স্বাধীনতার ৫০ বছরে সিলেট লেখক ফোরামের ৫ দিনের কর্মসূচির সমাপনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন
জীবনে সফলতা পেতে হলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে…..ডা. জহিরুল ইসলাম অচিনপুরী
আদর্শবার্তা রিপোর্ট :
স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সিলেট লেখক ফোরাম এর ৫ দিনের কর্মসূচির সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ ও অতিথিদের জীবনের সফলতার গল্প পরিবেশন বিষয়ক আলোচনা সভা সম্পন্ন হয়েছে। সিলেট লেখক ফোরাম সভাপতি সাংবাদিক কবি নাজমুল ইসলাম মকবুলের সভাপতিত্বে শনিবার (২ অক্টোবর ২০২১) বিশ্বনাথের অলংকারী পৌদনাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান হসপিটাল, ঢাকা-এর সহকারী অধ্যাপক মরমি কবি ডা. মোঃ জহিরুল ইসলাম অচিনপুরী।
ফোরামের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মো: ফখর উদ্দিন এবং অলংকারী ডেভোলাপমেন্ট সোসাইটির প্রচার সম্পাদক মোঃ মনোয়ার হোসেনের পরিচালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন প্রাইম ব্যাংক বিয়ানীবাজার শাখার ব্যবস্থাপক তাজ উদ্দিন আহমদ।
প্রধান আলোচকের বক্তব্য রাখেন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা: মোঃ শামছুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইসমত আরা চৌধুরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন অলংকারী ডেভোলাপমেন্ট সোসাইটির সভাপতি মোঃ রাসেল মিয়া।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. মোঃ জহিরুল ইসলাম অচিনপুরী জীবনের গল্প পরিবেশন করতে গিয়ে কিশোর বয়সের স্মৃতিচারণ করে বলেন, জীবনে সফলতা পেতে হলে এবং কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছতে হলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা লুঙ্গী পরে স্কুলে গিয়েছি, স্কুল থেকে বাড়ী ফিরে কৃষি কাজেও সহযোগিতা করেছি, গুরুজনদের সম্মান করেছি। তিনি সিলেট লেখক ফোরামের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ও সেবামুলক কার্যক্রমে যোগদানের স্মৃতিচারণ করে বলেন, সকল ভালো কাজে আমরা লেখক ফোরামের সম্পৃক্ততা দেখতে পাই। তাই আমরা লেখক ফোরামের সাথে আছি ভবিষ্যতেও থাকবো ইনশাআল্লাহ।
উদ্বোধকের বক্তব্যে প্রাইম ব্যাংক বিয়ানীবাজার শাখার ব্যবস্থাপক তাজ উদ্দিন আহমদ জীবনের গল্প পরিবেশন করতে গিয়ে বলেন, আমাদের সময়ে লেখাপড়া করতে কঠোর পরিশ্রম করতে হতো। তখনকার সময়ে কুপিবাতি জ¦ালিয়ে মাটিতে চাটাইয়ে বসে লেখাপড়া করার স্মুতি আমাদের মনে আছে। বর্ষার সময়ে দুটি লুঙ্গি নিয়ে আমরা স্কুলে যেতাম। একটি পরনে থাকতো এবং একটি থাকতো হাতে। কাদা মাড়িয়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার হেটে বিশ^নাথে স্কুলে যেতে হতো আমাদের। পথিমধ্যে নদী ও খালগুলোতে সাকু না থাকায় তা পার হতাম সাতরিয়ে। বিশ^নাথে গিয়ে ভেজা লুঙ্গি পরিবর্তন করে শুকনোটা পরে দোকানে রাখা জুতো পরে তখন স্কুলের ক্লাসে গিয়ে উপস্থিত হতে হতো আমাদের। একইভাবে ফিরতে হতো বাড়ীতেও। তিনি সিলেট লেখক ফোরামের সৃজনশীল সকল কাজের প্রশংসা করে বলেন, লেখক ফোরামের ব্যতিক্রমি কার্যক্রম আমাদেরকে আশার আলো দেখায়।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে ডা: মোঃ শামছুল ইসলাম বলেন, আমরা গ্রামের বাড়ীতে থেকে অত্র বিদ্যালয়ে পড়েছি। এরপর ক্রমান্বয়ে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে লেখাপড়া করে ডাক্তার হয়ে যদি গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্টিত হতে পারি তাহলে তোমাদেরও পারতে হবে। পৌছতে হবে সাফল্যের শীর্ষে। তিনি আরও বলেন, সিলেট লেখক ফোরামের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পসহ বিভিন্ন কার্যক্রম ও অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে এর কার্যক্রম কাছে থেকে দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হয়েছি। দেখেছি আশার আলো।
সভাপতির বক্তব্যে সাংবাদিক কবি নাজমুল ইসলাম মকবুল বলেন, সিলেট লেখক ফোরাম বিগত ১৮ বছরে অনেক কাজ করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা সব সময় ব্যতিক্রম কিছু করার চেষ্টা করি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ৫ দিনের কর্মসূচি ও আজকের সমাপনী অনুষ্ঠানের আলোচনা সভাতেও বিরাজ করছে ব্যতিক্রম আমেজ। গুণীজনদের জীবনের সফলতার গল্প শুনিয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের আশার আলো দেখাতে চাই। তাদেরও এমন গুণী হতে উদ্বুদ্ধ করি। তিনি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমেই আমরা লেখকরা সমাজ পরিবর্তনে দৃঢ় প্রতীজ্ঞ। তিনি অনুষ্ঠান আয়োজনে সকল মহলের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা ও ধনাবাদ জানান।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, অলংকারী জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা সাইফুল ইসলাম, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মোঃ আব্দুল কাইয়ূম, মোঃ ধন মিয়া, হানিফা বেগম, নুরজাহান খানম, সমাজসেবী ও শিক্ষানুরাগী মোঃ মাহবুবুল আলম সমুজ, মোঃ আমির আহমদ, সুলতান সরকার, মোঃ আজমান আলী, ফয়জুর রহমান, মোঃ মখলিছ মিয়া, অলংকারী ডেভোলাপমেন্ট সোসাইটির সহ সভাপতি মোঃ রাকিব আলী, খলিলুর রহমান, সাধারন সম্পাদক মোঃ জাকির হোসেন ইমন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ জাহেদ মিয়া, সহ প্রচার সম্পাদক মোঃ হুসেইন উদ্দিন, সদস্য মোঃ সিহাব উদ্দিন প্রমূখ।
আলোচনা সভা শেষে ফোরামের পক্ষ থেকে অলংকারী পৌদনাপুর হাফিজিয়া দাখিল মাদরাসা, সফাত উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় ও অলংকারী পৌদনাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের বিশেষ পুরস্কার ও বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষা সামগ্রী উপহার দেন অতিথিবৃন্দ। শুরুতে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মোঃ ধন মিয়া। এরপর ফোরামের পক্ষ থেকে অতিথিদের নিয়ে বিদ্যালয় মাঠে বৃক্ষরোপন করা হয়।
শেষে মুসলিম উম্মাহ ও দেশ বিদেশে অবস্থানরতো সকলের জন্য বিশেষ মুনাজাত করা হয়।