ভ্রমণের উপকারিতা : ভ্রমণ যেভাবে পরিবর্তন করে একজন মানুষকে
সাখাওয়াত হোসেন
বলা হয়ে থাকে যে, ভ্রমণ মানুষের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনে যেমন সহায়তা ভূমিকা রাখে থাকে তেমনই তার আত্মার প্রশান্তি লাভ ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন এক অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে থাকে। যে দৃষ্টি তাঁকে যেকোনো বিষয় বা বস্তুকে নতুন করে দেখার, উপলব্ধি করার চমৎকার এক ভঙ্গিমা বাতলে দেয়। ভ্রমণের উপকারিতা দেখা যায় ব্যক্তির সামাজিক এবং ব্যক্তিগত জীবনেও।
বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থগুলোতেও ভ্রমণকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কেননা সেটা সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকে দেখার ভেতর দিয়ে সৃষ্টিকর্তার মহিমান্বিত রূপ ও বিশালতাকেই তুলে ধরে থাকে। কথা হচ্ছে ভ্রমণ কীভাবে মানুষকে পরিবর্তন করে থাকে? অনেকের মধ্যেই এমন জিজ্ঞাসা হতেই পারে।
সে যাই হোক, ভ্রমণের উপকারিতা বা ভ্রমণ মানুষের সামাজিক এবং মানবিক যে পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকে সেটা কীভাবে হয়ে থাকে তা নিয়েই জানবো আজকে আমরা। তবে শুরু করা যাক…
আত্মবিশ্বাসী করে তোলা :
প্রাত্যহিক জীবনের নানান বন্ধুর পথ ও কঠিন বাস্তবতা মানুষের নিজের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থাকে ধীরে ধীরে কমিয়ে ফেলে। মানুষ হয়ে পড়ে আত্মবিশ্বাসহীন ও হতাশ। ভ্রমণ আপনাকে সহায়তা করে নিজের প্রতি বিশ্বাস অর্জন করতে।
উঁচু পাহাড়ে দীর্ঘ পথ হাইকিং করা, আকাশ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাখির চোখে পৃথিবীকে দেখা বা উত্তাল সমুদ্রের বুকে সার্ফিং আপনাকে শেখায় মানুষ তাঁর বুদ্ধি ও শ্রম দ্বারা অর্জন করতে পারে সব বিশাল বাঁধাকেই। দরকার কেবল চেষ্টা আর স্বদিচ্ছা, যেখানে ভ্রমণ আপনাকে মুখোমুখি করে দেয় সেই বিপদসংকুল পথের শেষের উচ্ছ্বাস আর আনন্দধারার সাথে। যা আপনিই অর্জন করেছেন ঘর থেকে বের হয়ে ভয় কে পিছনে ফেলে।
দৃষ্টিভঙ্গির বদল :
ভ্রমণে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেয় বিচিত্র মানুষ, তাঁর ধর্ম, আচার ব্যবহারের সাথে। আপনার চিন্তার গণ্ডীর বাহিরেও যে বিশাল এক পৃথিবী ও তাতে মানুষের প্রাত্যহিক যাপনের ভিন্নতা, রূপ, মাধুর্য আপনাকে দেয় নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি ও ভাবনার মশাল। যে মশাল ধরে চিন্তার আশ্চর্য গুহায় আপনি এগিয়ে যান নতুন নতুন ভাবনা ও দৃশ্যের সাথে নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিতে। ভ্রমণের উপকারিতা এমনিভাবে ব্যক্তির মনোজগতেও পরিবর্তন ঘটায়।
ভ্রমণ মানুষকে সামাজিক করে তোলে :
যেহেতু ভ্রমণে আপনাকে মিশতে নানান মানুষের সাথে, হতে পারে তারা একদমই আপনার বৈশিষ্ট্যের না তবুও তাঁদের সাথে আপনাকে চলতে হচ্ছে, মানিয়ে নিতে হচ্ছে, তা মূলত আপনাকে আরও সামাজিক করে তুলতে সহায়তা করছে। সমাজের ভিন্ন মতের ভিন্ন মানুষের সাথে মানিয়ে চলার শক্তি দিচ্ছে আপনাকে।
সাবলীল ও বুদ্ধিদীপ্ত করে তোলা :
ভ্রমণ আপনাকে অন্যের সাথে আলোচনায় সাবলীল করার পাশাপাশি আপনাকে করে তোলে বুদ্ধিদীপ্ত এক মানুষে। বিভিন্ন পরিবেশ ও স্থান ভ্রমণের অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার আপনার জানাশোনাকে যেমন বাড়িয়ে তোলে তেমনি আপনাকে দেয় নিত্য দিনের চলার পথে সিদ্ধান্ত নেবার ও সমস্যা মোকাবেলার মতো সাহস ও বুদ্ধি।
নতুন পরিবেশে খাপ খেয়ে চলতে সহায়তা করা :
ভ্রমণে আপনাকে নানান ছোট বড় সমস্যার মাঝে পড়তে হয়। সেটা হতে পারে ফ্লাইট মিস হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে অপরিচিত জায়গায় রাস্তা হারিয়ে ফেলা, খারাপ খাবারের অভিজ্ঞতা সহ অনিচ্ছাকৃত নানান ঘটনা। এইসব সমস্যা কেটে চলতে চলতে এমন অভিজ্ঞতা আপনাকে জীবনের নানান সমস্যা ও নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে সহায়তা করে থাকে।
দুঃসাহসিক করে তোলা :
ভ্রমণপ্রিয় মানুষ দুঃসাহসিক হয়ে থাকেন। আপনি যখন আত্মবিশ্বাসী হন তখন যেকোনো কঠিন সিদ্ধান্ত বা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আপনাকে সাহসীর ভূমিকায় অবতীর্ণ করায়। আপনার কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে নতুন কিছুকে মোকাবেলার শক্তি বৃদ্ধিতে ভ্রমণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বাস্তববাদী করে তোলা :
একটা কাঁধ ব্যাগে সামান্য কিছু প্রয়োজনীয় জিনিশপত্র নিয়ে জীবনের কয়েকটা দিন কাটিয়ে ফিরে আপনি হয়তো বুঝতে পারেন জীবন সুন্দরভাবে যাপনে আসলে তেমন বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই। ভ্রমণের অচেনা পথে বিভিন্ন মানুষের জীবনের অভিজ্ঞতাও আপনার মধ্যে প্রভাব ফেলে যা আপনাকে করে তোলে আরও বাস্তববাদী।
সুখী হতে সহায়তা করা :
সুখ নামের জীবনের চরমতম এক মুহূর্ত ধারণ করতে আমাদের কতই না আয়োজন। অথচ ঘর হতে দু পা বেরিয়ে একটা সরল দৃশ্যও আপনার মধ্যে সেই সুখের আবির্ভাব ঘটাতে পারে। ভ্রমণ আসলে আপনাকে সেই মোক্ষম সুখ লাভের সহজ পথটির দিশাই দিয়ে থাকে, যে কতো সহজে আপনি সুখী হতে পারেন, খুবই অল্প কিছুর বিনিময়ে সেই অধরা সুখ আপনার মাঝে সঞ্চার করতে পারে দারুণ এক জীবনীশক্তি।