মুহম্মদ আজিজুল হক-এর কবিতা “নূরানী চেহারার”
নূরানী চেহারার শাকওয়ালা
মুহম্মদ আজিজুল হক
কাঁচা এই বাজারে প্রতি সপ্তাহান্তে
আসেন এক ভদ্রলোক;
কিনে নেন মাছ মুরগী
চাল-ডাল ডিম ও হরেক রকমের তরকারি
আর সব দরকারি মৌসুমী ফলমূল।
তারপর ধীরে যান বাজারের এক কোণে,
যেখানে নূরানী চেহারার বৃদ্ধ শাকওয়ালা;
এমনই বেহেশতী মানুষ,
চুল-দাড়ি সাদা-পাকা,
মুখে স্মিত হাসি ন্যায্য মূল্যে শাক,
চান না
কখনো মূল্য বাড়িয়ে।
বরং একটু বেশি কিনলে
উপহার মেলে অতিরিক্ত শাক
দুই এক আঁটি ।
বিচিত্র সব শাক থাকে তাঁর দোকানে,
চেনা
অচেনা।
লালশাক ঢেঁকিশাক পালং পুঁই পেপুল
কলমী নাপা পাটশাক বতুয়া কাটানটি,
দুলফি হেলেঞ্চা
মটর ডাটা নোনাশাক
উষনি শুষনি সাঞ্চি বাঁধা সব আঁটি আঁটি।
গত বছর দেশে হঠাৎ আসে করোনা।
সাত-আট মাস ভদ্রলোক আর
বাজারমুখী হন না।
এক সময়ে করোনা কমে এলে গেলেন
আবার।
চালডাল মাছ-মুরগী তরি-তরকারি
কেনা হলে পরে হেঁটে গেলেন সেই শাকের
দোকানে।
কিন্তু কোথায় শাক ও শাকওয়ালা!
পড়ে আছে হয়ে বিরান শাকের শূন্য মাচান।
পাশের যুবক দোকানী বলে,
“স্যার, বহুদিন পরে বুঝি
এলেন বাজারে;
গেল কোরবানি ঈদের দিনদুই আগে
করোনায় নিয়ে গ্যাছে শাকওয়ালা চাচারে।”
সহসা যেন এক হাই ভোল্টেজ
বৈ্দ্যুতিক তারে শক খেলেন ভদ্রলোক।
বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো দাঁড়িয়ে
রইলেন ক্ষণকাল।
পরে হেঁটে চলে গেলেন
ধীরে বাজার ছেড়ে।
এরপর কেউই আর
দ্যাখে নি তাঁরে কখনোই এই বাজারে।
লেখক: চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত