আপনি জানেন কি “পোলিও মুক্ত বাংলাদেশ” কার অবদানে ?
:: আবু সালেহ আহমদ ::
পোলিও একটি মারাত্মক সংক্রমণ ভাইরাস। ইহা এক শিশু থেকে অন্য শিশুর মধ্যে খুব দ্রুত ছড়ায়। এই ভাইরাস রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশুর শরীর অঙ্গ বিকল হয়ে যায়।
২ থেকে ৬ দিন শিশুর মাথা ব্যাথা, শিশুর হাত অথবা পা অবশ হয়ে যাওয়া, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, জ্বর, শিশু ঠিকমতো দাঁড়াতে চায় না আবার দাঁড়া করাতে চাইলে শিশু কান্নাকাটি করে এবং ঠিকমতো নাড়াচড়া করতে পারে না, শিশুর আক্রান্ত অঙ্গ ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে ইত্যাদি।
৮০/৯০ দশকে অজস্র শিশু এই রোগে আক্রন্ত হওয়ার উদাহরণ রয়েছে বাংলাদেশে।
যাদের জন্ম দরিদ্র পরিবারে হয়েছে তাদের অনেকেই পঙ্গুত্ববরণ করে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আবার যাদের জন্ম সচ্ছল পরিবারে তারা জীবন ধারণের ভালো সুবিধা পেলেও মানসিক যন্ত্রণায় পার করছেন সারাজীবন।
বাংলাদেশে ১৯৭০ এবং ৯০ ’র দশকে পোলিও আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় কয়েক হাজার সেই প্রেক্ষাপটে ১৯৭৯ সাল থেকে জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিও চালু হয়। নব্বইয়ের দশকে পোলিও নির্মূলে সফলতা আসতে থাকে। বাংলাদেশে যদিও ২০০৭ সাল থেকে কোন পোলিও রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়নি, কিন্তু ভারতে সেটির অস্তিত্ব থাকার কারণে বাংলাদেশকে পোলিও মুক্ত ঘোষণা করেনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অবশেষে দুবছর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এগারোটি দেশকে পোলিও মুক্ত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করেছে।
আপনি জানেন কি?
এই সফলতার পিছনে রয়েছে যাদের অবদান তারা হচ্ছেন ভ্যাকসিন হিরো স্বাস্থ্য সহকারী। তাদের কারণেই আজ আমরা বিশ্বের নন্দিত ও সন্মানিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে পোলিও মুক্ত ঘোষণার মাধ্যমে বিশ্বের ৮০ শতাংশ মানুষ এখন পোলিও মুক্ত এলাকায় বসবাস করছে। পোলিও নির্মূলে ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের সফলতা এসেছে বেশ দ্রুতগতিতে।
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের মানুষকে পোলিও রোগের সম্পর্কে অনুধাবন করাতে মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মীদের মারাত্বক বেগ পেতে হয়েছে। একটা সময় ছিলও যখন মানুষ তার সন্তানকে টিকা খাওয়াতে চাইতো না। স্বাস্থ্যসহকারীরা (যারা গ্রামে গ্রাম্য ডাক্তার বা স্বাস্থ্য কর্মী হিসেবে চিনে তারা) বাড়ি বাড়ি ঘুরে শিশুর মা বাবাকে বুঝিয়ে টিকা দিয়ে এই মারাত্মক সংক্রমণ ভাইরাস দূর করেছেন।সাবেক স্বাস্থ্য সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিন জানিয়েছিলেন, পোলিও মুক্ত ঘোষণা করা হলেও পোলিও’র বিরুদ্ধে কার্যক্রম বন্ধ হবে না।
স্বাস্থ্য সংস্থা অনুসারে- এখন যদি পোলিওর টিকা দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে এক যুগের মধ্যেই পোলিও আক্রান্তদের সংখ্যা বেড়ে প্রতি বছর ২,০০,০০০ জনে পৌঁছে যাবে। ফলে এক বছর পোলিওর টিকা না দেয়া বেশ ভয়াবহ প্রভাব এনে দিতে পারে। এতদিন ধরে যে কাজ করে এসেছে মানুষ তার সবটুকুকে ব্যর্থ করে দিতে কেবল একটি বছরই যথেষ্ট। তাই পোলিও সংক্রমণ কমিয়ে ফেলা বা বন্ধ করে দেয়াটাই মূল উদ্দেশ্য নয়, পোলিওকে একেবারেই পৃথিবী থেকে বিদায় করতে হলে নিয়মিত টিকা নেয়াটাও দরকার। তাতে করে পোলিও নামক প্রকোপটি আমাদের পৃথিবী থেকে একেবারে বিদায় না নিলেও নতুন করে এর প্রভাব পরবেনা।
স্বাস্থ্য সহকারীদের কার্যক্রমের কারণেই বাংলাদেশের টিকাদান আজ বিশ্বে রোডমডেল। অথচ তারা আজ অবহেলিত। কাজের সম্মানটুকু তারা পাননা। কর্তৃপক্ষ দাবী বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কথা দিয়েও কথা রাখছেন না। তাই দাবী আদায় নিয়ে তারা অবরোধ পালন করছেন। বিজ্ঞ ও সম্মানিত ব্যক্তিগণ বলছেন, তাদের দাবী ন্যায্য। আমরা আশা করি মা ও শিশু সুরক্ষার কথা চিন্তা করে কর্তৃপক্ষ দ্রুত দাবি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবেন।
লেখক: বহু গ্রন্থ প্রণেতা ও লোক গবেষক।