প্রচ্ছদ

কৃষিবিদ ডক্টর আরিফের সড়কে মৃত্যু এবং সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কতিপয় প্রস্তাবনা

  |  ০৯:৪৪, মার্চ ২১, ২০২২
www.adarshabarta.com

:: সাইফুর রহমান কায়েস ::
আমাদের শোকযাপনকাল এতো দীর্ঘতর কেনো হচ্ছে? আমাদের স্বজনেরা চিরবিদায় নিচ্ছেন খুব ঘন ঘন সময়ের ফেরে।
মৃত্যুর মিছিলে আমাদের কান্নাররোল থামছেই না। সড়কে মৃত্যু যেনো এখন নিয়তি। চাচাতো ভাই সৌমিকের মৃত্যুর পর আজ চাচাতো বোনের স্বামী কৃষিবিদ ডক্টর আরিফ সড়কে প্রাণ দিলেন। আর আমি মরতে মরতে বেচে গিয়ে সকলজন্ম যাতনা সইছি। প্রবোধ দেয়ার মতো ভাষাও হারিয়ে ফেলেছি। মূক, বধির রাষ্ট্রযন্ত্রের শুভবুদ্ধির উদয় আর কবে হবে? সড়কে বিশৃঙ্খলার জন্যই প্রাণ যাচ্ছে মানুষের।
মানুষের যেনো কোনো দামই নেই, প্রাণের দাম আরো কম। স্টেইট যখন কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি বা এস্টেটে পরিণত হয় তখন এই ঘটনাগুলি পৌনঃপুনিকভাবে ঘটতেই থাকবে। আর আমরা বকছুদ জনগণ কেবল মুখ বুজে সয়ে যাবো বুকে নিয়ে জগদ্দল পাথর। আমাদের বুক কেবলি ভারী হয়ে আসবে। চাপা কান্না কেবল ভেতরে ভেতরে আওয়াজ তুলবে। আমরা নিস্ফলা মাতমে মেতে উঠি- কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা আমাদেরকে ক্রমশঃ গ্রাস করতে থাকে।
সড়কপথসংশ্লিষ্ট মাফিয়াদের দ্বারা আমরা নিগৃহীত হতে থাকবো কিন্তু রাষ্ট্রের নির্বিকারত্ব এর ফেরে কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়।
সড়কে মৃত্যুর মিছিল না থামা মানে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার অব্যবস্থাপনাকেই অঙুলি নির্দেশ করে। দেশজুড়ে সড়কে লাশের মিছিল কোনো শুভ ইঙ্গিত বহন করে না। স্বজনবিচ্ছেদযাতনায় কাতর স্বদেশের ম্লানমুখ আমরা আর দেখতে চাই না। একটি প্রাণের ক্ষয় মানে একটি দেশ একশো বছর পিছিয়ে যাওয়া। জিডিপির গতি হারিয়ে যাওয়া। দীর্ঘসময় ধরে জাতির অগ্রগতির সূচক নেতিবাচক হয়ে যায় যখন সড়কে মৃত্যুর হার বাড়তে থাকে। কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নিলে একটি জাতির বিলোপন ঘটতে বেশীদিন লাগবে না।
সড়ক প্রশস্তকরণ, একমুখী রাস্তাঘাট নির্মাণ, রাস্তার মাঝখানে বিভাজক বা ডিভাইডার তৈরি করতে হবে। যত্রতত্র পার্কিং, ইউটার্ণ নেয়া বন্ধ করতে হবে। স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করতে হবে। সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্নগড় গতিসীমা নির্ধারণ করে রাস্তায় প্রদর্শনী সাইনবোর্ড লাগাতে হবে। চালকদেরকে প্রতি তিনমাসে দুইদিনব্যাপী সতেজীকরণমূলক প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রত্যেক চালককে সপ্তাহে একদিন পূর্ণ বিশ্রাম বা সাপ্তাহিক ছুটি ভোগের সুযোগ দিতে হবে। প্রত্যেকটি গাড়িকে কোডিং ব্যবস্থার আওতায় আনতে হবে। আমাদের দেশের দিগগজ আমলারা পুকুরচুরির প্রশিক্ষণ নিতে বিদেশ যান কিন্তু উন্নতদেশের ভালো দিকগুলো আয়ত্বে আনতে পারেন না। তারা কোডিং ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে প্রয়োজনে ফিলিপিন্সে যেতে পারেন। কোডিং ব্যবস্থা চালু হলে চালক এবং গাড়ি উভয়ই রাস্তায় নামতে পারবে না। আর নামলেও কর্তৃপক্ষ তা সহজেই চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে। সপ্তাহে ছয়দিনে আটচল্লিশ থেকে পঞ্চাশ ঘন্টার বেশি যাতে গাড়ি চালাতে না পারে সে ব্যাপারটিও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।
সুপ্রশিক্ষিত চালক ব্যতীত অন্য কেউ যাতে গাড়ির স্টিয়ারিং ধরতে না পারে সে বিষয়টিতে অধিকতর মনোযোগ দিতে হবে।
লেখক: সাইফুর রহমান কায়েস, প্রধান সম্পাদক শব্দকথা টোয়েন্টিফোর ডটকম।