নিউইয়র্কে চলাফেরায় সতর্ক হোন
হাকিকুল ইসলাম খোকন / মোঃ নাসির, যুক্তরাষ্ট্র থেকে :
নিউইয়র্কে পৃথক পৃথক ঘটনায় একদিনে ২১ জন গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে দুজন নিহত হয়েছেন। কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলনের সময় থেকেই নিউইয়র্কে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটছে। লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসার মুহূর্তে গ্রীষ্মের প্রথম সপ্তাহান্তেই এমন ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। গত ১৯ জুন রাত থেকে ২০ জুন সকাল পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পৃথক এই গুলির ঘটনা ঘটে। প্রতিটি ঘটনাই পুলিশ তদন্ত করছে বলে জানিয়েছে। সেই সাথে নিউইয়র্কের বিভিন্ন এলাকায় গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা বেড়ে গেছে। অন্যদিকে ফোন করে বিভিন্ন সংস্থার নামে ইনফরমেশন নিয়ে প্রতারক চক্র আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। করোনাকালে মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রতারক চক্র প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় অনেকেই সতর্কভাবে চলাফেরা করা এবং বাড়ির বেল টিপলে দরজা না খোলার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন।
কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যার পর পুলিশ বিভাগের সংষ্কার শুরু হয়েছে। নিউইয়র্কে অনেক পুলিশ পদত্যাগ করছেন। নিউইয়র্কের পুলিশ বিভাগের ক্রাইম ইউনিটের জনবল কমানো হয়েছে এবং তাদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনা হচ্ছে। যে কারণে নিউইয়র্কের পুলিশের মধ্যেও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। জীবনবাজি রেখে যারা এতদিন মানুষের জীবন রক্ষা করেছেন, তারা নিজেরাই এখন তাদের জীবন নিয়ে শঙ্কার মধ্যে পড়েছেন। নিউইয়র্ক সিটির প্রথম বাংলাদেশী ক্যাপ্টেন এবং বাফার প্রেসিডেন্ট কারান চৌধুরী এবং বাফার কোষাধ্যক্ষ ও পুলিশ অফিসার রাশিক মালিক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সতর্কভাবে চলাফেরা করা উচিত। তিনি বলেন, নিইউয়র্ক সিটিতে বেল রিফর্ম ক্রাইম বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ২০ জুন বেলা ১১টায় ইস্ট নিউইয়র্কের মিলফোর্ড স্ট্রিটে হাঁটছিলেন এক ব্যক্তি। আরেকজন বাড়ির সামনে গাড়ি ধোয়ার কাজ করছিলেন। হঠাৎ করে তাঁদের গুলি করে দুর্বৃত্তরা। দুজনের অবস্থা সংকটজনক। তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া ঘটনার আধা মাইল দূরে সড়কপথে দাঁড়ানো একজন গুলির শব্দ শুনেন এবং দেখেন তাঁর নিজের শরীর থেকে রক্ত ঝরছে।
১৯ জুন বিকেলে ইস্ট নিউইয়র্কে ২৭ বছর বয়সী একজন তরুণ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ওই দিন রাত সাড়ে তিনটার দিকে ব্রঙ্কসের ক্লিয়ারমন্ট পার্কের কাছে তিন নারীসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় নগরীর মেয়র বিল ডি ব্ল্যাসিও বলেন, সহিংসতা ও সংকট ব্যবস্থাপনায় আরো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি নগরীর পুলিশ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। সাদা পোশাকে পুলিশের টহল ও তল্লাশি থেকে এনওয়াইপিডিকে বাদ দেয়া হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্র সহিংসতা রোধে লোকবল নিয়োগ এবং কর্মসূচি পরিচালনার জন্য মেয়র ১০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট ঘোষণা করেছেন। জ্যামাইকা, কেনার্সি ও ক্রাউন হাইটসের মতো এলাকায় সহিংসতা বন্ধে প্রয়াস জোরদার করা হয়েছে।
শুধু মে মাসেই নগরীতে খুনের সংখ্যা ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্রæকলিনের বরো প্রেসিডেন্ট এরিক অ্যাডামস। এর মধ্যে সিটি কাউন্সিল পুলিশের বাজেট থেকে এক বিলিয়ন ডলার কমিয়ে অন্যান্য সামাজিক খাতে এ অর্থ ব্যয় করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এরিক অ্যাডামস বলেছেন, এ অর্থ সামনের দিকে ব্যয় করলে সংকট সামাল দেয়া সহজ হবে।