প্রচ্ছদ

কাতার বিশ্বকাপ ফুটবল ২০২২: নৈতিকতা এবং মানবাধিকার ফেরিওয়ালাদের কুম্ভীরাশ্রু!

  |  ১৫:৪৭, জানুয়ারি ০৫, ২০২৩
www.adarshabarta.com

সাদেকুল আমিন

ফেডারেশন অফ ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল এসোসিয়েশন (ফিফা) বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতি চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপ ফুটবলের চার বছর পর রবিবার ২০ নভেম্বর, ব্যতিক্রমধর্মী এক জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল কাতার ২০২২।

এটি ছিল ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলের ২২তম টুর্নামেন্ট। বিশ্বকাপের প্রথম টুর্নামেন্টটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে। তবে, ফিফা প্রতিষ্ঠিত হয় ২১মে ১৯০৪ সালে ফ্রান্সের প্যারিস শহরে। ফিফা প্রতিষ্ঠার প্রায় ১১৮ বছর হয়ে গেছে। ২০১৮ সালে ২১তম বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় ফ্রান্স। তাই ফ্রান্স ছিল এবারের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন।

আরব বা মুসলিম বিশ্বে এটিই প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবল এবং এশিয়ায় দ্বিতীয়। এর আগে ২০০২ সালে দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপের ১৭তম টুর্নামেন্ট।

এবারের বিশ্বকাপে ৩২টি দেশ অংশগ্রহণ করে। পৃথিবীর ৭টি মহাদেশকে ফিফা ছয়টি আঞ্চলিক কনফেডারেশনে বিভক্ত করেছে আর এই ৬টি কনফেডারেশন হল – এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (AFC), কনফেডারেশন অফ আফ্রিকান ফুটবল (CAF), ইউনিয়ন অফ ইউরোপিয়ান ফুটবল এসোসিয়েশন (UEFA), কনফেডারেশন অফ উত্তর, মধ্য আমেরিকান এবং ক্যারিবিয়ান এসোসিয়েশন ফুটবল (CONCACAF), ওশেনিয়া ফুটবল কনফেডারেশন (OFC) এবং দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল কনফেডারেশন (CONMEBOL or CSF)। এই ৩২টি দেশের মধ্যে ইউরোপ থেকে ১৩টি, দক্ষিণ আমেরিকা থেকে ৪টি, এশিয়া থেকে ৪টি, আফ্রিকা থেকে ৫টি, উত্তর আমেরিকা থেকে ৪টি, অস্ট্রেলিয়া – এশিয়ান কনফেডারেশনের সদস্য হিসাবে এবং আয়োজক দেশ কাতার অংশগ্রহণ করে।

আগামী ২০২৬ সালের বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করবে ৪৮টি দেশ। তাই, এবারের টুর্নামেন্টটি ছিল ৩২টি অংশগ্রহণকারী দেশের জন্য শেষ টুর্নামেন্ট।

ফিফার বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২০-এ উল্লিখিত হিসাব অনুসারে, ফিফা বিশ্বকাপ কাতার ২০২২-এ অংশগ্রহণকারী দলগুলোর জন্য পুরস্কারের পরিমাণ ছিল ৪৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা আগের যে কোন বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টের চেয়ে অনেক বেশী। বিশ্বকাপের ফাইনালে যে দুটি দল খেলবে তাদের জন্য বরাদ্দ ছিল ৭২ মিলিয়ন ডলার। এ থেকে চ্যাম্পিয়ন দল পাবে ৪২ মিলিয়ন ডলার আর রানার্স আপ দল পাবে ৩০ মিলিয়ন ডলার। তৃতীয় স্থান অধিকারী দল পাবে ২৭ মিলিয়ন ডলার এবং যে দল চতুর্থ হবে তারা পাবে ২৫ মিলিয়ন ডলার। কোয়ার্টার ফাইনালে যে দলগুলো (৫ম-৮ম স্থান পর্যন্ত) উঠবে তারা প্রত্যেকে ১৭ মিলিয়ন ডলার পাবে। রাউন্ড অফ ১৬-এ যে দলগুলো (৯ম-১৬তম স্থান পর্যন্ত) পৌঁছবে তারা প্রত্যেকে ১৩ মিলিয়ন ডলার পাবে এবং গ্রুপ পর্বে যে দলগুলো (১৭তম-৩২তম স্থান পর্যন্ত) আউট হয়ে যাবে তারা প্রত্যেকে ৯ মিলিয়ন ডলার পাবে। এছাড়াও ফিফা টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দলকে টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের পূর্বে খরচের জন্য আরও দেড় মিলিয়ন ডলার প্রদান করবে।

২০২২ সালের ৬ অক্টোবর পর্যন্ত ফিফা বিশ্ব র‍্যাঙ্কিং এর শীর্ষে যে ১০টি দেশ ছিল তারা হল যথাক্রমে; ১. ব্রাজিল, ২. বেলজিয়াম, ৩. আর্জেন্টিনা, ৪. ফ্রান্স, ৫. ইংল্যান্ড, ৬. ইতালি, ৭. স্পেন, ৮. নেদারল্যান্ডস, ৯. পর্তুগাল এবং ১০. ডেনমার্ক। শীর্ষ দশে থাকা একমাত্র দেশ ইতালি এবারের বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়। ব্রাজিলই একমাত্র দেশ প্রতিটা বিশ্বকাপ খেলায় অংশগ্রহণ করেছে এবং এ পর্যন্ত পাঁচ বার ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০, ১৯৯৪ এবং ২০০২ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।

২০১৮ এবং ২০২২ সালের ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনের হোস্ট নির্বাচনের জন্য বিডিং প্রক্রিয়া ২০০৯ সালের জানুয়ারীতে শুরু হয়। তবে, ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে জুরিখে (Zürich) ২২-সদস্যের ফিফা কার্যনির্বাহী কমিটি উভয় টুর্নামেন্টের আয়োজক নির্বাচনের জন্য ভোট প্রদান করে।

২০১৮ সালের আয়োজক দেশ রাশিয়া নির্বাচিত হওয়ার নিশ্চয়তা পাওয়ার পর, ইউনিয়ন অফ ইউরোপিয়ান ফুটবল এসোসিয়েশন (UEFA) এর সদস্যরা ২০২২ সালের জন্য আর বিডিং প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে নাই। তবে, ২০২২ সালের ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য পাঁচটি দেশের বিড বাকি ছিল। সেই পাঁচটি দেশ হল – অস্ট্রেলিয়া, জাপান, কাতার, দক্ষিণ কোরিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

এই পর্যায়ে ২২-সদস্যের ফিফা কার্যনির্বাহী কমিটি সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে চতুর্থ রাউন্ডে ১৪ ভোট পেয়ে আয়োজক দেশ হিসাবে কাতার নির্বাচিত হয় এবং নিকটতম প্রতিযোগী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পায় ৮ ভোট। দক্ষিণ কোরিয়া আউট হয় চতুর্থ রাউন্ডে, জাপান তৃতীয় রাউন্ডে এবং অস্ট্রেলিয়া নির্মূল হয় দ্বিতীয় রাউন্ডে।

২০১০ সালে কাতার বিশ্বকাপের বিড জেতার পর থেকে ২০ নভেম্বর ২০২২ সালে খেলা শুরু হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর কাতারের “বিশ্বকাপ কেনার” দুর্নীতি এবং বৃহত্তর ফিফা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। পাশাপাশি কাতারে হোমোফোবিয়া, নারীর অধিকার অস্বীকার, অভিবাসী শ্রমিকদের শোষণ, অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং এলজিবিটি অধিকারের অবস্থানের উপর কঠোর সমালোচনা করে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। পশ্চিমা মিডিয়া এ সব বিষয়কে স্পটলাইটে নিয়ে আসে এবং এ নিয়ে যথারীতি হৈচৈ শুরু করে দেয়। অন্যরা কাতারের তীব্র জলবায়ু এবং শক্তিশালী ফুটবল সংস্কৃতির অভাবের কথাও উল্লেখ করে। অতি উৎসাহী কেউ কেউ আবার নৈতিকতার দোহাই দিয়ে বিশ্বকাপ বর্জনের প্রচেষ্টায়ও লিপ্ত ছিল। এখানে উল্লেখ্য যে, বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী সাতটি ইউরোপীয় দেশ ইংল্যান্ড, ওয়েলস, জার্মানি, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডস দলের অধিনায়করা ঘোষণা করে যে তারা খেলা চলাকালীন সময়ে রংধনু আর্মব্যান্ড পরবে যা কি না বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তির জন্য সমর্থনের ইঙ্গিত বহন করবে।

তবে, যতাসময়ে ফিফা এবং আয়োজক দেশ কাতার এসব অভিযোগের ও দাবির যথাযত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ইউরোপীয় দেশগুলির অধিনায়কদের এই ঘোষণার পরে, এক অভূতপূর্ব পদক্ষেপের মাধ্যমে, ফিফা খুব স্পষ্টভাবে সতর্ক করে বলেছিল যে রংধনু আর্মব্যান্ড পরা অধিনায়ক বা যে কোনো খেলোয়াড়কে হলুদ কার্ড দেওয়া হবে। ফিফার এই সতর্কতা এবং শাস্তি ঘোষণার পর ইউরোপীয় দলগুলি টুর্নামেন্ট চলাকালীন এলজিবিটি অধিকারের সমর্থনে “OneLove” আবর্মব্যান্ড পরার পরিকল্পনা থেকে সরে আসে।

১৯ নভেম্বর ২০২২-এ, বিশ্বকাপ শুরুর পূর্বে ফিফার বর্তমান প্রেসিডেন্ট জিওভানি ভিনসেঞ্জো ইনফ্যান্টিনো নৈতিক ভিত্তিতে কাতারের সমালোচনা করার জন্য পশ্চিমা মিডিয়াকে “ভন্ডামি” বলে অভিযুক্ত করেন। তিনি বলেন, “আমি মনে করি, আমরা ইউরোপীয়রা গত ৩,০০০ বছর যা করে আসছি তার জন্য মানুষকে নৈতিক শিক্ষা দেওয়া শুরু করার পূর্বে আমাদের পরবর্তী ৩,০০০ বছরের জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত।”

তিনি আরও বলেন, “কাতার কর্তৃপক্ষের সাথে অভিবাসী কর্মীদের অধিকার নিয়ে আলোচনা না করে মুনাফা অর্জনের জন্য পশ্চিমা কোম্পানিগুলি কাতারে কাজ করছে।”

আয়োজকের বিড জেতার পর থেকে নজিরবিহীন সমালোচনার জবাবে কাতারের আমীর শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি বলেন, “আমরা প্রাথমিকভাবে সরল বিশ্বাসের সাথে বিষয়টি মোকাবেলা করেছি, প্রথম দিকের কিছু সমালোচনা গঠনমূলক ছিল। কিন্তু, পরে কাতারের বিরুদ্ধে একটি অভিযান প্রসারিত হয়েছে, বানোয়াট ও ডাবল স্ট্যান্ডার্ড যা এতটাই হিংস্র ছিল যে এটি দুর্ভাগ্যবশত অনেক লোককে প্রচারণার পিছনে আসল কারণ এবং উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন করতে প্ররোচিত করেছে।”

আমীর আল-থানি আরও বলেন, “আমরা আশা করি এবং আমরা চাই মানুষ আমাদের সংস্কৃতিকে সম্মান করবে।”

এদিকে কাতার ২০২২ বিশ্বকাপের নিরাপত্তা প্রধান আবদুল্লাহ আল নাসারি এক বিবৃতিতে বলেন, “আপনি যদি এলজিবিটি সম্বন্ধে আপনার মতামত প্রকাশ করতে চান, তাহলে আপনি এমন একটি সমাজে তা করুন যেখানে এটি গ্রহণ করা হবে। এখানে এসে পুরো সমাজকে অপমান করবেন না। আমরা ২৮ দিনের জন্য ধর্ম পরিবর্তন করব না।”

উপরন্তু, কাতার ২০২২ বিশ্বকাপকে ঘিরে বিতর্কের রাজনৈতিক মোড় দিতে কেউ কেউ এটিকে বর্ণনা করেছেন – কাতারের ধর্মীয় শাসন এবং পশ্চিমা ধর্মনিরপেক্ষ উদার গণতন্ত্রের মধ্যে একটি সাংস্কৃতিক সংঘাত বা “সভ্যতার সংঘর্ষ”।

আয়োজক দেশ কাতার ২২০ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে করে ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিশ্বকাপ ইভেন্টের আয়োজন করে যা রাশিয়া ২০১৮ বিশ্বকাপের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি ছিল। ১২ বছর আগে কাতার যখন বিড জিতেছিল তখন থেকে দোহা অচেনা। নতুন মহাসড়ক, মেট্রো রেল, নতুন বিমানবন্দর, সমুদ্র বন্দর, শত শত ভবন, হোটেল এবং রেস্তোরাঁ নির্মাণ করে। কাতার তৈরি করে ৭টি অত্যাধুনিক স্টেডিয়াম। নতুন স্টেডিয়ামগুলি হল – আল বায়েত স্টেডিয়াম, আল থুমামা স্টেডিয়াম, আহমেদ বিন আলী স্টেডিয়াম, লুসাইল স্টেডিয়াম, স্টেডিয়াম ৯৭৪, এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম এবং আল জানুব স্টেডিয়াম। এছাড়াও তারা পুরাতন খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামকে সংস্কার এবং প্রসারিত করে।

কাতার ২০২২ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি যথারীতি ২০ নভেম্বর আল বায়ত স্টেডিয়ামে শুরু হয়। এই অনুষ্ঠানের থিম ছিল সমস্ত মানবজাতির জন্য একটি সমাবেশ, মানবতা, সম্মান এবং অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে পার্থক্যগুলি দূর করা। ৩০ মিনিটের অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিখ্যাত হলিউড অভিনেতা মরগান ফ্রিম্যান সাথে ছিলেন কাতার বিশ্বকাপের ব্যান্ড অ্যাম্বাসেডার ঘানিম আল মুফতাহ। ঘানিম এবং কাতারি গায়ক ডানা অন্তর্ভুক্তি এবং বৈচিত্র্যের উপর সংলাপকে উৎসাহিত করেন। পরে ঘানিম পবিত্র কুরআনের সূরা আল হূজুরাতের ১৩নং আয়াতটি তিলাওয়াত করেন, “হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার।”

অনুষ্ঠানটি বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতির মানুষকে একত্রিত করার ফুটবলের ক্ষমতা তুলে ধরে কাতারি সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য প্রদর্শন করে। পাশাপাশি অংশগ্রহণকারী ৩২টি দেশের বিশাল জার্সি, কাতার ২০২২ সংস্করণ লা’ইব, বিশ্বকাপের ইতিহাসের প্রতিটি মাসকট এবং একটি বিশাল স্ফীত প্রতীক সহ একটি গুরুত্বপূর্ণ একীকরণ বার্তা ছিল। এছাড়াও বিটিএস-এর বিখ্যাত দক্ষিণ কোরিয়ার পপ তারকা জং কুক এবং কাতারি গায়ক ফাহাদ আল-কুবাইসি কাতার ২০২২ বিশ্বকাপের অফিসিয়াল সাউন্ডট্র্যাক “ড্রিমার্স” গান পরিবেশন করেন।

অনুষ্ঠানে ফিফা প্রেসিডেন্ট ইনফ্যান্টিনো বলেন, “ফুটবলের পরিবার আল বাইত স্টেডিয়ামে স্বাগতম। প্রিয় বন্ধুরা কাতারে স্বাগতম, বিশ্বকাপে স্বাগতম, আপনার বাড়িতে স্বাগতম এবং ফুটবল উদযাপনে স্বাগতম – কারণ ফুটবল বিশ্বকে এক করে।” এই অনুষ্ঠানে কাতারের আমীর আল-থানি বলেন, “কাতার থেকে এবং একটি আরব দেশ থেকে আমি সবাইকে ২০২২ সালের বিশ্বকাপে স্বাগত জানাচ্ছি।”

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি হাজার হাজার উপস্থিতি এবং বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি দর্শককে বিস্মিত করেছে। অনুষ্ঠানের পরিচালক জেনি-লি ভ্যান গেল্ডার বলেন, “এটি ছিল একটি সুন্দর অনুষ্ঠান যা সুন্দর মানুষদের দ্বারা একত্রিত করা হয়েছে”।

২৮ দিন ব্যাপী উত্তেজনাপূর্ণ বিশ্বকাপ ফুটবল উৎসবটি ১৮ই ডিসেম্বর লুসাইল স্টেডিয়ামে ফাইনাল খেলার মধ্য দিয়ে শেষ হয়। আর্জেন্টিনা এবং ফ্রান্সের মধ্যকার ফাইনাল ম্যাচটি ছিল অসাধারণ বিশ্বকাপ ফাইনাল। ফ্রান্সকে ৪-২ গোলে (পেনাল্টি শুটআউটে) হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনার এই বিজয় ছিল মেসির প্রথম বিশ্বকাপ জয় এবং আর্জেন্টিনার তৃতীয়। ফুটবল পন্ডিতদের মতে এ পর্যন্ত এটাই ছিল ফিফা বিশ্বকাপের সেরা ফাইনাল। পরে, এক প্রেস কনফারেন্সে ফিফার প্রেসিডেন্ট  ইনফ্যান্টিনো বলেন, কাতারে এবারের বিশ্বকাপ “এখন পর্যন্ত সেরা” হয়েছে।

পরিশেষে, নৈতিকতা এবং মানবাধিকার ফেরিওয়ালাদের কুম্ভীরাশ্রু আর সব সমালোচনা ও  বিতর্কগুলিকে পেছনে ফেলে কাতার একটি সফল বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হিসাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াল। একই সময়ে, কাতার বিশ্বের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফুটবল প্রেমীদের উপহার দিল একটি অসাধারণ, ব্যতিক্রমী এবং বিস্ময়কর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। পাশাপাশি সফলভাবে আয়োজন করল উপভোগ্য ৬৪টি ফুটবল খেলা। এর মাধ্যমে, কাতার তার সমস্ত সমালোচকদের এবং বিশ্বকে জানিয়ে দিল যে, আমরাও পারি!

—————————–
লন্ডন, ৩১ ডিসেম্বর ২০২২