প্রচ্ছদ

জীবনের কথা, পর্ব-৪৭

  |  ১৬:৫০, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২০
www.adarshabarta.com

রিলাক্স রেডিও অফিসের বাঁশঝাড়ের কথা

:: মো. রহমত আলী ::

ছবিটি দেখে মনে হতে পারে আমরা বাংলাদেশের কোন বাঁশ বাগানের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আসলে কিন্তু তা নয়। এটা হচ্ছে লন্ডনের রিলাক্স রেডিওর অফিস। সেখানে ‘কমিউনিটি আড্ডা’ নামক একটি অনুষ্ঠানে আমি এবং ইদানিংকালে আমার চলার পথে ঘনিষ্ট বন্ধু নাজমুল হুদা ভাই যোগ দিতে গিয়েছিলাম। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা কে এম আবু তাহের চৌধুরী। অনুষ্ঠান শেষে তাহের ভাই বললেন, আসুন সবাই মিলে আমরা একটা ছবি তুলি। আর এটি হচ্ছে সেই ছবি। অত্যন্ত সুন্দর এই ছবিটি ব্যাকগ্রাউন্ড নির্মাণ করার জন্য রিলাক্স রেডিও কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ।

লন্ডনে ২৪ ঘণ্টা সম্প্রচার করা হয় রিলাক্স রেডিও। শুধুমাত্র লন্ডনই নয়, ইন্টারনেটে বিশ্বব্যাপী রিলাক্সের অনুষ্ঠান শোনা যায়। এছাড়া যে কোনো স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপে- এমনটি কোনো কোনো ক্ষেত্রে টিভিতেও শোনা যায় রিলাক্সের অনুষ্ঠান। আইওএস ও অ্যান্ড্রয়েডে অ্যাপস ডাউনলোড করে নিলেই শোনা যায় এ রেডিওর অনুষ্ঠান। ‘বেঙ্গলি বিগেস্ট কনভারসেশন’ শ্লোগান নিয়ে যাত্রা শুরু হওয়া এই রেডিওটি হচ্ছে কমিউনিটি রেডিও। উপস্থাপকরা কথা বলেন অতিথিদের সাথে। তার সাথে রয়েছে কিছুটা বিনোদন ও প্রতি ঘন্টায় সংবাদ। তবে রিলাক্স ইন্টারনেটভিত্তিক প্রথম বাংলা রেডিও স্টেশন।

লন্ডনে ‘বেতার বাংলা’ নামে এএম ফ্রিকোয়েন্সিতে ২৪ ঘণ্টার আরেকটি বাংলা রেডিও স্টেশন কয়েক বছর থেকে চালু ছিল। এখানে অন্য রেডিও স্টেশন সানরাইজ রেডিও ২৪ ঘণ্টার একটি বাণিজ্যিক রেডিও স্টেশন। এটি প্রথম সম্প্রচার শুরু করে ১৯৮৯ সালের ৫ নভেম্বর থেকে। এটি এশিয়ার বৃহত্তম রেডিও স্টেশন এবং বিশ্বের একটি অন্যতম রেডিও স্টেশন। এই স্টেশনে বাংলা অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়ে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকেও তা প্রচারিত হয়ে থাকে ।এর আগে এবং স্পেকট্রাম রেডিও বাংলা অনুষ্ঠান প্রচার করতো।

তবে ব্রিটেন থেকে প্রচারিত বিবিসি রেডিও অসম্ভব জনপ্রিয় ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়। এ রেডিও এর অবদান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিবিসি রেডিও থেকে সর্বপ্রথম বাংলা সম্প্রচার শুরু ১৯৪১ সালে। নিরপেক্ষ অনুষ্ঠান তথা সংবাদ পরিবেশনের কারণে বাংলাদেশ ও ভারতের ১ কোটি ৩০ লক্ষ বাংলাভাষী মানুষের কাছে এটি একটি জনপ্রিয় নাম। বিবিসি বাংলা বিভাগের অনুষ্ঠান এফ এম, মিডিয়াম ওয়েভ ও শর্টওয়েভে সমগ্র বিশ্বে সম্প্রচারিত হয়। তা ছাড়া রেডিও, ইন্টারনেট, ইন্টারনেট রেডিও এবং ভিডিও এ সকল মাধ্যমেও বিবিসি বাংলা সম্প্রচারিত হয়।

এখান থেকে প্রচারিত বেতার বাংলা হচ্ছে লন্ডন-ভিত্তিক একটি ব্রিটিশ রেডিও স্টেশন যা যুক্তরাজ্যের বাঙ্গালীদের জন্য চালু করা হয়। এটি ২০০০ সালে চালু হয়। জুন ২০১০ সালে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করার জন্য এটি অফকমের পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ রেডিও সম্প্রচার লাইসেন্স পুরষ্কারে ভূষিত হয়। এরপর ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে এই স্টেশনটি ২৪/৭ অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু করে। স্টেশনটিতে খবর, সাম্প্রতিক বিষয়াবলী, সংগীত, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং আইনগত ও নাগরিক অধিকার নিয়ে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়।

সাধারণ রেডিও আজকাল খুব একটা দেখা যায় না। টেলিভিশন, কম্পিউটারের ছবি দেখার যুগে আজকাল মানুষ রেডিও খুব একটা শুনতে চায় না। নেহায়েত যাদের বাসায় পুরনো রেডিও আছে তাঁরা শখের বশে কখনো কখনো রেডিও শোনেন, তাও সন্ধ্যাবেলা। কিন্তু এফএম রেডিও কিন্তু আজকাল প্রায় সব মোবাইলেই আছে। ডিজিটাল স্মার্টফোন বা পুরনো বাটনওয়ালা মোবাইলে এফএম রেডিও শুনতে পাওয়া যায়, যেটা বেশ সহজলভ্য।

বিশ্বে একসময় অন্যতম জনপ্রিয় গণমাধ্যম ছিল এই রেডিও। বেতারের রয়েছে পৃথিবীর দুর্গম স্থানে পৌঁছানোর শক্তি। তবে তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রসারের ফলে সম্প্রচার জগতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে দেশে বেশকিছু বেসরকারি রেডিও সমপ্রচারে রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- রেডিও টুডে, রেডিও আমার, রেডিও ফুর্তি, এবিসি রেডিও, রেডিও স্বাধীন, ঢাকা এফএম, রেডিও ভূমি, পিপলস রেডিও, সিটি এফএম, এশিয়ান রেডিও, রেডিও আম্বার, রেডিও ধ্বনি, রেডিও নেক্সট, কালারস এফএম, রেডিও পদ্মা, রেডিও ক্যাপিটাল, জাগো রেডিও প্রভৃতি।
রেডিও আবিষ্কারের সঙ্গে অনেক বিজ্ঞানীর নাম জড়িয়ে থাকলেও রেডিওর আবিষ্কর্তা হিসেবে ইতালীয় বিজ্ঞানী গুয়েলমো মার্কনির নামই সর্বাগ্রে নেওয়া হয়। কারণ, বিংশ শতকে তিনিই প্রথম দূরের সংযোগকে বেতার তরঙ্গে জুড়েছিলেন। বাংলাদেশের বিজ্ঞানী স্যার জগদিশ চন্দ্র বসুর নামও এর আবিস্কারের প্রথম দিকে একজন বলে প্রচলিত আছে।

সাধারণ রেডিওতে কথাগুলো প্রথমে রেকর্ড করা হয়। এরপর তা তরঙ্গের আকারে বাতাসে ছড়িয়ে দেয়া হয়। রেডিওর এন্টেনা তখন সেটা ধরে ফেলে, এরপর আবার সেই তরঙ্গকে শব্দ তরঙ্গে রূপান্তর করে, ফলে তা শুনতে পাওয়া যায়। এফএম রেডিও হল ফ্রিকোয়েন্সি মলিকিউশন, অর্থাৎ সেকেন্ডে বেশ কয়েকবার তরঙ্গ ঘটে। সাধারণ রেডিও হল অ্যামপ্রিচুড মলিকিউশন, যা সম্প্রচার কেন্দ্রের বেতারতরঙ্গের সাথে জড়িত। এফএম রেডিওর তরঙ্গ সেকেন্ডে বেশ কয়েকবার হওয়াতে শব্দ শুনা যায়। সাধারণ রেডিওতে এন্টেনা যদি ঠিকমতো তরঙ্গ ধরতে না পারে, তখন শব্দ পরিস্কার শোনা যায় না। আবার এফএম রেডিওতে দেখা যায়, সম্প্রচার কেন্দ্র থেকে খুব বেশি দূরে এগুলোর শব্দ শোনা যায় না, বা রেডিওর তরঙ্গ যদি এফএম রেডিওর তরঙ্গের বাধা হয়ে দাঁড়ায় তখনো শব্দ ভালোমত শোনা যায় না।

২০১১ সালে ১৩ ফেব্রুয়ারিকে বিশ্ব রেডিও দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো। এই দিনটিকে বাছা হয়েছিল কারণ, ১৯৪৬ সালে এই দিনেই রাষ্ট্রপুঞ্জ রেডিও প্রথম আন্তর্জাতিক সম্প্রচার করেছিল। স্পেনের রেডিও অ্যাকাডেমি ২০১০ সালে প্রথম ১৩ ফেব্রুয়ারিকে বিশ্ব রেডিও দিবস হিসেবে উদযাপন করার পরিকল্পনা করেছিল। তারপর ইউনেস্কো বিশ্ব রেডিও দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশে বিশ্ব বেতার দিবস পালিত হচ্ছে, যেখানে বাংলাদেশ বেতার, প্রাইভেট এফএম এবং কমিউনিটি রেডিও অংশগ্রহণ করছে। বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে রেডিও স্টেশনগুলো পালন করছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। (চলবে)।

লেখক: যুক্তরাজ্য প্রবাসী প্রবীণ সাংবাদিক ও দর্পণ ম্যাগাজিন সম্পাদক। ইমেইল: rahmatali2056@gmail.com