প্রচ্ছদ

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আদৌ যোগ্যতার প্রয়োজন আছে কী ?

  |  ১৯:০০, অক্টোবর ০৬, ২০২০
www.adarshabarta.com

:: কাজী শাহেদ বিন জাফর ::

আমাদের বাংলাদেশে বর্তমান শিক্ষার হার প্রায় ৭৩.৯%। বাংলা ভাষায় কথা বলেন ৯৫%। ৫% লোকে কথা বলেন বিভিন্ন ভাষায়। প্রায় ১৮ কোটি জনবসতিপূর্ণ এই দেশে আজো অব্দি হাল আমলে প্রনিত গণতন্ত্রের নিয়মে চালিত হয়ে আসছে। স্থানীয় সরকার অর্থাৎ ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচন হতে জাতীয় নির্বাচন। প্রার্থীদের সেচ্ছায় অবাধে অংশ গ্রহণ বা মনোনয়নের মাধ্যমে। যেথায় শিক্ষাগত যোগ্যতার বাচ বিচারের কোনো বালাই নেই।

আমি এনিয়ে একটি কথা বলতে চাই। এ আইন যখন চালু করে ছিল, তখন হাজারে ১/২ জন যার যার ভাষায় লিখতে বা পড়তে পারতো কী না এতে সন্দেহ রয়েছে। আর সে অনুসারে অবাধ অংশ গ্রহণের বেলায় শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো প্রয়োজন বোধ ছিলই না। তাই যার যার পরিবার, গোত্র, সমাজ, রাষ্ট্র ও দেশ শাসন করেছেন যার যার মতো করে এবং করছেন। কিন্তু আজকের দুনিয়া গুহার সেই গহীন অরণ্য জীবন হতে ক্রমান্বয়ে সভ্যতা ও উন্নয়নের সিঁড়ি আরোহন করে যান্ত্রিক যুগে পা দিয়েছে। আজকের বৈজ্ঞানিক জীবন ব্যবস্থয় পরিবর্তন আসছে। বাড়ছে বুদ্ধির বিকাশ। নিয়েছে আদিপত্য গ্রহ হতে গ্রহান্তরে। অথচ আমাদের নির্বাচনের মাধ্যমে নেতা নির্ধারনের রেওয়াজটা পরে রইল সেই হালআমলের ধারার নিয়মে। এই রীতিকে একটু ঘষা মাজার ধারাপাতে যোগ্যতার লাগামে কী ধরা যায় না?

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুশীল সমাজের জিজ্ঞাসা! আপনার শাসন আমলে, স্থানীয় সরকার অর্থাৎ ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভাকে শক্তিশালি করনের নিমিত্তে অনেক দায় দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। স্থানীয়ভাবে ঘটমান বিষয়াবলি যা’ সালিশি যোগ্য সাধারণ জট এবং ঝামেলা, বিবাদ ও বিরোধ নিরসনের দায়িত্ব তথা বিচার করে রায় দানের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার অধিকার দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ সরকার, স্থানীয় সরকারকে বিভিন্ন পরতে পরতে গতিশীল ও শক্তিশালি করনের নিমিত্তে কোনো প্রচেষ্টারই অন্ত নেই। আমি সরকারের এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু এই বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করার মতো ক’জন চেয়ারম্যান সাহেবের আছে। তা’ জানার বিষয়। মুর্খদের হাতে বিচারক দায় দায়ীত্ব অর্পণ করা যায় কীভাবে? বিষয়টি গনতন্ত্রের দোহাই তুলে উড়িয়ে দিলেও, তখনকার গনতন্ত্র আর আজকের গনতন্ত্রের সাথে মিলিয়ে দেখার জন্য অনুরোধ রইল।

এদিক দিয়ে বিবেচনা করলে, সুশীল সমাজ মনে করে, অন্তত একজন চেয়ারম্যান সাহেবের বেলায় শিক্ষাগত যোগ্যতায়, অন্তত সর্বোনিম্নে হলেও এইচএসসি ও সদস্য পদে এস এস সি সমমানের পাস সনদপত্রের অধিকারি হওয়া উচিত বলে মনে করেন সুশিল সমাজ।

আমাদের দেশে আজ শিক্ষারহার প্রায় ৭৩.৯%। আগামীতে এই দেশের জাতীয় ও স্থানীয় সরকার পরিচালিত হবে, কম হলেও মাধ্যমিক সনদপত্রের অধিকারি ছাড়া। এটা আজকের বিজ্ঞান প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতার এই যুগে কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায়না। জনপ্রতিনিধিদের জন্য একটা গ্রহণ যোগ্য সনদ পত্রের আদলে এনে নির্বাচিত করলে স্থানীয় সরকার আরো শক্তিশালি হবে। সেই সাথে স্থানীয় অধিবাসীর জন্যে ন্যায় ও সুবিচার পাওয়ার পথ আরোও গতিশীল হবে বলে আমার বিশ্বাস।
এ বিষয়টি যোগ্যতার আলোকে বিবেচনায় নিলে গণতন্ত্রের উপর কোনো প্রকার প্রভাব পড়বে বলে আমার মনে হয় না।

তাই ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা অর্থাৎ স্থানীয় সরকারকে ঢেলে সাজানোর ক্ষেত্রে একান্ত প্রয়োজন অন্তত কম করে হলেও সর্বোনিম্নে মাধ্যমিক পাস সনদপত্রের অধিকারি হওয়ার প্রয়োজন। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সহ নীতি নির্ধারকদের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

লেখক: কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক