কোটা আন্দোলনে সারাদেশ এখন পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যু খবর পাওয়া গেছে
আদর্শবার্তা ডেস্ক :
কোটা সংস্কার নিয়ে সংঘর্ষে বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) আরও ১২ জন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৯ জন, সাভারে ১ জন, মাদারীপুরে ১ জন এবং নরসিংদীতে ১ জন নিহত হয়েছেন।
এর আগে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটা সংস্কার নিয়ে সংঘর্ষে ৬ শিক্ষার্থী প্রাণ হারান। এ নিয়ে এ পর্যন্ত কোটা নিয়ে সংঘর্ষে সারাদেশে কমপক্ষে ১৮ জনের মৃত্যু হলো।
রাজধানীর উত্তরা-আজমপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে ৬ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৪ জনের মরদেহ রয়েছে রাজধানীর উত্তরার বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে। হাসপাতালটির পরিচালক মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, চারজনের মধ্যে দুজন শিক্ষার্থী। দুজনের সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
এর আগে উত্তরায় পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে দুজন নিহতের খবর পাওয়া যায়। তাদের একজন উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা যান এবং আরেকজন উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে মারা যান। দুই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে উত্তরা-আজমপুর এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় পাঁচশ জন আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। আহদের মধ্যে যারা গুরুতর, তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিন রাজধানীতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে দুই কলেজছাত্র নিহত হয়েছেন। রাজধানীর ধানমন্ডি ও বাড্ডা-রামপুরা এলাকার সংঘর্ষে এই ঘটনা ঘটে।
বাড্ডা-রামপুরা এলাকায় পুলিশ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত শিক্ষার্থীর নাম জিল্লুর রহমান। তিনি ইমপেরিয়াল কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাসা আফতাবনগরে। নিহত জিল্লুরের চাচা মিসবাহ বলেন, আমার ভাতিজাকে নিথর অবস্থায় বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। এখন আমি বাড়িতে কি জবাব দেব?
অন্যদিকে ধানমন্ডি ২৭ এলাকার সংঘর্ষ রাপা প্লাজার পাশের মোড় থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এই সংঘর্ষে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী মো. ফারহানুল ইসলাম ইসলাম ভূঁইয়ার (ফারহান ফায়াজ) মৃত্যু হয়েছে। নিহত এই শিক্ষার্থীর বয়স ১৮ বছর। তিনি উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং ২০২৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সাথে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কথা ছিল। বর্তমানে তার লাশ লালমাটিয়া সিটি হাসপাতালে রাখা হয়েছে। কলেজের এক কর্মকর্তা বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে বলেন, ওই হাসপাতালে আহত আরও কয়েকজন আইসিইউতে রয়েছেন।
সন্তানের মৃত্যুর খবর জানিয়ে ফেসবুকে এক পোস্টে ফারাজের মা নাজিয়া খানম জানিয়েছেন, ‘তারা আমার শিশুকে হত্যা করেছে। এমনকি তার বয়স ১৮ বছরও ছিল না। আমি ফারহান ফাইয়াজ এর হত্যার বিচার চাই।’
এদিন ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির সময় বাড্ডা-রামপুরা এলাকায় পুলিশ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘাতে এক গাড়ি চালক নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম দুলাল মাতবর। সকালে মেরুল বাড্ডায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘের্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হন।
জানা যায়, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আশংকাজনক অবস্থায় তাকে ফরাজি হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ফরাজী হাসপাতালের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রুবেল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, দুলাল মাতবর নামে ওই ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। তার বুকে গুলি লেগেছে। আমরা উনার নাম ঠিকানা লিখে রেখেছি। উনি সম্ভবত পথচারী ছিলেন। ঘটনা শুনে উনার ছেলেরা এসে লাশ নিয়ে গেছেন। দুলাল মাতবরের বাড়ি পটুয়াখালীতে।
রুবেল আরও জানান, আহত হয়ে হাসপাতালে প্রায় ১০০ জন পুলিশ ও শিক্ষার্থী এসেছেন। তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতালের কর্মীরা।
ঢাকার সাভারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম মো. ইয়ামিন (২৪)। তিনি রাজধানীর মিরপুরের এমআইএসটির শিক্ষার্থী বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাভারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাকিজা টেক্সটাইল মিল সংলগ্ন ইউটার্নে দফায় দফায় এ সংঘর্ষ চলে। এ সময় ইয়ামিন (২৪) নামে আন্দোলনরত ওই শিক্ষার্থী পিঠে গুলিবিদ্ধ হলে তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢাকা মেইলকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার মো. ইউসুফ আলী।
মাদারীপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ত্রিমুখী হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালান। পাল্টা হামলা চালিয়ে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় পুলিশের ধাওয়ায় লেকের পানিতে ডুবে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া সংঘর্ষে ১০ পুলিশ সদস্য, ২ সংবাদকর্মীসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে শেখ হাসিনা মহাসড়কের ডিসি ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত শিক্ষার্থীর নাম বিক্ত দে। তিনি মাদারীপুরের আমিরাবাদ এলাকার স্বপন দে’র ছেলে। বিক্ত মাদারীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।
নরসিংদী সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে তামিম আহমেদ (১৫) নামে এক কিশোর নিহত হয়েছে। নরসিংদী জেলা হাসপাতালের আরএমও মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, তার গায়ে রাবার বুলেটের চিহ্ন আছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে সদর উপজেলার ভেলানগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। (সূত্র: দৈনিক ইনকিলাব)