প্রচ্ছদ

নবীগঞ্জ উপজেলা সমবায় অফিসারের বিরুদ্ধে যত অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ

  |  ১৬:১২, মে ২৫, ২০২৩
www.adarshabarta.com

বিশেষ সংবাদদাতা :

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলা সমবায় অফিসার ইসমাইল তালুকদার এর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগে ফুঁসে উঠেছেন স্থানীয় সমবায়ীরা। অফিসার ইসমাইল তালুকদার বিভিন্ন তদন্ত ও অডিটের নামে প্রকাশ্যে যেভাবে ঘুষ চান। মনে হয় সরকারি এ সমবায় অফিসটা যেন ঘুষের দোকানে পরিনত হয়েছে! তিনি বিগত ১৭/০৪/২০২২ ইংরেজী তারিখে নবীগঞ্জ উপজেলা সমবায় অফিসার হিসেবে যোগদান করার পর হতেই বেপরোয়া কথা বার্তা আর অশালীন আচরনে উপজেলার সকল সমবায়ীদের মনে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা বিরাজ করছে।

সমবায় আইনে প্রতিটি সমিতি সচ্ছতার নিরিখে প্রতিবছর অডিট ও এজিএম করাতে বাধ্য। আর সেই সুযোগ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। পূর্বে অডিট করানোর খরচ দেয়া হতো সমিতি অনুসারে ১/৩ হাজার টাকা। তিনি আসার পরে তাহা বাড়িয়ে ১০/৩০ হাজার টাকা হাঁকিয়ে বসেন। এতে কিছু সংখ্যক নিরুপায় সমবায়ীগণ একেবারেই নিঃস্ব সর্বস্বান্ত হওয়া ছাড়া কোনো পথ বাকী নেই।

জানা যায়, এড়া-বরাক খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডকে অডিট খরছ নামের উৎকোচ ২৫ হাজার টাকা দাবি করলে ১৫ হাজার দিলেও মনজয় করতে না পারায় শোনতে হয়েছে অশালীন কথাবার্তা। এছাড়াও যে সকল সমবায়ীরা সমিতির মেয়াদ কাল উত্তীর্ণ হবার পূর্বে যথা নিয়মে নিবার্চন করতে চাইলে। তাহা না করে, উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে কালক্ষেপণ করে সময় অতিবাহিত করাই উনার রেওয়াজ। টাকার মোহে এতটাই অন্ধ যে উপজেলার প্রতিটি সমিতিতে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার লোভন দেখিয়ে গ্রুপের সৃষ্টি করে উভয় পক্ষ হতে টাকা লোটার ধান্ধায় মেতে উঠেন। ‘সমিতির ভালো মন্দের ভাবনার বিষয় বলতে তিনি তা জানেন না।’ কথাটি একজন ভুক্তভোগী সমবায়ীর।

এমন অফিসার আমার জীবনে তো নয়ই, বাপ দাদার বংশে পেয়েছেন কী না সন্দেহ রয়েছে। এর বাস্তব প্রমান বহন করে এড়া-বরাক খাল পাবসস লিঃ গ্রুপিং সৃষ্টি করে সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে শ্রমিকের টাকা শ্রমিককে না দিয়ে আত্মসাত করে খাওয়ার অভিযোগ এনে বিচারের দাবি তুলে মাননীয় হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক মহোদয় বরাবরে ১৪/০৮/২০২২ ইংরেজি তারিখে আবেদন দায়ের করান। সমিতি তাঁর কুটকৌশল বুঝতে পেরে, ইসমাইল তালুকদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে জেলা সমবায় অফিসার হবিগঞ্জ বরাবরে ১২/০৩/২০২৩ ইংরেজী বিচার ও দ্রুত অপসারণ চেয়ে আবেদন করেন। আর বিষয়টি জানার পর তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে, ইদানীং দীর্ঘ অপেক্ষার পর নিজের ইচ্ছে মতো টাকার বিনিময়ে রিপোর্ট তৈরী করে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদনের হদিস খোঁজে পাননি বলে জানান সমিতির সাবেক সভাপতি। অথচ স্থানীয় এলজিইডির মাধ্যমে এড়া-বরাক খাল এর কাজ করা হয়েছে। শ্রমিক যে পরিমাণ কাজ করেছে। আর সেই কাজের পূর্ণ মেজারমেণ্ট করে এলসিএসের একাউন্টে কাজের পরিমাণে টাকা বরাদ্দ করলে সেই টাকা একাউন্ট হতে এলসিএস সভাপতি ও সম্পাদকের স্বাক্ষরে তুলে শ্রমিকদের মাঝে বিতরণ করে দেয়া হয়েছে। ফলে আজ পর্যন্ত এমন কোনো শ্রমিক কাজ করে টাকা পায়নি বলে কোনো অভিযোগ করেনি। মার চেয়ে মাসির দরদ দেখাচ্ছেন। গ্রামীণ একটি প্রবাদ মনে পরলো “মার পাটে না মইর পাটে, দাই বটির ছেরাত্তি উঠে”। তা একমাত্র ঐ অফিসারের সাজানো নাটক মাত্র।

শুধু তাই নয়, যথা নিয়মে সমিতির মেয়াদ কালের মধ্যে নির্বাচন করে দেয়ার জন্য বিশেষ সাধারণ সভার সিদ্ধান্তের আলোকে ৩ সদস্যের নির্বাচন কমিটি ও খসড়া ভোটার তালিকাসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস রেজিস্টার্ড ডাকযোগে উপজেলা সমবায় অফিসার নবীগঞ্জ হবিগঞ্জ বরাবরে প্রেরণ করলে তিনি পত্রটি গ্রহণ না করে সমিতির কার্য্যালয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেন। অনুরুপ ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের ২২/১০/২০২২ ইংরেজি অনুষ্ঠিত সাধারণ বার্ষিক সভার কার্য্য বিবরণীসহ ডকুমেন্টস প্রেরন করা হলেও সেই পত্রটিও গ্রহণ না করে সমিতির কার্য্যালয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেন। এই দু’টি ডকুমেন্টস সমিতির হেফাজতে রয়েছে। এই হলো তাঁর কার্যকলাপের নমুনা।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, সমিতির সমবায়ী অল্প বয়সি সুন্দরী মেয়েদের ডেকে নিয়ে সুরতহাল জানার পর অবস্থার নিরিখে লোভনীয় আলাপচারিতায় ফাঁদে ফেলে উদ্দেশ্য হাসিলের স্বভাবটাও আলোচিত হচ্ছে। হবিগঞ্জ জেলা সদরে নিজ বাড়ি ও বাসায় বউ বাচ্চা থাকার পরও পরিবারের আড়ালে নবীগঞ্জ উপজেলা শহরে বাসা ভাড়া করেন এর কারণ কী? মেয়েদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন জাতের ভাতা, অনুদান প্রদান ও নানান বিষয়ে ট্রেনিং করায়ে অর্থ উপার্জন সহ চাকরি দেবার মতো লোভনীয় ফাঁদে ফেলে লালসা চরিতার্থের উস্তাদিতেও কোনো অংশে কম নয়। জানা যায়, উনি দু’এক জন মেয়ের সমালোচনা করতে গিয়ে এক পর্যায়ে বলে ফেলেন ওদের গায়ে গন্ধ করে। তাও বেশ ক’জন সমবায়ীদের সামনে। এধরণের কথা বলার সাহস কে করতে পারে? কাহিনি কারোর বুঝতে বাকী আছে বলে মনে হয় না।

এতেই উনার শেষ নয়। এ জাতীয় আকাম কুকাম আপন জেলার লাখাই উপজেলায় কর্মকালিন থাকা অবস্থায় করে আসছেন বলেও জনসাধারণের মাঝে কানাঘুষা চলছে। এছাড়াও যাদের কপালে নবম ও দশম শ্রেণীতে লেখা পড়ার সুযোগ হয়নি। তাদের এস এস সি / এইচ এস সি সার্টিফিকেট বোর্ড থেকে এনে দেবার মতো লোভনীয় ফাঁদে ফেলার প্রমাণ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কলেজ পড়োয়া সমবায়ী মেয়ে তার সার্টিফিকেটের বয়স
চাকরির সীমা অতিক্রম হয়ে যাওয়ায় কোথাও চাকরির জন্য আবেদন নিবেদন করতে পারছে না। এ বিষয়েও বয়স কমিয়ে এনে দিতে পারবেন বলেও তাৎক্ষণিক দু-এক জায়গায় ফোনালাপ করে মেয়েটিকে আশ্বস্ত করে বলেন। আগামী সপ্তাহে তিনির নিজেস্ব গাড়ি নিয়ে সিলেটে একটি প্রোগ্রামে যাবেন। সেই গাড়িতে যাওয়ার জন্য প্রস্তাব দেন। মেয়েটি হাবভাব বুঝতে পেরে প্রত্যাখান করে। এমন চরিত্রের লোক,দেশের যে কোনো অধিদপ্তরের অধীনে ১/২ জন থাকলেই দাপ্তরিক সুনাম তো দুরের কথা। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দুর্নাম ছড়াতে আর মিটিং মিছিল করতে হবে না। অফিসার ইসমাইল, সমবায় অধিদপ্তরের উপজেলা কর্মকর্তা হয়ে দেশের সকল দপ্তরে কাজ করার মতো অফিসার জীবনেও দেখিনি। এমন পারদর্শী অফিসার উপজেলা সমবায় অফিসে থাকার পরও কেন যথাযথ সময়ে নির্বাচন না দিয়ে সময় উত্তীর্ণ করা হয়? কেন এডহক কমিটি করার প্রয়োজন হয় ? এটাই নবীগঞ্জ উপজেলা সমবায়ীদের জিজ্ঞাসা। আর কেন কমিটি গঠনের নামে টাকা চাওয়া হয়। সরকার কী বেতন ভাতা দেয়না?

“বঙ্গবন্ধুর দর্শন সমবায়ী উন্নয়ন” এই প্রবাদটি উন্নয়নের মূল মন্ত্রটি সামনে রেখে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার মানসেই সরকার আর্থ সামাজিক উন্নয়নে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে লাখ লাখ টাকা খরছ করে। এ অফিসার নিজের উন্নয়ন ও লালসার মোহে পরে সমবায়ীদের ধ্বংসের পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছে। তাঁর বাড়ি আপন জেলা হবিগঞ্জ সদরে হওয়ায় ক্ষমতার ধাপট দেখিয়ে বলেন, আমাকে কেউ কিছু করতে পারবেনা। জেলা ও উপজেলা আমার কথা মতোই চলবে। এমনকি নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়কে দিয়ে ও ভয় দেখান।

বিবরণে জানা যায় অফিসার ইসমাইল তালুকদার কোনো এক বিষয়ে দায়িত্ব অবহেলার কারণে জেলা সমবায় অফিসার মহোদয় কারণ দর্শানোর আদেশ দিলে, জেলা সমবায় অফিস হতে মেয়েলি কণ্ঠে ফোনে কে-বা কারা বিষয়টি জানালে সাথে সাথে উত্তেজিত হয়ে হবিগঞ্জ জেলা সমবায় অফিসার মহোদয়কে চেয়ার দিয়ে মাথা ভেঙ্গে দেয়ার মতো হুমকিও দিয়েছেন। এমনকি ৩০’০০০/- টাকা দিয়েছেন বলে জানান। প্রমাণ আছে। আর এসব হচ্ছে টাকার জন্যই। এছাড়াও অধিদপ্তরে একব্যক্তি ও তাঁর মা, ভাই ও বোন তাশের রাজত্ব কায়েম করে কোটি কোটি টাকা বদলি, নিয়োগ, বহু তল ভবন নির্মাণ ও ঋণের নামে হাতিয়ে নেবার সুবাদে বিভিন্ন আবেদন নিবেদনের বদৌলতে ক্রাইম রিপোর্টার তালাশ টিভির প্রতিবেদন ২৪৬ চক্রটি তছনছ করে দুদকের হাতে তুলে দেয় বলে জানা গেছে। আর এই চক্রের সেগেন্টডিং কমান্ড হিসেবে কাজ করে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলা সমবায় অফিসার মো. ইসমাইল তালুকদার। দালিলিক প্রমাণ রয়েছে, তালাশ টিভির হাতে। ফলশ্রুতিতে এড়া-বরাক খাল পাবসস লিঃ -এর এডহক কমিটি ও নির্বাচন কমিটি করিয়ে দেওয়ার নামে বড়ো অংকের টাকা চেয়ে বসেন। এডহক কমিটির অনুমোদন করিয়ে আনার জন্য ১০ হাজার টাকা ও নির্বাচন কমিটি এবং পরিচালনা খরছ চেয়ে বসেন ১০০,০০০/-টাকা। এডহক কমিটির অনুমোদনের জন্য ৫০০০/-টাকা দিলেও, বাকী টাকা সমিতির সদস্য নুরুল ইসলামকে দিয়ে পাঠিয়ে দিলে, এতে টাকার অংক কম হওয়ায়। টাকা না রেখে তিনির ভাষায় বলে দেন “হে আইয়া দিবোনে”। উক্তিটা কতোটা ন্যক্কারজনক সুশীল সমাজ বুঝতে বাকি আছে বলে মনে হয় না। পরে জানা যায় নিজের তৈরি গ্রুপের আঁতাতে নিজেকে সভাপতি সাজিয়ে বাতিলকৃত সদস্যসহ তিন সদস্য বিশিষ্ট এডহক কমিটি নিয়ে আসেন। সমিতির সাবেক সভাপতি ও সম্পাদক সহ সচল সদস্যগন বিষয়টি জানতে পেরে, এমন ঘুষখোর, অত্যাচারী, লম্পট ধান্ধাবাজ ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টিকারি অফিসারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন না হওয়ার আশংকায় অস্বীকৃতি জানিয়ে ১২/০৩/২০২৩ ইংরেজি তারিখে। জেলা সমবায় অফিসের অধীনে নির্বাচন করার জন্য সবিনয়ে নিবেদন করেন। সাথে সাথে একথাও জানায় নবীগঞ্জ উপজেলা সমবায় অফিসার ইসমাইল তালুকদারের কবল থেকে উপজেলা সমবায়ীদের রক্ষার জন্য দ্রুত অপসারণ ও বিচারের দাবী জানান।

এই মর্মে সিলেট বিভাগীয় সমবায় অফিসেও ১৪/০৩/২০২৩ ইংরেজি আবেদন করে বিচারের আশায় বাতায়ন খোলে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন আবেদনকারী সমবায়ীগন। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু দৃষ্টি কামনা করেন নবীগঞ্জ উপজেলা সমবায়ীরা।