অধ্যাপক হারুন রশীদ-এর কবিতা ‘মানবতন্ত্রের নতুন বয়ান’
মানবতন্ত্রের নতুন বয়ান
অধ্যাপক হারুন রশীদ
আজ আমি তোমাকে কোনো
কবিতা শোনাতে চাই না,
তোমাকে জানাতে চাই
মানব প্রেমের সরল পাঠ,
বলতে চাই পুরুষতন্ত্রের অধীনস্থ
পূঁতিগন্ধময় পুরনো গ্রহের
দুর্গন্ধযুক্ত চারপেয়ে যন্তুর কথা;
নতুন করে মানবতন্ত্রের সুর তোল
মূল উৎপাটন কর পুরুষতন্ত্রের-
যার দৃশ্যমান রূপ ধর্ষকতন্ত্র
যার পোশাকি নাম যৌন নিপীড়ন,
উদঘাটন কর পুরুষতন্ত্রের খোলস
পুঁজিতন্ত্রের পণ্য-ফেটিশিজমের
(পণ্য-রতি, বস্তুকাম) অথবা
যৌন-ফেটিশিজমের নানা রূপ-
ছুড়ে ফেল সে সব-
পর্ণগ্রাফি, ফ্যাশন ম্যাগাজিন আর
বিজ্ঞাপনে উপস্থাপিত নারীদেহের
বাহারি কামাসক্তিপ্রবণ দৃশ্যায়ন;
আঘাত হান তথাকথিত পৌরুষত্বে-
ধর্ষকাম, ধর্ষকামীতা অথবা
ধর্ষকতন্ত্র যার আসল পরিচয়,
চূর্ণবিচূর্ণ কর ধর্ষকামীর
পাহারাদার-পৃষ্ঠপোষক
আইনি ব্যবস্থা ও ব্যবস্থাপনা,
ক্ষত-বিক্ষত কর
ধর্ষকামীর অনিয়ন্ত্রিত শরীর,
উচ্ছেদ কর ধর্ষকতান্ত্রিক সমাজদেহ;
নতুন করে গড়ে তোল
মানব প্রেমের কাব্যগাথা,
পল্লবিত কর প্রেমিকের হৃদয়কুঞ্জ
নিঃশংকচিত্ত হোক প্রেমিকার ভূবন,
দেহ-মন-প্রাণে সঞ্চারিত হোক
নতুন ঝর্ণাধারার জলপ্রপাত;
মানব প্রেমের বিশুদ্ধতায় পূর্ণ
স্বর্গীয় সুধা পানে সিক্ত কর
প্রেমিক-প্রেমিকার নতুন ভূবন,
শরীরের প্রতি শিরা-উপশিরায়,
ধ্বমনীতে, রক্ত সঞ্চালনের
প্রতি পরতে পরতে
প্রতিবাদী সংবেদনশীলতার ঢেউ তোল;
ছুঁড়ে ফেল তথাকথিত পুরুষত্ব
উত্তমরূপে কর্ষণ কর মানবত্ব,
খান খান করে ভেঙ ফেল
পুরুষতন্ত্রের লিঙ্গাধিপত্যের কপাট,
ছিন্নভিন্ন কর পুরুষতন্ত্রের তৈরিকৃত
লিঙ্গবৈষম্যের মূল্যবোধের দেয়াল,
পুরুষতন্ত্রের সাথে নারীতন্ত্রের
মহামিলন ঘটুক
প্রেমকাননে বিজয় পতাকা উড়ুক
উদ্বোধন ঘটুক মানবতন্রের।
(লেখক: দর্শন বিভাগ চেয়ারম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।)