বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ ভাইরাল করা হয়েছে: জবি উপাচার্য
জাহিদ সাদেক | রাইজিংবিডি.
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের একটি বক্তব্য সমালোচিত হচ্ছে। নাগরিক সমাজসহ বিভিন্ন পেশাজীবী তার বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীরাও উপাচার্যের বক্তব্যে হয়েছেন মর্মাহত। এ প্রসঙ্গে জানতে ড. মীজানুর রহমানের মুখোমুখি হয়েছিলেন রাইজিংবিডির প্রদায়ক জাহিদ সাদেক।
জাহিদ সাদেক: স্যার কেমন আছেন? সম্প্রতি আপনার একটি বক্তব্য সমালোচিত হচ্ছে। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাই।
জবি উপাচার্য: প্রথমেই বলি, আমার বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ ভাইরাল করা হয়েছে। যিনি এটি করেছেন তিনি পুরো কথোপকথন সবাইকে জানাননি। তাহলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। তারপরও বলি, যা প্রচার করা হচ্ছে এটা আমার বক্তব্য নয়; ব্যক্তিগত আলাপচারিতা। মেসভাড়া নিয়ে সরব হলে মানুষ কীভাবে বিষয়টি দেখবে আমি সে প্রসঙ্গে কথাগুলো বলেছি। কাউকে আঘাত করার জন্য বলিনি। আমি বোঝাতে চেয়েছি প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই অনাবাসিক শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু শুধু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই যদি মেস ভাড়ার দাবিতে সরব হয় তবে মানুষ সেভাবে (ভাইরাল বক্তব্য) প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে। অথচ আমি লক্ষ্য করলাম, আমার পুরো বক্তব্যটি প্রচার না করে শুধু ওই অংশটুকু প্রচার করা হলো। সম্পূর্ণ কথা বাদ দিয়ে খণ্ডিত অংশ তুলে ধরা হলো। এ কারণেই বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
জাহিদ সাদেক: আপনি কোন কথার পরিপ্রেক্ষিতে কথাগুলো বলেছিলেন আবার একটু বলবেন কি?
জবি উপাচার্য: অনাবাসিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সমান। কিন্তু মেস ভাড়ার বিষয়টি যেভাবে তুলে ধরা হচ্ছে, মানুষ মনে করবে এটা গরিবদের বিশ্ববিদ্যালয়। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। কারণ এটা মেধাবীদের বিশ্ববিদ্যালয়। মেধার ভিত্তিতে এখানে ছাত্র ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীরা আসে, এখানেও আসে। তখন কথাপ্রসঙ্গে মানুষ বিষয়টিকে কীভাবে দেখবে সেই আশঙ্কা বিবেচনায় নিয়ে আমি কথাগুলো বলেছিলাম।
জাহিদ সাদেক: শিক্ষার্থীদের দাবিকে কীভাবে দেখছেন?
জবি উপাচার্য: শিক্ষার্থীরা যখন বলছে ১৬ হাজার ছাত্র টিউশনি করে চলে। বাড়িতে টাকা পাঠায়। তাই তাদের দুই হাজার টাকা করে মোট ২৯ কোটি টাকা মেস ভাড়ার জন্য বরাদ্দ দিতে হবে। এটা কোনো বাস্তব দাবি নয়। যারা মেসে থাকেন তারা সবাই গরিব নন। আমাদের ক্লাসের ৮০ থেকে ৯০ জন শিক্ষার্থী থাকলে ২০ জন হয়তো দরিদ্র পরিবারের হতে পারে। আর ১০ জন হয়তো খুবই নিঃস্ব। বাকিরা তো আমরা ভালো আছি। প্রতিটি ক্লাসে এমন দু’একজন শিক্ষার্থী রয়েছে যারা ধনী পরিবারের সন্তান। তাহলে সবার মেস ভাড়া বরাদ্দের তো কোনো কারণ নেই। মেস ভাড়া যাদের সামর্থ্য আছে তারা দেবে। এখন তো মেসভাড়া কেউ চাচ্ছেও না। এখন তো মেসে কেউ নেই-ও। অনেকেই বাড়িতে চলে গেছে। তারা যখন আসবে তখন এটা নিয়ে সুরাহা করা যাবে।
জাহিদ সাদেক: মেস মালিকরা ভাড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের হয়রানি করছে- এমন অভিযোগ উঠেছে।
জবি উপাচার্য: সবার মেস ভাড়া দেওয়া তো বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সম্ভব নয়। যখন তারা মেসে ফিরবে তখন সবকিছু ঠিক হলে মেস ভাড়া দেবে। মেসের মালিক যদি বাসা থেকে মালপত্র বের করে দেয় তাহলে মালিকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা যাবে।
জাহিদ সাদেক: করোনার এই দুর্যোগে শিক্ষার্থীদের পাশে বিশ্ববিদ্যালয় কতটা দাঁড়াতে পেরেছে বলে মনে করেন?
জবি উপাচার্য: আমাদের বেশ কিছু শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবার আক্রান্ত। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করানোর ক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতা করেছি। কয়েকজন শিক্ষক বাসায় অক্সিজেন নিচ্ছেন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি নিয়েও চিন্তা করতে হচ্ছে। এছাড়াও বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে শিক্ষকরা তো বটেই প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সহায়তা করা হয়েছে। অনেককে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমেও সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। যে যেখানে সমস্যায় পড়ছে তাকেই সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। ইউএনওকে ফোন করে, চেয়ারম্যানকে ফোন করে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানোর কাজ করছি। বিকাশের মাধ্যমে নগদ টাকা পৌঁছানোর কাজও করেছি।
জাহিদ সাদেক: দরিদ্র শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভিন্ন কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা?
জবি উপাচার্য: আমাদের প্রচুর ছাত্র আছে, যারা দরিদ্র ঘরের সন্তান। এদের তালিকাও আমাদের কাছে আছে। কারণ আমাদের জাকাত ফান্ড আছে। দরিদ্রদের সাহায্য-সহযোগিতা করার বিভিন্ন টিম আছে। যে কারণে আমাদের কাছে হিসাব আছে, প্রায় ৩৬৫ জন ছাত্র একেবারেই নিঃস্ব। চিন্তার বিষয় হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় যখন খুলবে, এই ছাত্ররা যখন ফিরে আসবে, তখন তো টিউশনি অনেকের থাকবে না। স্বাভাবিকভাবে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। কেউ ঝুঁকি নিয়ে প্রাইভেট শিক্ষক রাখবে না। এই ছাত্ররা কীভাবে তাদের জীবন-জীবিকা চালাবে? আমাদের এ বিষয়ে ভাবতে হচ্ছে। সরকারের থেকে যদি সহযোগিতা পাওয়া যায় তাহলে ভালো। যারা ধনী; আমাদের ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে, তারাও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে। একদিনের বেতনও দিয়ে রেখেছেন শিক্ষকরা। এই সমস্যা আমাদের একার সমস্যা নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যে পরিমাণ ছাত্র-ছাত্রী ট্রেনে ক্যাম্পাসে আসে, তাদেরও সমস্যা। এই সমস্যার সমাধান হয় রাষ্ট্রকে করতে হবে, অথবা আমাদের মধ্যে যারা সামর্থ্যবান আছে; প্রত্যেক ক্লাসে প্রচুর ছাত্র আছে যারা একজন দশজনকে দেখতে পারে, তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
(সংগৃহিত)।