অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে সাঁড়াশি অভিযান নির্বাচনের আগে
মোঃ নাসির, নিউ জার্সি, আমেরিকা থেকে :
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে অবৈধ ইমিগ্রান্টদের বিরুদ্ধে ষাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি। অভিযানে মাত্র ১৮ ঘণ্টায় তিন শতাধিক অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পর থেকেই অবৈধ ইমিগ্রান্টদের উপর নানা ধরনের খড়্গ নেমে আসে। যদিও তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে। তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করার পর হোমল্যান্ড সিকিউরিটিতে জনবল বাড়ান এবং সীমান্তে বর্ডার নির্মাণ করেন। সেই সাথে ইমিগ্রেশনবিরোধী বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করেন। ট্রাম্পের ইমিগ্রেশন বিরোধী আইনের বিরোধীতা করেও কোনো লাভ হয়নি। বিশেষ করে ডেমোক্র্যাট অধ্যুষিত স্টেটের মেয়ররা ইমিগ্রেশনের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের বিপরীতে অবস্থান নেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। প্রতিনিয়তই হোমল্যান্ড সিকিউরিটির লোকজন অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের ধরতে তাদের বাসায় এবং কর্মস্থলে হানা দেয়। এদের মধ্যে যাদের ক্রিমিনাল রেকর্ড রয়েছে তাদের সরাসরি ডিপোর্ট করা হচ্ছে।
অন্যদিকে সীমান্ত এলাকায় জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করা হয়েছে। যাতে করে কেউ অবৈধ পথে আমেরিকায় প্রবেশ করতে না পারে। আগে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ইমিগ্রেশন জজের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ ছিল, এখন তাও নেই। ইমিগ্রেশন জজ যে রায় দেবেন তাই গ্রহণ করতে হবে। এই ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে যারা সর্বস্ব হারিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমেরিকায় প্রবেশ করছেন তাদের সীমান্ত এলাকার ডিপোর্টেশন সেন্টারে রাখা হচ্ছে এবং অল্প দিনের মধ্যেই বিশেষ ফ্লাইটে নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনে ঠিক পূর্ব মুহূর্তে নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন স্টেটে আবারী অবৈধ ইমিগ্রান্টদের ধরতে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ষাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে। গত ১৩ অক্টোবর থেকে এই ধরপাকড় শুরু হয়েছে। গত আঠার ঘণ্টায় হোমল্যান্ড সিকিউরিটির লোকজন প্রায় ৩০০ অবৈধ ইমিগ্রান্টকে গ্রেফতার করেছে। খোদ নিউইয়র্কেই গ্রেফতার করা হয় প্রায় ৫০জনকে। এ ছাড়াও বিভিন্ন কলেজ- বশ্ববিদ্যালয় থেকেও অবৈধ ছাত্রছাত্রীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।
অবৈধদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু হয় গত ১৩ অক্টোবর বিকেলে। এই দিন টেক্সাস থেকে ১২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকজন এসেছে মেক্সিকো, গুয়াতেমালা, এলসালভাদর এবং হন্ডুরাস থেকে। এর চার ঘণ্টা পরে পরিচালিত অভিযানে ১৩জনকে গ্রেফতার করা হয়। এরা সবাই মেক্সিকো থেকে আমেরিকায় আসেন। এরা যে অ্যাপার্টমেন্টে ছিলেন সেখানে একজন আমেরিকান নাগরিকও ছিলেন। তাদের সাথে তাকেও গ্রেফতার করা হয়। সীমান্ত পথে ফ্রিজিং ট্রাকে করে আমেরিকায় আসার পথে গ্রেফতার করা হয় ৮৪ জন অবৈধ ইমিগ্রান্টকে। তারা মেক্সিকো, গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস এবং গুয়াতেমালার নাগরিক। ১৪ অক্টোবর সকালে আরেক অভিযানে ৭৪ জন অবৈধ ইমিগ্রান্টকে গ্রেফতার করা হয়। এদের সবাইকে সীমান্তে গ্রেফতার করা হয়। এদের অধিকাংশই মেক্সিকো, এল সালভাদর, হন্ডুরাস, গুয়াতেমালা এবং পেরু থেকে আসছিলেন। গ্রেফতারের পর তাদের সবাইকে সীমান্তবর্তী ডিপোর্টেশন সেন্টাগুলোতে রাখা হয়েছে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটির তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে তারা ১ লাখ ৪৩ হাজার অবৈধ ইমিগ্রান্টকে গ্রেফতার করেছে এবং ২ লাখ ৭৬ হাজারকে ডিপোর্ট করা হয়েছে। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সাল থেকে ২০১৯ সালে ১০% কম গ্রেফতার করা হয়েছে। ২০১৯ সালে গ্রেফতারের হার ৬৮% এবং ক্রিমিনাল গ্রেফতারের হার ৮৬%।