ঘুরে এলাম নৈসর্গিক সৌন্দয্যের সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার
:: ইমদাদুর রহমান ইমদাদ ::
কক্সবাজার বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন কেন্দ্র। বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক বালুময় সমুদ্র সৈকত এই কক্সবাজারে অবস্থিত। দেশী বিদেশী অসংখ্য পর্যটকরা এই সমুদ্র সৈকত দেখতে আসেন। বিস্তীর্ণ বেলাভুমি, সারি সারি ঝাউবন, সৈকতে আছড়ে পড়া বিশাল ঢেউ, সমুদ্রে চলা মাছ ধরা নৌকা ও ট্রলার, সকাল বেলা পাহাড় ভেদ করে রক্তবর্ণের থালার মতো সুর্য উদয়, সন্ধ্যায় দিগন্তে সুর্যাস্তের মায়াবী আলো এসব সৌন্দর্যের পসরা নিয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণ – পূর্ব উপকুলে রচনা করেছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। কক্সবাজার তার নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের জন্য বিখ্যাত।
সমুদ্রকে ভালবেসে বার বার কাছে ছুটে যেতে আমার মতো অনেকেরই মন চায়। কেননা সমুদ্রের বিশালতা আমাদের মনকে বিশাল করে। নীলের বৈচিত্র্য মুগ্ধ করে মনকে। স্বচ্ছ জলরাশি আমাদের ভাবতে বাধ্য করে, আমি কোথায়? স্বর্গে না কি পৃথিবীতে? দীর্ঘ গরমের তীব্র তাপ কাটিয়ে শিশির ভেজা ঘাস যখন স্নিগ্ধ মিষ্টি সুবাস ঠান্ডা হাওয়া, কুয়াশার আভাস জানান দিচ্ছে চলে এসেছে শীত। ঠিক এমনই সময়ে রোটার্যাক্টরা মেতে উঠেন বিভিন্ন আনন্দ আয়োজনে। এরই ধারাবাহিকতায় রোটার্যাক্ট জেলা সংঘঠন ৩২৮২ বাংলাদেশ এর সকল রোটার্যাক্টরা মেতে ওঠেছিলেন পিকনিক ও সমুদ্র সৈকত ভ্রমণে।
রোটার্যাক্ট জেলা সংগঠন ৩২৮২ বাংলাদেশ এর উদ্যোগে ২২ডিসেম্বর ২০১৬ ইংরেজী তারিখে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার কবিতা চত্বর স্থানে অনুষ্ঠিত হয় ৪র্থ রোটার্যাক্ট ডিসট্রিক্ট পিকনিক “জয়আস ১৬।” এতে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগ, জেলা, উপজেলা থেকে আগত রোটার্যাক্টদের উপস্থিতিতে মিলনমেলায় মুখরিত হয়ে উঠে লাল-নীল আলোর অতিশবাশীর শহর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। এতে অনেক মহিলারাও অংশ নেন।
সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে সকাল ১০ টায় ট্রেন যোগে রওয়ানা দেন সিলেটের রোটার্যাক্টরা। প্রায় ১২ ঘন্টা জার্নির পর চট্রগ্রামে পৌঁছে ৪৫ মিনিট বিরতি দিয়ে সেখান থেকে বাস যোগে আরো প্রায় ৩ ঘন্টা পর গন্তব্যস্থলে পৌঁছান। যাত্রার শুরুতে শুভেচ্ছা ও স্বাগত জানিয়ে কতিপয় দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ তুলে ধরেন এ ডি আর আর রোটারেক্টর এস রহমান সায়েফ, জেলা সেক্রেটারি রোঃ মিনহাজুল আবেদীন, মঞ্জুর আহমদ, কো- অডিনেটর রোঃ আবুল হোসেন , শিশির সরকার প্রমুখ।
লং জার্নির সময় ট্রেনে আনন্দ দিতে গান, কৌতুক, অভিনয় করে মাতিয়ে রাখেন রোটারেক্টর মাহবুব কামালী, রোঃ ইমদাদুর রহমান ইমদাদ, রোঃ এনামুল হক, রোঃ উবায়েদ আহমদ সায়মন, রোঃ আবদুল্লাহ রহমান, রোঃ সুমন চক্রবর্তী ও রোঃ রিজু। টানা ১৫ ঘণ্টা লং জার্নি শেষে রাত ৪ টায় গন্তব্যস্থলে পৌঁছে স্থানীয় একটি ভাড়াটে হোটেলে আমরা অবকাশ যাপন করি । হোটেলে রাত্রিযাপন করে পরদিন সকাল ৮ টায় ঘুম থেকে উঠে রেস্টুরেন্টে সকালের নাস্তা শেষে বেরিয়ে পড়ি দিগন্ত বিস্তৃত নীল সমুদ্র, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে। উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে সকাল ১০ টায় কবিতা চত্বরে শুরু হয় কালচার প্রোগ্রাম ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ডি.আর.আর শাহ জুনেদ আলীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, ডি.আর.সি.সি রোটারীয়ান আলী আজম চৌধুরী তমাল, রোটারিয়ান মোস্তফা আশরাফুল ইসলাম আলভী, আই.পি.ডি.আর মোঃ সাজ্জাদ, ডিসট্রিক্ট ফাউন্ডেশনের মেম্বার রোঃ ইমরান চৌধুরী, এ.ডি.আর.আর রোঃ মোঃ হাফিজুল হক, রোঃ এস রহমান সায়েফ, রোঃ জিয়া উদ্দিন হায়দার শাকিল, রোঃ শরিফুল ইসলাম অপু প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ডি আর সিসি কর্তৃক বেষ্ট রোটারেক্ট, বেষ্ট প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি ও কো-এডিটর নির্বাচিত করা হয়। এবং বিভিন্ন ক্লাবকে বেষ্ট রেজিস্ট্রেশন এওয়ার্ড প্রদান করা হয়। সিলেটের বেষ্ট রোটারেক্টর নির্বাচিত হন রোটার্যাক্টর আবু বশর শাকু। এবং বেষ্ট প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রোটার্যাক্ট ক্লাব অব সিলেট পাইনিওয়ারে সভাপতি রোঃ খয়রুল ইসলাম এবং রোটার্যাক্ট ক্লাব অব সিলেট সেন্ট্রাল এর সভাপতি রোঃ শাহ আল আমিন। বেষ্ট সেক্রেটারি নির্বাচিত হন রোঃ মঞ্জুর আহমদ এবং বেষ্ট কো-এডিটর নির্বাচিত হন রোঃ আবুল হোসাইন ও রোঃ শিশির সরকার। অনুষ্ঠানে ছেলে মেয়েদের জন্য বিভিন্ন ইভেন্ট এর আয়োজন করা হয়। ছেলেদের জন্য ছিল দৌড় ও রশি টান প্রতিযোগিতা। রশি টান প্রতিযোগিতায় সিলেট, চিটাগাং, কুমিল্লা ও ফেনী জেলা অংশ গ্রহণ করে। টানটান উত্তেজনায় খেলার ফাইনালে সিলেট তাদের নিজস্ব শক্তি সামর্থ্য দেখিয়ে ফেনী জেলাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ার গৌরব অর্জন করেন। খেলা শেষে ভ্রমণ পিপাসু অংশকারীরা সমুদ্র সৈকতে দুপুরের খাওয়া-দাওয়া করেন। খাওয়া শেষে অনেকেই আনন্দ মনে মোঠোফোনের সাহায্যে বারবার সেলফী তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এর পর শুরু হয় সমুদ্র তীরে, জ্যোৎস্নার ঝিকিমিকি বালুকার চরে, লবণাক্ত পানিতে সাঁতার কাটা, হৈ হুল্লোড়, হ্যান্ডবল খেলা ও গ্রুপ ছবি তোলা। দিনব্যাপী সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণ ও পিকনিকের আনন্দ উপভোগ করতে করতে যখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে তখন শুরু হয় সূর্যের লুকোচুরি দেখার দৃশ্য। সূর্য তার সব রুপ বৈচিত্র্য নিয়ে হেলে পড়ে সাগর পাড়ে। সূর্যাস্তের এই দৃশ্যটি খুবই চমৎকার। সত্যিই এই সময়টি স্মরণীয় হয়ে থাকবে চিরকাল।
এবার ঘরে ফিরার পালা। আনন্দে আতঙ্কে, নিশি নন্দনে, উৎসবে উল্লাসে, সাগরের উত্তাল ঢেউ আর লাল নীল সূর্যের আয়নাবাজী দেখতে দেখতে ফিরতে হলো হোটেলে। মন তখনো মগ্ন। ফিরতে চায়না যান্ত্রিক শহরে। ঘরে ফেরা সবার অন্তরে তখন উচ্চারিত হয়েছিল, “এমন যদি হতো, আমি উড়ে উড়ে বেড়াই সারাক্ষণ, পাখির মতো। ”
লেখকঃ ফ্রান্স প্রবাসী, সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক, সিলেট ছাত্র ও যুব কল্যাণ ফেডারেশন।