ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আর নেই
আদর্শবার্তা ডেস্ক :
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও উপ-রাষ্ট্রপতি এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আর নেই। ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ হ্রাস, বুকে ব্যথা অনুভব করলে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর মওদুদকে ঢাকায় এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি সেখানে ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের অধীনে চিকিৎসা নেন। সেখানে তার হার্টে ব্লক ধরা পড়ায় তার হৃদযন্ত্রে স্থায়ী পেসমেকার বসানো হয়।
চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি সিসিইউ থেকে তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। ২০ জানুয়ারি হাসপাতাল থেকে বাসায় নেওয়া হয়। এরপর আবার ২১ জানুয়ারি তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টায় সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে তিনি দেশ ছাড়েন। সেখানে দীর্ঘদিন আইসোলেশনে থেকে পরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তার স্ত্রী হাসনা জসিমউদদীন রয়েছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী, প্রবীণ আইনজীবী মওদুদ আহমদ মারা গেছেন।
সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তার মৃত্যু হয় বলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “খুব বেদনার সংবাদ- মওদুদ সাহেব আর নেই। আমি উনার ভায়রার সাথে কথা বলেছি। তিনিই আমাকে সংবাদটি জানিয়েছেন।”
৮১ বছর বয়সী মওদুদ কিডনি ও ফুসফুসের জটিলতাসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত চরিত্র মওদুদ আহমদ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন। জিয়াউর রহমানের সময়ে তিনি উপ প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, পরে এইচ এম এরশাদের সময়ে উপরাষ্ট্রপতির দায়িত্বও পালন করেন।
রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় এবং বুকে ব্যথা অনুভব করায় গত ৩০ ডিসেম্বর মওদুদ আহমদকে ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৭ জানুয়ারি তার হৃদযন্ত্রে পেস মেকার বসানো হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১ ফেব্রুয়ারি তাকে নেওয়া হয় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে।
প্রবীণ এই আইনজীবীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন, “মওদুদ আহমদের এই চলে যাওয়ায় জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। তিনি সারাদেশের একজন মুরুব্বি ছিলেন।… তার মৃত্যুতে দেশ ও জাতি একজন রাজনীতিবিদকে হারিয়েছে, দেশের জনগণ একজন জনপ্রতিনিধিকে হারাল।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
১৯৪০ সালে নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের জন্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা শেষ করে তিনি যুক্তরাজ্যে ব্যারিস্টার-অ্যাট-ল ডিগ্রি নেন। পরে দেশে ফিরে যুক্ত হন আইন পেশায়।
কবি জসীমউদ্দীনের জামাতা ব্যারিস্টার মওদুদ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মপক্ষ সমর্থন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাকে প্রথম পোস্ট মাস্টার জেনারেল করা হয়।
পরে দেশের প্রথম সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যোগ দেন মওদুদ। বিএনপি গঠনে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। জিয়া তাকে মন্ত্রী ও পরে উপপ্রধানমন্ত্রী করেছিলেন।
জিয়ার মৃত্যুর পর মওদুদ সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের হাত ধরেন। এরশাদের নয় বছরের শাসনামলে তিনি মন্ত্রী, উপপ্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী এবং উপরাষ্ট্রপতির দায়িত্বও পালন করেন।
এরশাদ সরকারের পতনের পরও জাতীয় পার্টিতেই ছিলেন মওদুদ। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর তিনি বিএনপিতে ফেরেন। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে তিনি আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত মওদুদ, আইন ও সমকালীন রাজনীতি নিয়ে বেশ কয়েকটি বইও লিখেছেন। স্বায়ত্বশাসন থেকে স্বাধীনতা, বাংলাদেশ: শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ – প্রেক্ষাপট: বাংলাদেশের রাজনীতি ও সামরিক শাসন, এ স্টাডি অব দ্য ডেমোক্রেটিক রেজিমস, কারাগারে কেমন ছিলাম, বাংলাদেশ: ইমার্জেন্সি অ্যান্ড আফটারম্যাথ ২০০৭-২০০৮ তার উল্লেখযোগ্য বই্।
আরও শোক প্রকাশ
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রবীণ আইনজীবী মওদুদ আহমেদের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন।
লন্ডনে অবস্থারত বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের অন্যতম ব্যারিস্টার আবুল হাসনাত বলেন, “তার এই মৃত্যুতে জাতি একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিক ও আইনজ্ঞকে হারাল, যা পূরণ হওয়ার নয়।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “মওদুদ আহমদের বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। উপমহাদেশের অন্যতম আইনজ্ঞকে আমরা হারালাম, বিএনপি ও বাংলাদেশ হারালো একজন অভিভাবককে।
“তার এই মৃত্যুতে আমি ব্যক্তিগতভাবে শোকগ্রস্ত। কারণ তার সাথে আমার দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। তিনি আমাদের বিএনপির একজন অভিভাবক ছিলেন। এই ক্ষতি পূরণ হওয়ার নয়।’
মওদুদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, “জাতি একজন বীর মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও প্রবীন রাজনীতিবিদকে হারিয়েছে।”
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নোয়াখালীর যে আসনের সাংসদ ছিলেন, এখন সেই আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এক শোক বার্তায় তিনি প্রয়াত এই বিএনপি নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্পিকার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুও তাদের এই সহকর্মীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নেতা কাদের সিদ্দিকী, এলডিপির অলি আহমেদ, জেএসডির আ স ম আবদুর রব, গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মন্টু, আবু সাইয়িদ, সুব্রত চৌধুরী, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান এবং ২০ দলীয় জোটের নেতারা মওদুদ আহমেদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।