আমরা হক্কল সিলেটি
দেলওয়ার হোসেন সেলিম:
ফ্রান্সের স্হানীয় অধিবাসীদের মতো প্রবাসীরাও অধির আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকেন গ্রীষ্মের (সামার সিজন) জন্য। দীর্ঘ শীতের জীর্ণতা ও নিরবতা কাটিয়ে প্রকৃতি যেমন এসময় নিজেকে মেলে ধরে, ঠিক তেমনি প্রবাসীরাও মেতে ওঠেন বিভিন্ন আনন্দ আয়োজনে। এরই ধারাবাহিকতায় ফ্রান্সে বসবাসরত সিলেটবাসীরা মেতে উঠেছিলেন বনভোজন ও সমুদ্র সৈকত ভ্রমনে। সিলেট বিভাগ সমাজ কল্যাণ সমিতি, ফ্রান্সের উদ্যোগে ৯ আগষ্ট ২০১৫ ইংরেজি (রবিবার) সমুদ্র সৈকত দবিল – ত্রবিল সুখ মেখ স্হানে অনুষ্ঠিত হয় সমুদ্র ভ্রমন ও বনভোজন। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় এতে প্রবাসীরা আনন্দে দিনটি অতিবাহিত করেন। প্যারিসের লা সাপেল এরিয়া থেকে ঐদিন সকাল ৯ টায় বাস যোগে রওয়ানা হয়ে প্রায় ৪ ঘন্টা পরে গন্তব্য স্হলে পৌঁছান। যাত্রার শুরুতে অংশগ্রহণকারী সকলকে শুভেচ্ছা ও স্বাগত জানান সমিতির সভাপতি দিলওয়ার হোসেন কয়েছ। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন মির্জা আবুল বাশার। লং জার্নির সময় বাসে মাইক্রফোনের সাহায্যের সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন সমিতির যুগ্ম সেক্রেটারি মোহাম্মদ সেলিম। গান, কৌতুক, রম্য ধাঁধা পরিবেশন করে মাতিয়ে রাখেন খসরুজ্জামান খসরু। সমিতির সেক্রেটারি মোহাম্মদ রেজাউল করিম তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে অংশ গ্রহণকারী সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রবাসী বৃহত্তর সিলেটবাসীদের মধ্যে মূলতঃ সেতু বন্ধনের উদ্দেশ্যে এই সুন্দর আয়োজন। উপদেষ্টা সুনাম উদ্দিন খালেক প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মকে আমাদের কৃষ্টি কালচারের সাথে পরিচয় করানোর গুরুত্বারোপ করেন এবং দেশ ও প্রবাসে সিলেট বিভাগের কল্যাণে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান। এছাড়া, সমিতির বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন সাবেক সেক্রেটারি হেনু মিয়া ও হাজী জালাল উদ্দিন খান।
প্রবাসে ব্যাস্ত জীবনের ক্লান্তি দূর করে প্রশান্তি নিতে এই সমুদ্র ভ্রমন ও বনভোজনে উপস্থিত হয়েছিলেন দলমত নির্বিশেষে বহু প্রবাসীরা। এতে অনেক মহিলা এবং শিশুরাও অংশ নেন।
যাদের সরব উপস্থিতিতে এই মিলন মেলা মুখরিত হয়ে ওঠে, তারা হলেন সিলেট বিভাগ সমাজ কল্যাণ সমিতি, ফ্রান্সের উপদেষ্টা মোহাম্মদ সুনাম উদ্দিন খালিক, মতিন মিয়া, সাবেক সভাপতি সিরাজ উদ্দিন, মির্জা আবুল বাশার, সেক্রেটারি মোহাম্মদ রেজাউল করিম, যুগ্ন সেক্রেটারি মোহাম্মদ সেলিম, সাবেক সেক্রেটারি হেনু মিয়া, খসরুজ্জামান খসরু, হাজী জালাল খান, সাংবাদিক দেলওয়ার হোসেন সেলিম, মহি উদ্দিন সোহেল, রুহুল আম্বিয়া, রুমেল উদ্দিন, ইমদাদুর রহমান বুলবুল, আব্দুল আহাদ, সালেহ আহমদ, লিটন মিয়া, হারুন আহমদ, মেহেদী হাসান ওলি, জুয়েল আহমদ, পারভেজ আহমদ, নাছির উদ্দিন, জুবেল, বদর উদ্দিন, আফতাব মিয়া, আব্দুল হামিদ, ফয়সল আহমেদ, গোলাম কিবরিয়া, জসিম উদ্দিন, জুম্মান, আব্দুস সহিদ, হোসাইন, ইমরান, হেলাল, পিংকু চক্রবর্তী, মোজাহেল, মতিউল বারী, নুরুল হক, বিনা হক, আব্দুল আউয়াল, মাসুক, আবু তালেব, বেগম তালেব, সানু মিয়া, ফরিদা খানম, কায়েছ উদ্দিন, আশরাফুর রহমান, ফরহাদ আহমদ, তোফাজ্জুল, লন্ডন প্রবাসী সানি, মৌরী, শিউলি, তাহমিদ, আশিক মিয়া, হাজী জাহেদ, হোসেন, হাবিব প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ইউরোপের মাটিতে জীবনের প্রয়োজনে বসবাস করলেও মন কাধেঁ সর্বদা জন্মভুমি বাংলাদেশের মা, মাটি ও মানুষের জন্য। ভ্রমন পিপাসু অংশগ্রহণকারীরা সমুদ্র সৈকতে আনন্দ করে দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করেন। হরেক পদের মুখরোচক বাংগালী খাবার খেয়ে সবাই তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে থাকেন। যারা রান্না করেছেন, তাদের ভূয়সী প্রশংসা করে ধন্যবাদ জানান। খাওয়া শেষে অনেকেই আনন্দ মনে মুঠোফোনের সাহায্যে বারবার “সেলফি” তুলতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন।
এরপর শুরু হয় লবনাক্ত পানিতে সাতার কাটা, হৈ হুল্লোড়, হ্যান্ডবল খেলা, ফুটবল ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পানিতে হ্যান্ডবল খেলায় দুভাগে বিভক্ত হয়ে খেলেছেন গেন্জি গ্রুপ ও উদলা (গেন্জি ছাড়া) গ্রুপ। ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয় সমুদ্র সৈকতের বালুতে। ফুটবল খেলার আয়োজক ছিলেন জালাল খান। দিনব্যাপী সমুদ্র সৈকত ভ্রমন ও বনভোজনের আনন্দ উপভোগ করতে করতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে।
প্রবাসীরা যখন সুখের দোলায় উক্ত মনোরম স্থান ত্যাগ করেন তখন সুর্য প্রায় হেলে পড়েছে সাগর পাড়ে । সুর্যাস্তের এই দৃশ্য খুবই চমৎকার। ঘর ফেরা সবার অন্তরে উচ্ছারিত হয়েছিল “দেশ বিদেশে বেটাগিরি আমরা হক্কল সিলেটি।”
দেলওয়ার হোসেন সেলিম
প্যারিস, ফ্রান্স।
মোবাইলঃ 0033753062778
ইমেইলঃ salim_dh1@yahoo.com