প্রচ্ছদ

বাতিল করল আদালত ট্রাম্পের এইচ-১ বি ভিসা বিধি

  |  ১৬:০০, ডিসেম্বর ০৩, ২০২০
www.adarshabarta.com

মোঃ নাসির, নিউ জার্সি (আমেরিকা) প্রতিনিধি:

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ফেডারেল বিচারক এইচ-১ বি ভিসা সীমিত করার লক্ষ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপ করা বিধিকে বেআইনি ঘোষণা করেছে। এর ফলে উচ্চদক্ষতাসম্পন্ন অভিবাসনকে সীমাবদ্ধ করার ট্রাম্প প্রশাসনের প্রচেষ্টা বড় ধরনের ধাক্কা খেল।

করোনার অজুহাতে এবং আমেরিকানদের স্বার্থ সংরক্ষণের দোহাই দিয়ে গত অক্টোবরে ট্রাম্প প্রশাসন এইচ-১ বি ভিসা সীমিত করার লক্ষ্যে দুটি বিধি প্রকাশ করে। এই বিধি মোতাবেক উচ্চদক্ষতাসম্পন্ন বিদেশিদের যুক্তরাষ্ট্রে আসার কোটা একেবারেই কমিয়ে দিয়েছিলেন ট্রাম্প।

মার্কিন ফেডারেল জজ জেফ্রি এস হোয়াইট ১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার এই রায় দেন। রায়ে উল্লেখ করা হয়, আদালত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে বাদীপক্ষ যে যুক্তি ও তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেছে, তাতে রায় তাদের পক্ষে যায়। এ ক্ষেত্রে আদালত মনে করে, এই বিধিবিধান আরোপের মাধ্যমে বাদীর স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং বিবাদী আইন লঙ্ঘন করেছেন। বিধি আরোপের বিষয়ে স্বচ্ছ প্রক্রিয়াও অনুসরণ করা হয়নি।

মার্কিন চেম্বার অব কমার্সের নেতৃত্বাধীন মামলার বাদীপক্ষ (কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়) আদালতে নানা তথ্য-প্রমাণ হাজির করে বলেছে, ট্রাম্প প্রশাসন বিধিনিষেধ আরোপের সময় ‘ভালো কারণে’ এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করলেও আসলে তা খারাপ হয়েছে। এতে হিতে বিপরীত হয়েছে। বিবাদী (ট্রাম্প প্রশাসন) পক্ষ বিধিনিষেধ আরোপের পক্ষে যুক্তিসংগত কারণ এবং এগুলোতে যে ‘ভালো কারণ’ রয়েছে, তা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।

আদালতের রায়ে উল্লেখ করা হয়, এইচ-১ বি ভিসা নীতি সংকুচিত ও কঠোর করতে যেসব কারণ প্রদর্শন করা হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী জনমত যাচাই করা হয়নি। এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরসহ বৃহৎ সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে পরিচালিত কলকারখানার জন্য যে ধরনের কর্মকর্তা/প্রকৌশলী দরকার, তা যুক্তরাষ্ট্রে খুব কম রয়েছেন। এর ফলে বিদেশ থেকে নিয়োগের বিকল্প নেই। এমন যুক্তির সমর্থনে প্রয়োজনীয় বিবরণ-প্রমাণপত্র দাখিল করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবীরা। দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীর অভাবে কীভাবে লোকসানের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে করপোরেশনগুলো, সেই তথ্যও সবিস্তারে উপস্থাপন করা হয় আদালতে। আদালতের মন্তব্যে আরও প্রকাশ পেয়েছে, করোনার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ার অজুহাতও সঠিক নয়।

মামলার বাদী ‘দ্য ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ম্যানুফ্যাকচারার্সের আইনজীবীরা আদালতে জানান, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে কলকারখানায় উৎপাদন পুরোদমে শুরুর বিকল্প নেই। এ অবস্থায় যদি দক্ষ কর্মীর সংকট অব্যাহত থাকে, তাহলে উৎপাদন ব্যাহত হবে। ইতিমধ্যেই তেমন নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এই সেক্টরে, যার পরিণতি গোটা জনগোষ্ঠীকে ভোগ করতে হচ্ছে।

এই রুলিংয়ের পরিপ্রেক্ষিতে গত এপ্রিলে ‘বাই আমেরিকান, হায়ার আমেরিকান’ স্লোগানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জারি করা নির্বাহী আদেশ স্থগিত হয়ে গেল। ওই আদেশের ফলে এইচ-১ বি, এইচ-১ বি ওয়ান এবং ই-থ্রি ভিসার ওপর সকল বিধি বাতিল হলো। এসব ভিসায় সাধারণত প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পে বিদেশি দক্ষ শ্রমিক-কর্মচারীরা অস্থায়ী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। আদালতের এ রায় আগামী ৭ ডিসেম্বর সোমবার থেকেই কার্যকর হবে বলে আইনজীবীরা উল্লেখ করেছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রযুক্তি, প্রকৌশল, ওষুধসহ বিভিন্ন খাতে প্রতিবছর ৮৫ হাজার এইচ-১ বি ভিসা দেয়। সাধারণত তারা তিন বছরের জন্য এই ভিসা দিয়ে থাকে, যা নবায়ণযোগ্য।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬ লাখ এইচ-১ বি ভিসাধারীর বেশির ভাগই ভারত ও চীন থেকে আসা।

সব ধরনের অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিস্তৃত কর্মসূচির আওতায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে এইচ-১ বি বিধি ঘোষণা করা হয়। এর আগে গত জুনে ট্রাম্প বছরের শেষ পর্যন্ত সাময়িকভাবে এইচ-১ বি প্রোগ্রাম স্থগিত করার একটি আদেশ জারি করেছিলেন।