প্রচ্ছদ

ইমিগ্র্যান্টদের মধ্যে স্বস্তি

  |  ১১:০৭, আগস্ট ০৮, ২০২০
www.adarshabarta.com

মোঃ নাসির, নিউ জার্সি, আমেরিকা থেকে :

পাবলিক চার্জ রুল নিয়ে এত দিন শঙ্কা, ভয় ও উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, ইমিগ্র্যান্ট ও ইমিগ্র্যান্ট হওয়ার জন্য আবেদনকারীরা। যারা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী অভিবাসী হওয়ার আবেদন করেছেন কিংবা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারাও ছিলেন শঙ্কায়। কারণ সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এই রুল কার্যকর করা হয়েছিল। নাগরিক, গ্রিনকার্ড হোল্ডারসহ যারাই ইমিগ্র্যান্ট হতে চাইবেন, এই রুল সবার ক্ষেত্রে কার্যকর করতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত নাগরিক ও ইমিগ্র্যান্ট যারা হয়ে গেছেন, তারা পাবলিক চার্জ রুলে থাকা সুবিধা নিলে প্রভাব ফেলবে না বলে আদালত রায় দেন। আদালতের রায়ে ছিল এ দেশে যিনি আসতে চান কিংবা যারা স্থায়ী অভিবাসী হওয়ার জন্য স্ট্যাটাস অ্যাডজাস্ট করতে চান, তারা আবেদন করার সময় পাবলিক চার্জ সুবিধা নিয়েছেন কি না এ-সংক্রান্ত একটি ফরম পূরণ করতে হতো। সেখানে নাম, ঠিকানা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কোনো বিষয়ে দক্ষ কি না, সম্পদের হিসাবসহ সব তথ্য দিতে হতো। এতে করে ইউএসসিআইএসের কর্মকর্তারা বিবেচনা করতে পারতেন কে কে পাবলিক চার্জের সুবিধা নেওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন, কে কে পাবলিক চার্জ ফিউচারে নিতে পারেন ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বোঝা হতে পারেন। কিন্তু আপাতত পাবলিক চার্জের বিষয়টি কার্যকর হবে না। করোনা মহামারির কারণে ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট অব সাউদার্ন ডিস্ট্রিক নিউইয়র্কের বিচারক সারা দেশে পাবলিক চার্জ রুল কার্যকর করে আবেদন বিবেচনা করার বিষয়টি স্থগিত করে দিয়েছেন। এই আদেশের ফলে ইউএসসিআইএসের কর্মকর্তারা কারো আবেদন বিবেচনার সময় পাবলিক চার্জ রুলের বিষয়টি সেভাবে বিবেচনা করতে পারবেন না। তারা যাতে সেটি করতে না পারেন, সে জন্য তা স্থগিত করে দিয়েছেন। ফলে এত দিন যারা পাবলিক চার্জ নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় ছিলেন, তারা আপাতত স্বস্তি পেয়েছেন। বিচারক জর্জ ড্যানিয়েলস এই স্থগিতাদেশ দেন। তিনি হলেন সেই বিচারক, যিনি এর আগে প্রথম পাবলিক চার্জ রুল কার্যকরের বিষয়টির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন। পরে তার সেই নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিসহ অন্যান্য স্টেটে নিষেধাজ্ঞা দিলেও সরকার সেটি নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে যায়।
সুপ্রিম কোর্ট গ্রিনকার্ডধারী, নাগরিকসহ কারা কারা সুবিধা নিলে পাবলিক চার্জ হবে না, কারা কারা নিলে হবে-সেসব বিষয় উল্লেখ করে আদেশ দেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সেটি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। সেই হিসাবেই কাজ এগোচ্ছিল। এ জন্য ইউএসসিআইএস নতুন একটি ফরমও চালু করে। কিন্তু এরই মধ্যে শুরু হয়ে যায় কোভিড-১৯ প্যান্ডামিক। এ কারণে ইউএসসিআইএসের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্যান্ডামিকের কারণে এবং করোনা সংক্রমণ কিংবা অন্যান্য অসুস্থতার জন্য যদি কেউ কোভিড-১৯-এর চিকিৎসা বা এ-সংক্রান্ত সুবিধা নেয়, তাহলে তা পাবলিক চার্জ রুলে বিবেচনায় নেবে না। এ কারণে মানুষের মনে স্বস্তি ছিল না। যারা প্যান্ডামিকের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন সেবা নিচ্ছিলেন, তারা চিন্তা করছিলেন পাবলিক চার্জের সুবিধা নেওয়ার কারণে আটকে যেতে পারে তাদের গ্রিনকার্ড কিংবা সিটিজেনশিপ। তাই প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও অনেকে সুবিধা নিচ্ছিলেন না। ফলে অনেককে নানা কষ্টে সময় পার করতে হয়েছে।
করোনা মহামারি ও অন্যান্য সব দিক বিবেচনা করে নিউইয়র্ক সিটি, নিউইয়র্ক স্টেট ও কানেকটিকাট স্টেট পাবলিক চার্জ রুলের বিষয়টি যাতে মানুষের জরুরি সেবায় বাধা তৈরি না করে, সে জন্য তারা আদালতের শরণাপন্ন হয়। সেই হিসেবে ২৯ জুলাই বিচারক পাবলিক চার্জ রুল কার্যকর করার বিষয়টি স্থগিত করেন। ফলে ইউএসসিআইএস এখন আর পাবলিক চার্জ রুল কার্যকর করতে পারবে না। এই রায়ে মানুষের মনে শান্তি ও স্বস্তি ফিরে এসেছে।
এদিকে ইউএসসিআইএসও আপাতত বিষয়টি কার্যকর করছে না। নতুন আদেশের পর ট্রাম্প প্রশাসন যদি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল না করে, তাহলে এই স্থগিতাদেশ কার্যকর করতে কোনো সমস্যা নেই। যদি ট্রাম্প প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করে, তাহলে আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত দেবেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপিল করলেও এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
উল্লেখ্য, জানুয়ারি মাসে সুপ্রিম কোর্ট পাবলিক চার্জ রুল কার্যকর করার জন্য রায় দিলেও নিম্ন আদালতে বিষয়টি বিবেচনার জন্য আবার যাওয়ার সুযোগ রাখা হয়। এর ফলে নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন স্টেট এটি নিয়ে নিম্ন আদালতের শরণাপন্ন হয়। নিম্ন আদালত বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করেই পাবলিক চার্জ রুল স্থগিত করেন।
পাবলিক চার্জের রুলে বলা হয়েছিল, কোনো মানুষ যদি একনাগাড়ে ৩৬ মাস কোনো সরকারি সুবিধা নেন, তাহলে সেটি পাবলিক চার্জ হবে। কোন কোনটি পাবলিক চার্জ হবে, এ বিষয়েও বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। সেখানে স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য সহায়তা, নগদ অর্থ সহায়তা, হাউজিংসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফলে যারা এসব সুবিধা নিতেন, তারা পাবলিক চার্জের আওতায় পড়তেন।
যুক্তরাষ্ট্রে যারা আছেন বা যারা বিভিন্ন দেশ থেকে এ দেশে আসার জন্য ইমিগ্র্যান্ট ভিসার আবেদন করেছেন তাদেরকে এখানে আসার পর হেলথ ইন্স্যুরেন্স কী হবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত করার জন্য বলা হয়। এর পাশাপাশি বন্ড প্রদানেরও সুযোগ রাখা হয়। তবে পাবলিক চার্জ রুল কার্যকর করার বিষয়টি স্থগিত হওয়ায় এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থেকে যারা এ দেশে আসার জন্য ইমিগ্র্যান্ট ভিসার আবেদন করবেন, তাদের বিষয়টিও পাবলিক চার্জের আওতায় বিবেচনার সুযোগ থাকবে না। হেলথ ইন্স্যুরেন্স নেওয়া যে বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল, সেটি করা হবে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই খবর কমিউনিটি ও অভিবাসীদের মধ্যে স্বস্তি এনে দিলেও এটা সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে, প্রয়োজন ছাড়া কেউ যাতে সরকারি কোনো সুবিধা না নেন। কারণ একবার যেহেতু বিষয়টি নিয়ে অনেক কিছু হয়েছে, ভবিষ্যতেও যে এ নিয়ে কিছু হবে না, সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না।