প্রচ্ছদ

ঘোর অন্ধকারে আলোর ঝলক: করোনা ভ্যাকসিন আবিস্কার এবং প্রয়োগ

  |  ১১:৩২, ডিসেম্বর ১৪, ২০২০
www.adarshabarta.com

:: মোঃ নাসির ::

আমি আশাবাদী হতে চাই। আশা মানুষকে উজ্জীবিত রাখে। বাঁচিয়ে রাখে। আশা মানুষকে প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে শত্রু এবং প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি জোগায়। তাই আমাদের প্রার্থনা, ফাইজার, মডার্না এবং অন্যান্য ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ও দেশের ঘোষণা সত্য হোক। মানুষ বাঁচুক। সভ্যতা রক্ষা পাক। মানুষের জয় হোক। বিজ্ঞানের জয় হোক। আমরা বাঁচতে চাই। হাসতে চাই। কোলাহলে জীবন খুঁজে পেতে চাই। মৃত্যুকে পরাজিত করে জীবনের গান গাইতে চাই।বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের তাণ্ডব শুরু হয়েছে ২০১৯-এর শেষ ভাগে,২০২০ সালের প্রথম থেকে আজ অবদি ত্রর প্রকোপ বেশী ।যার ঘাতক ছোবলে লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। চারদিকে মৃত্যু আর অসহায় মানুষের বুকভাঙা হাহাকার। এর বাইরে কিছুতেই মন বসানো সম্ভব হয় না কিছুতেই। তার ওপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকার সব অর্জন, গৌরব, অহংকার, গণতন্ত্র আটলান্টিকে ডুবিয়ে দেওয়ার খেয়াল-বাসনা কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষকেই নয়, বিশ্বজুড়েই এক ভয়ংকর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা থেকে কিছুতেই মন সরানো যায় না। করোনাভাইরাস আর আমেরিকার চলমান সংকট এমনভাবে মনের ওপর চেপে বসে আছে, মনে হয় পৃথিবীতে আর কিছুই যেন উদ্বেগের নেই, ভাবনার নেই, আনন্দের নেই।

তবু জীবন গতিময়। সেই গতি সম্মুখপানে ধাবমান। এত মৃত্যু, এত দুঃখ, এত বিষণ্নতা, এত বিলাপ, তার পরও বাঁচার আশা নিয়ে মানুষ উপলক্ষ খুঁজে বেড়ায়। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘মৃত্যুতে মানুষ আনন্দ খুঁজে বেড়ায়।’ জীবন তো কেবল দুঃখই দেয় না। জীবনের আবরণে মৃত্যুকে ঢেকে রেখে মানুষ ভবিষ্যতের দিকে তাকায়। আলোর পানে চেয়ে থাকে। মানুষ রাত পাড়ি দেয় ভোরের আশায়। করোনার এই বিপন্ন সময়ে অসহায় মানুষ সেই প্রত্যাশিত আলো, সেই ভোর দেখতে পাচ্ছে করোনা ভ্যাকসিনের মধ্যে। আবার অন্ধকার ভেদ করে আলো ফুটবে এই ভ্যাকসিন প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে! মানুষের হতাশা তাড়ানিয়া ভ্যাকসিন। আবার বিজ্ঞানের বিজয় পতাকা উড়বে। উচ্চারিত হবে সেই অমর বাণী : ‘সবার উপরে মানুষ সত্য…’।

বিজ্ঞানের সাফল্য প্রমাণ করে-মানুষ হারে না। মানুষ মাঝেমধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগে পড়ে। বহু বিপন্ন সময় পাড়ি দেয়। অন্ধকারপ্রেমী কিছু কিছু মানুষও মাঝেমধ্যে মানুষের আলো হরণ করে নিতে উদ্যত হয়। মানুষের মৃত্যুর কারণও হয়। মানুষের কল্যাণে অসুখী সেই সব মানুষের সব বাধা, সব অশুভ তৎপরতা বিফল করে দিয়ে সত্য ও সভ্যতা এগিয়ে চলে। তাই তো মৃত্যু মহাসত্য জেনেও জীবনের পক্ষেই বিজ্ঞান দাঁড়ায়। এবং নির্বোধ অর্বাচীনেরা যতই সত্যকে পিছু টেনে রাখার চেষ্টা চালাক, বিজ্ঞানের জয়যাত্রা রুখে দেওয়ার সাধ্য হয় না তাদের।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিজ্ঞানকে অস্বীকার করতে চেয়েছিলেন। দাঁড়াতে চেয়েছিলেন জীবনের বিপক্ষে। ট্রুথ প্রিভেইলস। তিনি হেরে গেলেন জীবনের কাছে। হেরে গেলেন সত্য ও বিজ্ঞানে কাছে। হেরে গেলেন মানুষের কাছে। সেই সব মানুষ তাকে হারিয়ে দিলেন, যারা আলোর অভিযাত্রী। ইতিহাস যারা পাঠ করেন, যারা সত্যানুসন্ধানী, তারা মাঝে মাঝে থমকে দাঁড়ালেও বিভ্রান্ত হয়ে ভুল পথ অনুসরণ করেন না। হয়তো সঠিক পথ খুঁজে পেতে সময় নেয়, কিন্তু খুঁজে পায় সেই সব মানুষ, যারা মানুষের কল্যাণ চান। আসলে মানুষের বিজয় কখনো ছিনতাই করা যায় না। কেড়ে নেওয়া যায় না। চেষ্টা করেও পারা যায় না। ইতিহাসের এই শিক্ষা মানতে চায় না যারা, ইতিহাস তাদের নির্বোধ ও অর্বাচীন বলেই গ্রহণ করে।

মানুষের জীবনের পক্ষে, করোনার বিরুদ্ধে বিজ্ঞানীদের সাধনা সফল হয়েছে। সুখবর ইতিমধ্যেই ইথারে ইথারে ছড়িয়ে পড়েছে, কোভিড-১৯ দমনে সাফল্য নিয়ে বাজারে আসছে বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভ্যাকসিন, যা এখন অনেকটাই মানুষের দোরগোড়ায়। ফাইজার, মডার্না শুধু আমেরিকার মানুষই নয়, বিশ্ববাসীর সামনেও বাঁচার সুসংবাদ নিয়ে হাজির হয়েছে। এত বিষাদ, এত হতাশা, চারপাশে এত নেতিবাচকতা, জীবনের বিরুদ্ধ স্রোত, তার মধ্যেও বাঁচার আয়োজন। মৃত্যু যে জীবনকে অতিক্রম করে যেতে পারে না, করোনার ভ্যাকসিন তারই প্রমাণ। শুধু কি ফাইজার, মডার্নার ভ্যাকসিন; রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, চীন, এমনকি বাংলাদেশেও ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের সুসংবাদ!

হয়তো ভ্যাকসিন ব্যবহার শুরু হওয়ার আগেই আরো অনেক মানুষকে আমাদের হারাতে হবে। আরো অশ্রু ঝরবে। হাহাকার উঠবে। বুকের পাঁজর ভাঙবে। তবু সামনে আশার বাতি। হয়তো ডিসেম্বর বছরের শেষ, কিংবা নতুন বছরের শুরু জানুয়ারি ২০২১। এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে দেশে দেশে। সরকারে সরকারে চলছে আয়োজন প্রটোকল নির্ধারণে। প্রাপ্যতার অগ্রাধিকার বাছাইয়ের অগ্রাধিকার নির্বাচন শোনা যাচ্ছে, ফ্রন্টলাইন ফাইটার্স অর্থাৎ চিকিৎসক, নার্স, হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী। অতঃপর বয়স্ক মানুষ, স্বাস্থ্যগত দিক থেকে নাজুক। এরপর আমজনতা।

হ্যাঁ, এ প্রশ্ন উঠতেই পারে, ‘গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল’-এর মতো সব মানুষের দোরগোড়ায় না পৌঁছা পর্যন্ত এবং মানুষ সুফল না পাওয়া পর্যন্ত এত উল্লাস না করাই ভালো। তা ঠিক। ট্রাম্পের মতো সত্যকে অস্বীকার করার মতো মানুষের অভাব নেই। তিনি করোনাকে খাটো করে দেখে, মানুষের জীবনকে অবহেলা করে, মানবসভ্যতার জন্য অনেক ক্ষতি করে দিয়েছেন। তবু সুদিন আসে। সেই সুদিনই সামনে। ভ্যাকসিনের খবরে সেই সুদিনের আভাসই মিলছে। এবং বলা হচ্ছে, ফাইজার ও মডার্না-উভয়ের ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ৯৫ ভাগ, যা অত্যন্ত আশাপ্রদ। বিজ্ঞানী, গবেষক, রোগ বিশেষজ্ঞ সবাই আশাবাদী, করোনায় সৃষ্ট অন্ধকার দূর হয়ে যাবে। হতাশা কাটবে। জীবনের কোলাহলে পৃথিবীটা আবার হেসে উঠবে।

আমরাও আশাবাদী হতে চাই। আশা মানুষকে উজ্জীবিত রাখে। বাঁচিয়ে রাখে। আশা মানুষকে প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে শত্রু এবং প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি জোগায়। তাই আমাদের প্রার্থনা, ফাইজার, মডার্না এবং অন্যান্য ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ও দেশের ঘোষণা সত্য হোক। মানুষ বাঁচুক। সভ্যতা রক্ষা পাক। মানুষের জয় হোক। বিজ্ঞানের জয় হোক। আমরা বাঁচতে চাই। হাসতে চাই। কোলাহলে জীবন খুঁজে পেতে চাই। মৃত্যুকে পরাজিত করে জীবনের গান গাইতে চাই।আমেরিকা ২০২১ সালের আগষট শেষ দিকে আবার পোড়াদমে ঘুরে দাড়াবে।

লেখক: নিউ জার্সি আমেরিকায় বসবাসরত সাংবাদিক ও কলামিস্ট।