টারনেট পার্টনার আমরা টেকনোলজিস লিমিটেড।