প্রচ্ছদ

একটি মৃত্য একটি প্রশ্ন: জীবনে ইসলাম না থাকলে মৃত্যুর পর ইসলামী জান্নাতের প্রয়োজন কেন?

  |  ০৮:৫৩, মে ২০, ২০২২
www.adarshabarta.com

শফি আহমেদ

একজন মুসলমানের মৃত সংবাদ শোনে আমরা তখনি ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহির রাজিউন পাঠ করি। এটা মুসলমান মাত্রই প্রাপ্য। অতঃপর একজন মরহুম, মরহুমার জন্য কে কি দুয়া করবেন এটা ব্যক্তিগত ব্যাপার।

আমরা সাধারণত সবার জন্য জান্নাতুল ফেরদৌসের উঁচু স্থান কামনা করে থাকি। আমরা হয়তো জানি অথবা জানিনা বাস্তব হল জান্নাতে যেতে পারলেই আমাদের প্রত্যাশা পূর্ণ হয় কিন্তু যাওয়াটাই কঠিন ব্যাপার। মহানবি স: বলেছেন কোন মানুষই আল্লাহর রহমত ব্যতীত জান্নাতে ঢুকতে পারবেনা। শুধু আমল যথেষ্ট না। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক যখন রহম করে কাউকে জান্নাতে প্রবেশ করে দিবেন আমল অনুযায়ী তাঁর স্থান করে দিবেন। সে আমলের ফল হতে পারে অকল্পনীয়।

একজন মরহুমের জন্য তেমনি আমরা তার কথা স্মরণ করে তার আমল স্মরণ করে দুয়া করে থাকি। কারও পক্ষ বা বিপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নয় একজন সত্য প্রিয় মানুষের বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই বলছি। একটি প্রশ্ন মনে হচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও অনেক বুদ্ধিজীবী রয়েছেন। তাঁরা দেশের জন্য, জাতির জন্য অনেক ভালো কাজ করে থাকেন। আমাদের দেশেও তাই। বুদ্ধিজীবী লেখক সাহিত্যিক জীবনে মেধা ও দক্ষতায় স্বাক্ষর রেখে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ও সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু সবাই সমান আদর্শের হন না।

একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশের সাংস্কৃতিক, একাডেমিক অঙ্গনে শীর্ষ স্থানে উপনীত হয়েও দেখা যায় কেহ ধর্মের প্রতি শুধু দুর্বলই নন হয়ে যান ধর্ম বিদ্বেষী। একজন সাধারণ মানুষের মতই একজন বুদ্ধিজীবী, ধর্ম পালন করবেন কি না এটা তার নিজস্ব ব্যাপার। ধর্মে কোন জোর নেই। কিন্তু জীবনে ধর্ম কর্ম পালন না করে জীবন শেষে ধর্মের শেষ অবস্থান জান্নাত লাভ করবেন এটা কিরূপ একজন বাস্তববাদী মানুষের বিশ্বাস হতে পারে? শুরুতে যখন ধর্ম কর্মে আস্থা নেই তাহলে ধর্ম কর্মের পরিণাম জান্নাতে আস্থা হবে কীভাবে? যেটার প্রতি আস্থা নেই সেটা চাবেন কেন? তাই প্রশ্নটা হল আমাদের দেশের বিশিষ্ট জন যারা হন বুদ্ধিজীবী তারকা বা অন্যকিছু জীবনে যাদের ইসলামী কর্মে বিশ্বাস থাকেনা মৃত্যুর পর তাদের জন্য আমাদের ইসলামী জান্নাত দুয়া করাটা কি সঠিক হবে?

আমার অফিস সঙ্গী অনেকে আছেন যারা বিবিসি, পেঙ্গুইন, ইউরো ভিশনে কাজ করেন। তাঁরা ব্রিটেনের বুদ্ধিজীবীদের অন্যতম। এরা অনেকেই আপনার আমাকে বলবেন না আমার জন্য প্রার্থনা কর। কিন্তু বলবেন উইশ কর। কারণ তারা প্রার্থনায় বিশ্বাসী নয় কিন্তু উইসে বিশ্বাসী। আমাদের বুদ্ধিজীবীরা কী এতটুকু বাস্তববাদী হতে পারেন না?

সংবাদ পেলাম একুশে গানের রচয়িতা গাফ্ফার চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেছেন। জাতির প্রতি তাঁর এই উপহারটা অত্যান্ত সমাদৃত। আমার মনে পড়ে, অনেক দিন আগের কথা। তিনির এক সহকর্মী সাংবাদিক ও প্রিয়জন একবার আমাকে একটি বাংলা কবিতা দিয়ে অনুরোধ করলেন তার এই কবিতাটা ইংরেজিতে অনুবাদ করার জন্য। আমি কবিতা পড়ে অনুবাদ না করে আমার মন্তব্য লিখে পাঠালাম। তাহল ‘হ্যাভেন ইজ নট চিপ’। সাথে এও লেখলাম লেখাটা আপনার নয় কারণ কবিতার বাংলাটা অসাধারণ। কিন্ত ‘হ্যাভেন ইজ নট চিপ’।

কবিতার সারমর্ম এরূপ। মৃত্যুর পর দূর আকাশে আমার না ফিরার পাখি ক্লান্তি লগনে নীলিমার নীলে, না হয় সমুদ্র তরঙ্গ রাতের আঁধারে উচলে পড়া শীতল সৈকতে অথবা ঝড়ের হাওয়ায় উড়ে ফুলের পাপড়িতে পড়বেই। অর্থাৎ যে দিকেই যাক আমার অন্তিম বিহঙ্গ স্বর্গেই যাবে। বাস্তবে এমন হবার কোন নিশ্চয়তা নেই। আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে মহান আল্লাহ পাক জান্নাত সৃষ্টি করেছেন তেমন অপকর্মের ফল ভোগের জন্য জাহান্নাম ও বানিয়েছেন।

পরে জানতে পারলাম এই কবিতাটি আসলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা। তাহলে তো প্রমান পেয়ে গেলাম। তিনি নিজেই তো তাঁর শেষ অভিজ্ঞতা, শেষ কবিতায় লিখে গেছেন ‘তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি’।

শেষ পুরস্কার নিয়ে যায় সে যে
আপন ভান্ডারে।
অনায়াসে যে পেরেছে ছলনা সহিতে
সে পায় তোমার হাতে
শান্তির অক্ষয় অধিকার।।

তিমির আঁধার রাত পার হলে তবেই সূর্য উদয় হয়। ডালে কাঁটা লয়েই ভোরের গোলাপ ফুঁটে। ডালের কাঁটা পেরিয়ে ফুলের বাগানে যেতে হয়। কোন বস্তু একক ভাবে পরিপূর্ণ নয়। কেহ একা বড় হতে পারেনা জনগণ সাথে পেতে হয়। এভাবে একজন মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি যতই উন্নত হোক তা নিজের মাঝে সীমিত। সার্বজনীন পর্যায় উন্নীত হতে হলে জগৎ স্রষ্টার মতে মিলতে হয়। কারণ সবকিছুর শেষ আছে মৃত্য আছে। শুধু  তিঁনি  চিরবর্তমান। তিঁনির কাছ থেকে আগমন তিঁনির কাছেই আমাদিগকে ফিরে যেতে হবে।  ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহির রাজিউন।

(লেখক বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কবিতা সাইট হেলোপোয়েট্রি.কমে একজন সর্বাধিক পঠিত কবি)