সাংবাদিক লেখক দেলওয়ার হোসেন সেলিমের চল্লিশতম জন্মদিনে আমাদের ভাবনা
নাজমুল ইসলাম মকবুল :
সিলেট বিভাগের লেখক কবি সাহিত্যিক সাংবাদিকদের প্রাণের সংগঠন সিলেট লেখক ফোরাম প্রতিষ্ঠা হয় প্রায় পনের বছর পুর্বে। সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করতে আমাকে সঙ্গত কারনেই যোগাযোগ করতে হয় সিলেট বিভাগের সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য সম্মানিত লেখক কবি সাহিত্যিক সাংবাদিক ভাইদের সাথে। সেইসুবাদে শুধু সিলেটের নয় গোটা দেশের এমনকি দেশের বাইরের লেখক কবি সাহিত্যিক সাংবাদিক বন্ধুদের অনেকের সাথেই খাতির পরিচয় হয়। হয় মুলাকাত। মুলাকাত থেকে সখ্যতা। সিলেটের প্রতিতযশা সাংবাদিক কলামিষ্ট লেখক দেলওয়ার হোসেন সেলিম ভাই সিলেট লেখক ফোরামের শিক্ষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। শুরু থেকেই আমাদের সহযাত্রী থাকায় সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতরো হয় সেই দেড় দশক থেকেই।
নিজের প্রজ্ঞা বিচক্ষণতা মেধা ও যোগ্যতার জানান দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে অবদান রাখার এবং দেশ ও দশের জন্য কাজ করার ভাগ্য সবার জোটেনা। স্বপ্ন থাকা স্বত্ত্বেও সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারেননা অনেকেই। বিশেষকরে আমাদের দেশের সিংহভাগ নাগরিকদেরই ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয় উন্নত দেশগুলোর দুতাবাসের কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে। বিভিন্ন দুতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ভিসা আবেদনপত্র যাচাই বাছাই না করে ঢালাওভাবে রিভিউজ করতেও শুনা যায় হরহামেশা।
স্বপ্নবাজ দেলওয়ার হোসেন সেলিম ভাই ব্রিটিশ ভিসা পেয়ে যান নিজ যোগ্যতা বলেই। পাড়ি দিতে হয় যুক্তরাজ্যে ১১-১১-২০১১ এর স্মরণীয় একটি দিনে। এমনি চৌকষ একজন সহকর্মীকে আমরা বিদায় দিতে প্রস্তুত ছিলাম না। তবে বৃহৎ পরিসরে গিয়ে সিলেট লেখক ফোরামের জন্য আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে আরও বেশি কাজ করবেন এই স্বপ্ন আমরা লালন করেছিলাম তখন থেকেই। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী হোটেল পলাশের কনফারেন্স হলে আমরা তাঁকে বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছিলাম সদলবলে মহাসমারোহে ২০১১ এর ৩ নভেম্বর। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেট সমাচার ও দৈনিক জালালাবাদী সম্পাদক সিলেটের প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুল ওয়াহেদ খান। প্রাণবন্ত উপস্থিতি ছিল সিলেটের প্রথমসারির লেখক কবি সাহিত্যিক সাংবাদিকদের। শুধু তাই নয়। কানায় কানায় পরিপূর্ণ ছিল অনুষ্ঠানস্থল। পুরুষ লেখক কবি সাহিত্যিক সাংবাদিকদের পাশাপাশি সিলেট লেখিকা সংঘের তৎকালীণ সভানেত্রীর নেতৃত্বে তাদের একটি প্রতিনিধিদলও উপস্থিত হয়েছিলেন অনুষ্ঠানটিকে রঙিন করে তুলতে। তখন প্রধান অতিথিসহ সকল অতিথির বক্তব্যেই ছিল স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রত্যাশা। কথায় বলে, ঢেকী স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন আমাদের প্রিয় লেখক দেলওয়ার হোসেন সেলিম ভাই। আন্তর্জাতিক বিশ্বে মানবাধিকারের দেশ হিসেবে পরিচিত ইউরোপের মর্যাদাশীল দেশ ফ্রান্সে আজ তিনি সুপ্রতিষ্ঠিত। ফ্রান্সের ঐতিহাসিক প্রাচীণতম রাজপ্রাসাদ সাতুদুভার্সাই (ফ্রান্সের রাজার বাড়ীতে) প্রথম জব হয় তাঁর। এছাড়া সেখানকার অনেক লোভনীয় জায়গায় সম্মানজনক চাকুরীর বিরল গৌরব অর্জন করেছেন ইতোমধ্যে। অধিষ্ঠিত হয়েছেন ফ্রান্স বাংলা প্রেসক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে। ফ্রান্স বাংলা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম তিনি। ভ্রমনপিপাসু সেলিম ভাই ফ্রান্সের এলিজি রাজপ্রাসাদে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট কর্তৃক আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে গমন করে রাজপ্রাসাদ পরিদর্শনের বিরল সৌভাগ্যও অর্জন করেন। যে ঐতিহাসিক স্থানে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট দাড়িয়ে ভাষন দেন সে স্থানটিও পরিদর্শন করেন তিনি। এছাড়া নিয়মিত ইউনেস্কো কপসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক আমন্ত্রিত হয়ে তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান করে আসছেন তিনি। সংবাদিকদের সর্ববৃহৎ আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস এর সদস্যও তিনি। ফ্রান্সে অবস্থিত বাংলাদেশ দুতাবাস কর্তৃক আয়োজিত সকল অনুষ্ঠানেরই আমন্ত্রন পান তিনি। সেগুলোতে শরিকও হন। রাখেন বক্তব্যও। কয়েকটি ভাষাসহ ফরাসী ভাষায় পারদর্শীও তিনি।
পারিবারিকভাবেই সমাজসেবী সেলিম ভাইয়ের পিতা মহুম ডা: আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম ১৯৯৯ সালে নিজ এলাকা সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলার ৮নং ঝিংগাবাড়ী ইউনিয়নের গোয়ালজুর ঢাকনাইল দক্ষিণ কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার জন্য নিজ পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে একখন্ড জমি দান করেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার পরিচালিত এ ক্লিনিকটি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে এলাকার মানুষ নিয়মিত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন এখানে।
সিলেট লেখক ফোরামের জন্য বড় কিছু করার স্পৃহা ছিল এ কর্মবীরের। সে অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। আমরা সিলেটের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে মফস্বল এরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোতে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলার লক্ষ্যে কাজ শুরু করি। বিশেষ করে গরিব ছাত্র ছাত্রীরা যাতে ফ্রি সেলাই ও কমপিউটার শিখতে পারে সে লক্ষ্যে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। কিছুদিন পুর্বে তিনি বাংলাদেশ সফরে আসলে তাকে নিয়ে আমরা একটি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন করি। সেই কেন্দ্রটিকে আমরা পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের পনের বছরের বিশাল অর্জনসহ সিলেটের সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতের ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরে একটি স্মারক প্রকাশের লক্ষ্যেও কাজ করে যাচ্ছি আমরা। আর সেই স্মারকটি যাতে আলোর মুখ দেখে সেই লক্ষ্যে সর্বাধিক প্রেরণা যিনি দিয়ে যাচ্ছেন তিনিই আমাদের সেলিম ভাই।
চার দশকের বর্নাঢ্য জীবনের অধিকারী এই সমাজসেবীকে আমরা সর্বোচ্চ সম্মান দিয়ে সিলেট লেখক ফোরামের উপদেষ্টা মনোনিত করেছি। এ মহান ব্যক্তির নামে উৎসর্গ করেছি আমার ১২নং সঙ্গীতের অ্যালবাম আমার বাংলাদেশ। অ্যালবামটির মোড়ক উন্মোচন হয়েছে ৭ নভেম্বর ২০১৯ সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহস্থ বাংলাদেশ সেন্টারের কনফারেন্স হলে। অ্যালবামটির প্রকাশনা উৎসবে যোগদানের জন্য আমি পাঁচ দিনের সংক্ষিপ্ত সফরে সংযুক্ত আরব আমিরাত গিয়েছিলাম। বর্ণাঢ্য এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি), গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচকের বক্তব্য রাখেন দুবাইয়ে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন খান। লন্ডন টাইমস নিউজের সিলেট ব্যুরো চিফ নাজমুল ইসলাম মকবুলের সভাপতিত্বে ও ৭১ টিভির সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রতিনিধি সাংবাদিক কবি লুৎফুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সমিতি শারজাহ এর সিনিয়র সহ-সভাপতি ইসমাইল গনি চৌধুরী, সংগঠক ও প্রবাসী কমিউনিটি নেতা মোহাম্মদ মনসুর সবুর, বাংলাদেশ সমিতি শারজাহার সেক্রেটারি জেনারেল শাহ মোহাম্মদ মাকসুদ, মিনিস্ট্রি অব হাউজিং এন্ড পাবলিক ওয়ার্কস এর প্রধান একাউন্টস অফিসার সোহেল আহমেদ, জনতা ব্যাংক দুবাইয়ের ব্যবস্থাপক আবদুল মালেক, ইউএই প্রেসক্লাবের সভাপতি শিবলী আল সাদিক, ইউএই প্রবাসী সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও একুশে টিভির প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম তালুকদার, নতুন সময় টিভির প্রতিনিধি শামসুর রহমান সুহেল, ৫২ বাংলা টিভির প্রতিনিধি তিশা সেন, এসএ টিভির প্রতিনিধি সিরাজুল হক, এনটিভির প্রতিনিধি মামুনুর রশীদ, বাংলাদেশ বেতারের সাবেক সংবাদ পাঠিকা সানজিদা ইসলাম, সিএনএন বাংলা ইউএই প্রতিনিধি ওসমান চৌধুরী, সাংবাদিক মহিউল করিম আশিক, গীতিকবি সুলাইমান বাউল, মোহাম্মদ নেওয়াজ, আমিনুল ইসলাম, শামসুল হক, মোহাম্মদ জাবেদ, আজিমুল গনি, মোহাম্মদ নুর উদ্দিন, মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন চৌধুরী, মেহাম্মদ ইদ্রিস, সংগঠক নাসির চৌধুরীসহ প্রবাসী কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ।
দেলওয়ার হোসেন সেলিম ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। এগিয়ে যাবার নেপথ্য কারিগর রাবিয়া আক্তার রুবি তাঁর জীবনসঙ্গীনি। সংসার জীবনে নুজহাত জাহান আজওয়া নামে তাদের একজন কন্যা সন্তান রয়েছে।
তাঁর চল্লিশতম জন্মদিনে (১ ডিসেম্বর ২০১৯) আমাদের প্রত্যাশা অনেক। আরও এগিয়ে যাবেন আমাদের সেলিম ভাই দৃঢ় প্রত্যয়ে, দুর্বার গতিতে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে রাখবেন আরও অবদান। বিদেশের মাটিতে ছিনিয়ে আনবেন দেশের জন্য আরও সুনাম ও সুখ্যাতি। যে অবদানের জন্য স্মরণীয় বরণীয় হয়ে থাকবেন যুগ যুগ ধরে।
নাজমুল ইসলাম মকবুল
সভাপতি
সিলেট লেখক ফোরাম।