প্রচ্ছদ

আইফেল টাওয়ার : গোধুলি বেলায় রঙ বদলায়

  |  ২০:৫৩, মে ০২, ২০২৪
www.adarshabarta.com

দেলওয়ার হোসেন সেলিম :
আইফেল টাওয়ার প্যারিসে অবস্থিত সুউচ্চ লোহার তৈরি পৃথিবীর আশ্চর্য একটি নিদর্শন। এটি ফ্রান্সের সর্বাধিক পরিচিত প্রতীক। বিশ্বের ভ্রমণ পিপাসুদের প্রথম পছন্দের স্থান জুড়ে রয়েছে এই আইফেল টাওয়ার।
ফরাসি বাস্তু প্রকৌশলী ও স্থপতি আলেকজান্ডার গুস্তাভ আইফেল ফ্রান্সের বিখ্যাত আইফেল টাওয়ারের স্থপতি। ১৮৮৯ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে আইফেল টাওয়ার উদ্বোধন করা হয়। এটির উপর অ্যান্টেনা স্থাপনের ফলে আইফেল টাওয়ারের বর্তমান উচ্চতা ৩৩০ মিটার (১০৮৩ ফুট)।
আইফেল টাওয়ার দিনের বেলায় ভিন্ন রঙ এবং রাতের বেলায়ও রকমারি রঙে সজ্জিত হতে দেখা যায়। বিশেষ দিবস বা উৎসব উপলক্ষে এবং প্রয়োজনীয় স্মৃতি রক্ষায় প্রায়ই আকর্শনীয় রঙে সজ্জিত করা হয়।
এমন প্রশ্ন নিশ্চয়ই আপনার মনে জেগেছে এই আইফেল টাওয়ার গোধুলি বেলায় কেন অটোমেটিক রঙ বদলায়? আপনি কি সম্প্রতি সূর্যাস্তের সময় আলাদা রঙ লক্ষ্য করেছেন?

অনেকই মনে করেন, সূর্যের আভায় এবং আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘের কারণে তখন অপূর্ব সুন্দর ক্ষনিকের জন্য আইফেল টাওয়ার রঙ বদলায়। আকাশেও তখন অপূর্ব রক্তিম বা কমলা রঙ দেখা দেয়। কখনও বা তার মধ্যে বেগুনি আভায় দেখা যায়। মনোমুগ্ধকর এ দৃশ্যপট স্বচক্ষে অবলোকন করলে মনে প্রশান্তি লাগে।
আইফেল টাওয়ারের পাশ দিয়ে প্রবাহিত সেইন নদীর তীরবর্তী ঐতিহাসিক স্থান থেকে দৃষ্ঠ অটোমেটিক রঙ বদলে যাওয়ার এই ছবিগুলো দেখলে অনুমান করা যায় বিষয়টি। সম্প্রতি আমি টানা ৪দিন গোধূলি বেলায় ৪টি ছবি তুলেছি। আইফেল টাওয়ারের কাছে গিয়ে। একই স্থান থেকে আমার মুঠোফোন দিয়ে ভিন্ন রঙের এই ছবিগুলো ক্যাপচার করেছি। এতে গোধুলি বেলায় আইফেল টাওয়ারের অটোমেটিক রং বদলানোর চিত্র ভেসে উঠেছে।
শুধু তাই নয়, ঋতুর ভিত্তিতে আইফেল টাওয়ারের উচ্চতাও পরিবর্তিত হয়। আয়রন লেডি আইফেল টাওয়ারের অনেক মজার তথ্য এখনো আমাদের অজানা রয়ে গেছে।
গোধুলি বেলার এই রঙের খেলা নিয়ে কতো গান রচনা হয়েছে। কতো কবিতা লেখা হয়েছে। এ নিয়ে রোমান্টিকতার শেষ নেই।

আইফেল টাওয়ারের টপ লেভেলে উঠে মনোমুগ্ধকর সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখতে অসাধারণ লাগে। টপ লেভেলে আছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাম, রাজধানীর নাম, অংকিত আছে পতাকা। আইফেল টাওয়ার থেকে বিভিন্ন দেশের দূরত্বও উল্লেখ করা আছে। টপ লেভেলে বাংলাদেশের পতাকা, বাংলাদেশের নাম, রাজধানী ঢাকার নাম এবং আইফেল টাওয়ার থেকে ৭৯২৭ কিলো মিটার দূরত্ব লেখা রয়েছে।
উল্লেখ্য, আইফেল টাওয়ার প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রতি ঘন্টায় ৫ (পাঁচ) মিনিটের জন্য ঝলমল হয়ে ওঠে। টাওয়ারটির আলোকসজ্জায় প্রায় ৩৩৬টি প্রজেক্টর এবং ২০,০০০টি বাল্ব ব্যবহার করা হয় বলে জানা গেছে।
আসন্ন অলিম্পিক গেমস প্যারিস ২০২৪ উপলক্ষে আইফেল টাওয়ার এবং এর আশেপাশের স্থান সমুহ আরোও সাজানো হচ্ছে। গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমস, আন্তর্জাতিক মাল্টি-স্পোর্টস ইভেন্ট ফ্রান্সের প্যারিসে ২৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। লন্ডনের (১৯০৮, ১৯৪৮ এবং ২০১২) পরে প্যারিস তৃতীয়বার অলিম্পিক আয়োজনকারী দ্বিতীয় শহর হবে। ১৯০০ এবং ১৯২৪ এর অলিম্পিক সংস্করণ প্যারিস দ্বারা আয়োজিত হয়েছিল।

আইফেল টাওয়ারের লোহা দিয়ে বানানো ষড়ভুজ অংশে অলিম্পিক মশাল, অলিম্পিক রিং ও প্যারিস ২০২৪ লেখা খোদিত আছে। এই অংশটার নিচে পদকের মূল অংশে বিচ্ছুরিত সূর্যের আলোর নকশা খোদাই করা। মূল অংশের সঙ্গে ছয়টি রিভেট (গজাল) দিয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে ষড়ভুজাকৃতির অংশটিকে। আর পদকের পেছনে অংশে বরাবরের মতো অলিম্পিকের আদি ভূমি এথেন্সের প্যানাথিনাইকোস স্টেডিয়ামের ওপর দিয়ে উড়ন্ত গ্রিক দেবী নাইকির ছবি আছে। ২০০৪ অলিম্পিক থেকে পেছনের অংশের এই নকশা চলে আসছে।
লেখক : দেলওয়ার হোসেন সেলিম, সম্পাদক, আদর্শবার্তা। প্রতিষ্ঠাতা সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, কানাইঘাট প্রেসক্লাব, সিলেট।