স্যালুট হে মানবতাবাদীগণ
মোঃ ফয়ছল আলম
সারাদেশে যখন করোনা আতংকে মাকে ফেলে যাচ্ছে ছেলে,স্বামীকে ফেলে যাচ্ছে স্ত্রী,তখন এক তীব্র মানবিক বন্ধন গড়ে উঠছে সিলেটে। অনলাইনের সুবাধে গত কয়েকদিনে যে সব সুখের খবর পেলাম সে গুলো জানানোর প্রয়োজন মনে করছি।
সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন,করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিন্তা নেই। চিকিৎসা, দাফন কাফন,খাবার সবকিছুর জন্য তিনি আছেন,তার সিটি কর্পোরেশনের টিম আছে। বলতে গেলে এরকম সাহসী ঘোষণা মুহুর্তে ক”জনার মুখ দিয়ে বের হতে পারে। সে জন্যইতো তিনি আরিফ। তিনি সিলেটের মেয়র। বর্তমান পরিস্থিতিতে তার তিনটি পদক্ষেপ আমার নজরে পড়েছে। একদিন দেখলাম আমার পাড়ায় একের পর এক ট্রাক ঢুকছে চাল ডাল তেল নিয়ে। দু একজনকে তাৎক্ষনিক জিজ্ঞেস করলাম। বললেন,মেয়র দরিদ্র পরিবার গুলোকে খাবার দিচ্ছেন। কাউন্সিলরদের অফিসে যাচ্ছে এগুলো। পরে কাউন্সিলররা কোন হেকমতে বিলি করলেন তা আর জানলাম না। দ্বিতীয় পদক্ষেপটি তিনি নেন সরকারের আগেই। সিলেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে বিপনী বিতান,মার্কেট বন্ধ ঘোষণা দেন। তৃতীয়ত যে কাজটি তিনি করেছেন সিলেটের সকল ক্লিনিক মালিকদের নিয়ে বেঠক করে তাদের কাছ থেকে একটি ক্লিনিক ও একটি হাসপাতালের ২০টি বেড আদায় করেছেন হাসপাতালের জন্য। আর সেগুলো হচ্ছে নয়া সড়ক মাউন্ট এডোরা হাসপাতাল এবং নর্থ ইস্ট হাসপাতালের একটি ফ্লোর। তিনি মেয়র, এগুলো তঁার কাছে সবার প্রত্যাশা,তাই তিনি এগুলো করবেনই। মানবিক মন আছে তঁার সেটি আবার তিনি জানিয়ে দিলেন। বিদেশ থেকে ফিরে কোয়ারিন্টেনে থেকেও বসে নেই আমাদের সিলেটের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। তিনিও সংকটে পড়া মানুষদের মাঝে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন, দিচ্ছেন।
সিলেটের সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সদস্যরা প্রতিদিনই সিলেটের কোনো না মধ্যবিত্ত নিন্ম মধ্য পরিবারে গোপনে খাবার পৌছে দিচ্ছেন। সে জন্য তাঁরা একটি হট নাম্বার চালু রেখেছেন। সিলেটের পুলিশ সুপার তার ফোন নাম্বার দিয়ে বলেছেন,যে কোনো স্থানে যে কোনো সংকট থাকলে তাকে ফোন করতে বলেছেন,খাদ্য সহায়তা পৌছে দেবেন। এরোসা ফাউন্ডেশন নামের একটি সংস্থার কর্মীদের দেখলাম সিলেট নগরীর রাস্তার পাশে থাকা ছিন্নমুল মানুষ এবং পথশিশুদের মাঝে খাবার দিচ্ছেন। প্রতিদিনই সিলেটের বিভিন্ন স্থানে খাবার বিতরণ করছেন চিত্ত সম্পন্ন বিত্তবানরা। আর লন্ডনে দেখলাম আমাদের সিলেটের সন্তান এনামুল হক লিটন,আব্দুল বাসিত বাদশা, এজে লিমন ,বাবর চৌধুরী সহ টিম সুপার সেভেন এর সদস্যরা গৃহবন্দী মানুষের সেবায় নিজেদের বিলিয়ে দিচ্ছেন। আবেদুর রহমান শিমু ও তার বন্ধুরা সেখানে ভলান্টিয়ার তৈরী করছেন মানুষের সেবার জন্য । আর প্রবাসীরাতো প্রতিদিনই প্রকাশ্যে গোপনে সহায়তা করছেন বিপদগ্রস্ত মানুষদের।
কিন্তু কিছু সাধারণ মানুষ অসাধারণ ঘোষণা দিয়েছেন সংকটে। তা রীতিমতো ঘরবন্দি মানুষগুলোর জন্য সত্যিই সাহস যোগানোর মন্ত্র হিসেবে কাজ করছে। নগরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মিজান আজিজ চৌধুরী ফেসবুকে তাঁর লুসিডা গাড়ির ছবি দিয়ে বলেছেন,যদি কোনো করোনা রোগী বহন করতে হয় তবে তিনি প্রস্তুত। গাড়ী চালকরা রাজী হয়নি,তাই তিনি নিজেই রোগী বহনের ঘোষণা দিয়েছেন। আহসান হাবিব নামের আরেক ফেসবুক বন্ধু দেখলাম একই ধরণের ঘোষণা দিয়েছেন,তিনি ফেসবুকে তাঁর ফোন নাম্বার দিয়ে বলেছেন, বর্তমান লকডাউন মুহুর্তে যদি সিলেট শহরে কোনো রোগী হাসপাতালে ক্লিনিকে আনা নেয়া করতে হয়,তবে তিনি ফ্রি করবেন। কুয়ারপারের তাফদিল আহমদ ফেসবুকে জানালেন, উপার্জনহীন মধ্যবিত্ত কেউ লোক লজ্জার ভয়ে ত্রাণ সংগ্রহ করতে না পারেন তবে যেন তাঁর মোবাইল ফোনে একটি কল দেন। শুধু যিনি পাবেন তিনি জানবেন, আর আল্লাহ জানবেন,তিনি খাবার পৌছে দেবেন। একই ধরণের একটি ঘোষণা দিয়েছেন সিলেট চেম্বারের পরিচালক খন্দকার ইশরার আহমদ রকি। যিনি বলেছেন,কেউ পরিবার নিয়ে খাদ্য সংকটে থাকলে তাঁর ফোন নাম্বারে কল দিয়ে জানানোর জন্য বলেছেন। তিনি খাবার পৌছে দেবেন। কেউ জানবেনা আল্লাহ ছাড়া। কুয়ারপারের নিবেদিতপ্রাণ সমাজকর্মী রেজাউল করিম রানা তাঁর ফেসবুকের টাইম লাইনে লিখেছেন,করোনা রোগীদের কবর খেঁাড়ার প্রয়োজনে তাঁকে কল করতে পারেন। তারা প্রস্তুত আছেন সেবা দেয়ার জন্য। গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাঁর ফেসবুক পেজে জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতিিতে সার্বক্ষনিক রোগী বহন সেবা,মৃতদের দাফন কাফনের জন্য ১৫সদস্যের টিম গঠন করেছেন।একই উপজেলার সংগীত শিল্পী মুক্তা মাহমুদ তাঁর প্রতিষ্টানের শিক্ষার্থীদের নিয়েও আরেকটি টিম গঠন করেছেন,যারা যখন চাইবেন করোনা রোগীদের সেবা দেবেন, সেই সঙ্গে এই শিল্পী তাঁর শিক্ষার্থীদের নিয়ে ৭টি খতমও সম্পন্ন করেছেন বিপদ থেকে সবাই রক্ষা পেতে। আল্লাহ সকলের চেষ্টা কবুল করুন। উত্তম বদলা দিন।
সব মিলিয়ে যেন এক মানবিক সিলেটেরই প্রতিচ্ছবি ফোটে উঠছে করোনাকালীন সংকটময় মুহুর্তে। স্যালুট হে মানবতাবাদীগণ।
(মোঃ ফয়ছল আলম এর ফেইসবুক টাইম লাইন থেকে)