কানাডায় ৩৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বেকারত্ব
মোঃ নাসির, নিউ জার্সি, আমেরিকা থেকে :
বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস সারাবিশ্বে বেকারত্বের পাশাপাশি কানাডাতেও বেকারের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। এই মুহূর্তে কানাডায় বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষ বেকার। তাদের অনেকেই ঘরে বসে এম্প্লয়মেন্ট ইন্সুরেন্সের টাকা পাচ্ছে। কিন্তু এ টাকা সীমিত সময়ের জন্য। আবার অনেকেই কানাডা সরকারের দেয়া ইমারজেন্সি সি ই আর বি পাচ্ছে, আর এটাও সীমিত সময়ের জন্য।
বৈশ্বিক এই মহামারী বাংলাদেশের রেমিটেন্স এর ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলেছে। প্রচুর সংখ্যক প্রবাসী বাঙালি কানাডায় বসবাস করেন। তাদের অর্থ দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রেও শিথিলতা বিরাজ করছে।
কানাডার স্থানীয় গণমাধ্যম গ্লোবাল নিউজ জানিয়েছে, কানাডায় বেকারত্ব গত ৩৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। কোভিড – ১৯ এবং লকডাউনের প্রভাবে বর্তমানে কানাডায় গত ৩৮ বছরের মধ্যে বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে বেকারত্বের হার ১৩.৭ % ।
এর আগে ১৯৮২ সালের ডিসেম্বর মাসে এই হার ছিল সর্বোচ্চ ১৩.১ % । কানাডার পরিসংখ্যান এর রিপোর্ট অনুযায়ী গত মে মাসে নতুন ২৪৯,৬০০ চাকরি যােগ হওয়ায় এবং লকডাউন কিছুটা শিথিল করায় বেকারত্বের হার নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে ।
রেফিনিটিভ ফার্মের তথ্য মতে, নতুন ২৪৯,৬০০ চাকরি যােগ না হলে মে মাসে চাকরি হারানাের সংখ্যা বেড়ে যেতাে ৫০০,০০০ এবং বেকারত্বের হার হতাে ১৫ % । গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে ৩ মিলিয়ন লােক চাকরি হারিয়েছিলেন এবং ২.৫ মিলিয়ন লােকের কর্মঘণ্টা কমে গিয়েছিল যা , ২৯২,০০০ লােকের কর্মঘণ্টা অর্ধেকের চেয়ে নীচে চলে গিয়েছিল । কানাডার কর্মসংস্থান মন্ত্রি কারলা কোয়াল্ট্র মানুষের কাজে ফিরে আসাকে আশাব্যঞ্জক বলে মন্তব্য করেছেন । ইতিমধ্যে প্রায় ১.২ মিলিয়ন লােক সি ই আর বি সুবিধার আওতা থেকে বের হয়ে গেছেন ।
অপর দিকে যুক্তরাষ্ট্রে মে মাসে ২.৫ মিলিয়ন চাকরি যুক্ত হওয়ায় সে দেশে বেকারত্বের হার ১৩.৩ % এ নেমে এসেছে ।
ট্রাম্প বলেছেন, তার দেশের অর্থনীতি করােনা সংকট থেকে রকেট শীপে করে পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে । এর আগে এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্বের হার ছিল ১৪.৭ % । অর্থনীতিবিদরা ধারণা করেছিলেন মে মাসে বেকারত্বের হার বেড়ে দাঁড়াবে ২০ % এর কাছাকাছি , কিন্তু তাদের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে । বেকারত্ব ও অর্থনীতি নিয়ে কানাডার সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারক অর্থনীতিবিদরা একের পর এক আলোচনা-পর্যালোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কলামিস্ট প্রকোশলী আব্দুল্লা রফিক বলেন – খনিজ তেল সমৃদ্ধ কানাডার আলবার্টা প্রদেশ করোনাভাইরাস এর প্রভাবে অর্থনৈতিক ভাবে প্রচন্ড ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।এখানে প্রচুর প্রফেশনাল যেমন-ইঞ্জিনিয়ার,জিওলজিস্ট এবং দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে যাদের অনেকেই আমেরিকামুখী হচ্ছে। সর্বোপরি কানাডার অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যার প্রভাবে প্রথম কোয়াটারে কানাডার জি ডি পি ৮ শতাংশের উপর সঙ্কুচিত হয়েছে। দ্বিতীয় কোয়াটারে আরো হতে পারে ।
কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বেড়েছে কানাডিয়ান সরকার প্রণোদনা দিয়ে কিছুটা লাগাম ধরেছে কিন্তু যদি অর্থনৈতিক সংকোচন আরো লম্বা সময়ের জন্য হয় তাহলে পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে তা বোঝা মুশকিল।
কানাডার ক্যালগেরির টমবেকার ক্যানসার সেন্টারের ক্লিনিক্যাল রিসার্চ কো-অর্ডিনেটর আহমেদ শাহিন জানালেন আকস্মিকভাবে কোভিড-১৯ সংকট কানাডার অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে বিশেষ করে ডেন্টাল হাইজিনিসট,ফিজিওথেরাপি, মেডিক্যাল এবং ডেন্টাল অ্যাসিসটেনট, কাইরোপ্রোক্টর ক্ষেত্রে চাকরি হারানোর হার বেশী। এই সংকটময় মুহুর্তে কানাডীয়ন নাগরিক তাদের গুরুত্বপূর্ন সার্জারি সহ অন্যান্য অনেক চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করছেন।
প্রকৌশলী একেএম মওলাদাদ হোসেইন জানালেন কোভিড-১৯ এর করাল গ্রাসে বিশ্বের সকল প্রান্তে এক করুণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে আমরা সজন হারিয়ে শোকে কাতর, অন্যদিকে অর্থনৈতিক দৈন্য দশার শিকার।
লকডাউন, কোয়ারান্টাইন বা সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে অধিকাংশ অর্থনৈতিক কর্মকান্ডই থেমে গেছে। গুটি কয়েক শিল্প কারখানা সীমিত আকারে চলছে। অধিকাংশ মানুষেরই আজ চাকরি নেই বেকার হয়ে বসে আছে । অনেকে আবার বাসা থেকে অফিস করছে। যারা সরাসরি কাজে যাচ্ছে তাদের সারাক্ষণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সতর্কতার সহিত কাজ করতে হচ্ছে । এ এক অস্বাভাবিক অবস্থা। আমরা আগামী সুন্দর দিনের অপেক্ষায় আছি।
করোনা মহামারীর এই দুর্যোগ কাটিয়ে বিশ্ববাসী আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে, অর্থনীতি সচল হয়ে উঠবে , মানুষ উৎকণ্ঠা আর শঙ্কা থেকে মুক্তি পাবে এমনটাই মনে করেন কানাডায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।