প্রচ্ছদ

দাওয়াতুল ইসলাম ইউকে‘র প্রতিষ্ঠাতা আমীর আব্দুস সালাম আর নেই

  |  ১৬:০৭, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২২
www.adarshabarta.com
Photo: Sheikh AKM Abdus Salam

স্পেশাল রিপোর্টার :

বৃটেনের প্রচীনতম ইসলামী কমিউনিটি সংগঠন দাওয়াতুল ইসলাম ইউকে এণ্ড আয়ার‘র প্রতিষ্ঠাতা আমীর, বহু মসজিদ-মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও বৃটেনে ইসলামী আন্দোলনের বীর সেনানী এ কে এম আব্দুস সালাম আর নেই। তিনি শুক্রবার লন্ডনস্থ নিজ বাসভবনে এশার নামায আদায় করে ঘুমিয়ে পড়েন এবং ঘুমের মধ্যেই ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তিনি এক ছেলে, দুই মেয়ে, বহু নাতি-নাতনী এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। এ কে এম আব্দুস সালাম ওসমানীনগরের মোক্তারপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দেশে গ্র্যাজুয়েশন করার পর পরই ষাটের দশকে তিনি বৃটেনে পাড়ি জমান। গত কয়েক বছর যাবৎ বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি বাইরে বের হতেন না। বাড়িতে বসে লেখাপড়া ও ইবাদত-বন্দেগী করে সময় কাটাতেন। বৃটেনে মুসলমানদের নানা ঘটনার তিনি প্রত্যক্ষ সাক্ষী। ইউরোপের সর্ববৃহৎ ইস্ট লণ্ডন মসজিদকে আধুনিক পর্যায়ে উন্নীত করার ব্যাপারে তাঁর রয়েছে সীমাহীন ত্যাগ। তাঁর পুরো নাম আবুল খিজির মুহাম্মাদ আব্দুস সালাম, তবে এ কে এম আব্দুস সালাম নামেই সবাই চিনতেন। গ্রেট বৃটেনে যারা ইসলাম প্রচারের কাজকে বেগবান করতে শক্ত হাতে কাজ করেছেন, তিনি ছিলেন তাদের অগ্রদূত। তিনি যুবক বয়সেই তৈরি করে ছিলেন বিশ্বের বড় বড় স্কলারগণের সাথে সখ্যতা। বিশেষ করে সাঊদির ইমাম আব্দুল্লাহ ইবন বায, ডঃ আব্দুল মুহসিন আত তুরকী, সাবেক পেট্রলিয়াম মন্ত্রী ডঃ আব্দুহু ইয়ামেনী সহ ডঃ আহমাদ তুতুঞ্জি, মুহাম্মাদ কুতুব, ডঃ কামাল হিলবাওয়ী এবং পাকভারতের মাওলানা মাওদূদী ও শায়খ আবুল হাসান নাদাওয়ী সাথে তাঁর ছিলো সখ্যতা। তিউনিসিয়ার রাশেদ গানুশি তাকে বড় ভাই বলে ডাকতেন। সুদানের হাসান তুরাবি, ফিলাস্তিনের প্রফেসর ডঃ আযযাম তামিমি, পাকিস্তানের খুররম মূরাদ ও মালয়েশিয়ার আনোয়ার ইবরাহীমের সাথে ছিলো তাঁর সখ্যতী। মাওলানা মওদুদী যখন বৃটেনে ইসলামি আন্দোলনের বীজ বপন করতে চাইলেন এবং ইউকে ইসলামি মিশনের গোড়া পত্তন করেন, সেই প্রথম দিন থেকে আব্দুস সালাম ছিলেন নেতৃস্থানীয়। বৃটেনে শত শত মসজিদ মাদ্রাসা এবং একমাত্র ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় মার্কফিল্ড ইন্সটিটিউট ফর হাইয়ার এডুকেশান প্রতিষ্ঠার পেছনে আব্দুস সালামের রয়েছে বড় অবদান। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ইউকে ইসলামিক মিশন থেকে বাংলাদেশিদের আলাদা করে দাওয়াতুল ইসলাম ইউকে এন্ড আয়ার নামে নতুন সংগঠনের জন্ম হয়। সেখানে তিনি অনেক বার আমীর হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। এই দাওয়াতুল ইসলামের হাতেই প্রতিষ্ঠিত হয় ইউরোপের সেরা মসজিদ ও প্রতিষ্ঠান ইস্ট লন্ডন মসজিদ। তাঁর হাত ধরেই প্রতিষ্ঠিত হয় ইউকের সর্ব প্রথম ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান “ইসলামিক কলেজ ও ইউকের প্রথম সারির চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান “মুসলিম এইড”। তিনি খুব রাসভারী লোক ছিলেন। পড়াশুনা করতেন। উর্দুতে তিনি খুব ভালো ছিলেন ফলে উর্দু সাহিত্যের ভান্ডার তার আয়ত্বে ছিলো। ইংরেজিতে ছিলেন পারদর্শি, একাউন্টিং এ তিনি ছিলেন খুব ভালো বিশেষজ্ঞ। জীবদ্দশায় তার স্ত্রী ইন্তেকাল করেন। তিনি তার নিজের বাড়ি ছেলে সন্তানদের দিয়ে সরকারি বাড়িতে থাকতেন। তার জামাতা হলেন ইউকের প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার মাওলানা আব্দুল মালেক। ছেলে মেয়েদের তিনি ইসলামের উপরেই লালন পালন করেছেন।
জালালাবাদ সম্পাদকের শোক : বৃটেনের প্রচীনতম ইসলামী কমিউনিটি সংগঠন দাওয়াতুল ইসলাম ইউকে এণ্ড আয়ার‘র প্রতিষ্ঠাতা আমীর এ কে এম আব্দুস সালাম এর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন দৈনিক জালালাবাদ সম্পাদক ও সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুকতাবিস উন নূর। এক শোক বার্তায় তিনি বলেন, গ্রেট বৃটেনে ইসলামের ঝান্ডা যে ক’জন ব্যাক্তিত্ব উড্ডীন করেছেন, আব্দুস সালাম ছিলেন তাদের মাঝে অগ্রগণ্য। পাশ্চাত্যের প্রতিকুল পরিবেশেও তিনি জীবনভর ইসলামের জয়গান গেয়েছেন। তাঁর মৃত্যু নি:সন্দেহে ইসলামী আন্দোলনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।