প্রচ্ছদ

আমেরিকান ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ’র প্রেসিডেন্ট ড. আলী রীয়াজ, সেক্রেটারি ড. দিনা সিদ্দিকী

  |  ১৬:৩২, জুন ২৫, ২০২০
www.adarshabarta.com

মোঃ নাসির, নিউ জার্সি, আমেরিকা থেকে :

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবি শিক্ষকগণের গবেষণা, প্রশিক্ষণ, আন্তর্জাতিক অঙ্গনের প্রথিতযশা স্কলারদের সাথে ভাবমিনিময়ের পাশাপাশি নেটওয়ার্ক স্থাপনের মধ্য দিয়ে অর্জিত অভিজ্ঞতাকে বাংলাদেশের শিক্ষার মানোন্নয়নে ব্যবহারের অপূর্ব একটি অবলম্বন হচ্ছে ‘আমেরিকান ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ’ (এআইবিএস)। ৩০ বছর আগে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দুই দেশের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে গবেষণার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের অধ্যাপকগণ বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের অধ্যাপকগণ যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। এই স্কলারগণের যাতায়াত ও অবস্থানের ব্যয়ভার বহনের জন্যে উভয় দেশকে বার্ষিক ১২৪ হাজার ডলার করে অনূদান প্রদানের কথা। কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ সেটি দিচ্ছে না।

এর আগে ২০০৬ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত অনূদানের অর্থ বন্ধ ছিল। ২০১৬ সালে বাংলাদেশী আমেরিকান অধ্যাপক ড. গোলাম মাতবর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পর অনেক দেন-দরবারের মধ্যদিয়ে বন্ধ দুয়ার খোলেছিল। তবে তার স্থায়িত্ব দু’বছরের বেশী হয়নি। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের স্কলারগণ বাংলাদেশে গেলেও বাংলাদেশ থেকে কেউই যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণা কর্ম অথবা সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে আসতে সক্ষম হচ্ছেন না। এমনি একটি স্থবিরতার মধ্যে এই সংস্থাটির বোর্ড অব ট্রাস্টি নতুন নির্বাহী কমিটি গঠন করেছেন। চার বছর মেয়াদি এই কমিটির প্রেসিডেন্ট হয়েছেন ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ‘ডিশটিঙগুইশড প্রফেসর’ ড. আলী রীয়াজ।

১ অক্টোবর থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করবে এই কমিটির অপর নির্বাচিত কর্মকর্তারা হলেন : ভাইস প্রেসিডেন্ট-ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি ব্লুমিংটনের অধ্যাপক রেবেকা ম্যানরিং, সেক্রেটারি-নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. দিনা সিদ্দিকী এবং মেম্বার এ্যাট লার্জ-অস্টিনে ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের সহযোগী অধ্যাপক জেসন কন্স। ট্রেজারের দায়িত্ব অব্যাহত রাখবেন কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক রাসেল ম্যাকডারমট। ২৩ জুন মঙ্গলবার নয়া কমিটির তথ্য এ সংবাদদাতাকে জানান নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. আলী রীয়াজ। উল্লেখ্য, টানা দুই টার্মের প্রেসিডেন্ট ড. মাতবর নতুন কমিটিকে অভিনন্দিত করেছেন এবং সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। বাংলাদেশের ইউনিভার্সিটির শিক্ষা ব্যবস্থাপনাকে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায় করতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা ব্যবস্থার আলোকে বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গণের উৎকর্ষ সাধনে এটি যুক্তরাষ্ট্রে একমাত্র একটি আমব্রেলা সংস্থা। এর মোট ৪৯ সদস্যের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ এবং বাংলাদেশের ২৪ ইউনিভার্সিটি। প্রতিটি সদস্য-ইউনিভার্সিটি হচ্ছে বোর্ড অব ট্রাস্টির মেম্বার।

বিশ্বের ২২ দেশে স্বাধীন রিসার্চ সেন্টারের সমন্বয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ‘কাউন্সিল অব আমেরিকান ওভারসিজ রিসার্চ সেন্টার’রও সদস্য হচ্ছে এআইবিএস। এই সেন্টার শিক্ষা ও জীবন-মানের উন্নয়ন নিয়ে গবেষণাকে প্রমোট করে, বিশেষ করে মানবিকতা ও সমাজবিজ্ঞাণের কাজে উৎসাহিত করে। এমন একটি সংস্থার মহৎ কাজ পরিচালনায় বাংলাদেশ বছরে মাত্র এক লাখ ২৪ হাজার ডলার করে প্রদানেও কার্পণ্য করছে কেন-সেটি সংশ্লিষ্টদের বোধগম্যে আসছে না বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে খ্যাতনামা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং ওয়াশিংটনডিসি ভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক ‘আটলান্টিক কাউন্সিল’র অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো ড. আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে বার্ষিক নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থ পুনরায় মঞ্জুর করার জন্যে। কারণ, এটি এমন একটি প্রতিষ্ঠান যার মাধ্যমে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের মেধাবি শিক্ষক-গবেষকদের সাথেই মতবিনিময়ের সুযোগ ঘটে না, সারাবিশ্বের স্কলারদের সাথেও নেটওয়ার্কিং হয়। এমনকি, গবেষণা কর্মের প্রকাশকরাও থাকেন প্রতি বছর মেডিসনে ‘ইউনিভাসিটি অব উইসকনসিন’এ অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে। সেখানে বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়ন-অগ্রগতি, সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়েও গবেষণাধর্মী সিম্পোজিয়াম হয়। এটি অনুষ্ঠিত হয় প্রতি বছর অক্টোবরে। অর্থ মঞ্জুর না করায় গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের শিক্ষকগণ আসতে সক্ষম হচ্ছেন না। আলী রীয়াজ আশাপোষণ করে বলেন, ‘প্রকারান্তরে বাংলাদেশের শিক্ষার মান উন্নয়নের স্বার্থে এসব আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অধ্যাপকগণের অংশগ্রহণের ব্যাপারটি অত্যন্ত জরুরী। আমার বিশ্বাস ১ অক্টোবরে দায়িত্ব গ্রহণের আগেই বাংলাদেশ অর্থ মঞ্জুরির ব্যাপারটি সহানুভ’তির সাথে বিবেচনা করবে।’