অধ্যাপক ডঃ হারুন রশীদ-এর কবিতা “বন্ধুত্বের শোকগাথা”
বন্ধুত্বের শোকগাথা
অধ্যাপক ডঃ হারুন রশীদ
বন্ধুবর আবু জামিল জীবনের স্মৃতির প্রতি উৎসর্গীকৃত
আজ কোনো কবিতা লিখতে চাই না
শুধু শোনাতে চাই
বন্ধুত্বের অমর শোকগাথা-
নির্বাক নিস্তব্ধ নিথর আমি
স্তম্ভিত বিস্মিত হতভম্ভ
কিংকর্তব্যবিমূঢ় দিশাহীন দিশেহারা;
এতসব শব্দগুচ্ছ দিয়েও
বোঝাতে পারছি না
হৃদয়ের অভ্যন্তরস্থ ক্ষরণ,
অস্ফুট স্বরে যন্ত্রণাক্লিষ্ট আবেগে
শুধু ব্যাক্ত করতে চাই
বন্ধুত্বের অসামান্য শোকগাথা।
আজ আমি অনেকাংশেই
নিষ্প্রাণ জড় পদার্থের সমষ্টি
বাকরুদ্ধ আমার,
ভাষাহীনের ভাষা খুঁজে ফিরি
ক্লান্ত অবসাদগ্রস্ত শূণ্যতায়
ইচ্ছে জাগে মনে, কিছু ব্যক্ত করি-
কিন্তু ব্যার্থতার গ্লানিতে
ভারাক্রান্ত হৃদয়ে
সবই যেন অব্যক্ত থেকে যায়।
পড়ে থাকে শুধু
নিরব-নিথর-পাথুরে মন,
যান্ত্রিক দেহের অভ্যন্তরে
আধো ঘুম আধো জাগরণে,
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে
নিজেকে হারাতে চাই
বন্ধুর হৃদয়ের গভীরে।
প্রত্যাশা জাগে মনে
এই বুঝি বন্ধু আমার জেগে ওঠে
যেন দেখতে পায়-
আমি ঠিক তার পাশেই
সারাক্ষণ সারাবেলা।
বন্ধু তোমার কবিতার মেঘনা
যেমনটা সাড়া দেয় তোমার ডাকে
অভিমানী তুমি, সাড়া দিলে না
তেমনটা বন্ধুত্বের আহবানে
ফিরিয়ে দিলে আমাকে,
বুক ভরা চাপা কষ্ট আর
দিন-রাতের প্রতীক্ষার প্রহর শেষে
অবশেষে তুমি স্থানান্তরিত হলে
অজানা-অচেনা নিরুদ্দেশের পানে।
প্রকৃতির সৃষ্টিশীল সত্তা তুমি
বেড়ে উঠলে প্রকৃতির কোলে
কত না আদরে আপ্যায়নে,
অথচ একি নির্মম নিষ্ঠুর আচরণ
সেই একই প্রকৃতির-
বন্ধুত্বের সকল অনুনয়-বিনয়
আর আবেদন-নিবেদনে
কোনো রকম সাড়া না দিয়ে-
অবধারিত যান্ত্রিক নিয়মে
বন্ধুত্বের বন্ধনের তার ছিড়ে
সব স্বপ্ন আর প্রতীক্ষার মূহুর্তগুলোতে
কষ্টের পেড়েক ঠুকে দিল।
আজ আমি শোকে মুহ্যমান
আগামীকাল কিছুটা তা হ্রাস পাবে
পরশু কিছুটা সহ্য হবে,
শোকের আয়ু বড়জোর কয়েক দিন
কিন্তু স্মৃতির আয়ু টিকে থাকে
যুগ যুগ ধরে অন্তহীনভাবে-
বন্ধু তোমার সবটুকু স্মৃতি
প্রোথিত থাকবে হৃদয়ের গভীরে,
আমার এ শোকগাথা হয়ে উঠবে
বন্ধুত্বের অটুট বন্ধনের
অমর স্মৃতিগাথা।