একজন আলোকিত মানুষ মোহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ
সাদেকুল আমীন:
অমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ আছেন যাদের সাথে আপনি যে কোন বিষয় নিয়ে সাবলিলায় আলাপচারিতা করতে পারেন। এই ধরণের আলাপচারিতার মধ্যে থাকে বেশ কিছু ইতিবাচক দিক, থাকে ভালো অনুভূতি, বিষয়গুলি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অন্বেষণের আগ্রহ, ক্রিটিকাল থিংকিং এবং এর পাশাপাশি থাকে বিভিন্ন শিক্ষনীয় দিক।
যুক্তরাজ্যে এখন সামার মৌসুম চলছে। আবহাওয়া বেশ চমৎকার। আমার প্রিয় নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া, যা কখনও কখনও দিনের বেলা উঁকি মারে। তখন শীত – গ্রীষ্মের উষ্ণতার পার্থক্য খুব কম থাকে। যেটি খুব গরমও নয় আবার খুব ঠান্ডাও নয় এবং যার একটা আলাদা অনুভূতি আছে।
কিছু তত্ত্ব এবং The Giant Impact Hypothesis অনুসারে, বলা হয় যে ঋতু শুরু হয় ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে। এটি হয়েছিল যখন থিয়া (Theia planet) পৃথিবীকে ভীষণভাবে আঘাত করে। থিয়ার এবং পৃথিবীর এই সংঘর্ষের ফলে পৃথিবী প্রায় ২৩.৫ ডিগ্রি কাত হয়ে যায়। এটি পৃথিবীর অক্ষীয় কাতকেও (axial tilt) পরিবর্তন করে। তখন থেকেই পৃথিবীর অক্ষীয় কাত ২৩.৫ ডিগ্রি হয়। এই অক্ষীয় কাত হওয়ার কারণে, সূর্য সারা বছর বিভিন্ন কোণে বিভিন্ন অক্ষাংশে আলোকিত হয়। এর ফলে ঋতু হয়।
বাহিরে গাছে গাছে সবুজ পাতা আর রঙ বেরঙের ফুলের অপরূপ দৃশ্য চোঁখে পড়ার মত। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালগুলো এখন গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে আছে। আমার কাছে মনে হলো সম্মানিত এই মানুষের সাথে বসে আলাপচারিতা করার এটাই উপযুক্ত সময়।
আমরা বেশ কয়েকবার দিন এবং তারিখ ঠিক করেও উনার সাথে বসে আলাপচারিতা করতে পারিনি। প্রবাস জীবনের শত ব্যস্ততার কারণে তা বাস্তবে রুপ নিতে পারেনি। কিন্তু, এবার উনার সাথে আলাপচারিতার দিন ও তারিখ ঠিক করে এতে অঠল থাকলাম। তখন, আমার মনে পড়ল কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত কথা – “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলরে”। উনার সাথে আলাপচারিতা করে আমরা তাঁর জীবনের অনেক জানা-অজানা কথা এবং অভিজ্ঞতা জেনে নিব।
রবিবার, ৬ই আগস্ট ২০২৩, সুন্দর এক পড়ন্ত বিকালে গিয়ে হাজির হলাম উনার বাসায়। সময় স্বল্পতার কারণে কথা ছিল আমরা মাত্র ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট আলাপচারিতা করব। কিন্তু, আমরা এই সময়সীমা রাখতে পারিনি। তবে, ঘড়ির কাঁটা টিক টিক করে তার আপন গতিতে চলছিল। আমরা প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টারও বেশী সময় আলাপচারিতা করেছি। সময় খুব দ্রুত চলে গেছে যা আমাদের খেয়ালের মধ্যে ছিলনা। তারপরও আমাদের কথোপকথন শেষ হয়নি! সময় দূরত চলে যাওয়া নিয়ে ইংরেজিতে একটি সুন্দর প্রবাদবাক্য আছে, যা হল, “Time flies when you’re having fun”। আমাদের আলাপচারিতা ছিল অত্যন্ত আন্তরিক এবং স্বতঃস্ফূর্ত। এখানে কোন দ্বিধাদন্ধ ছিলনা। ছিলনা কোনো সংকীর্ণতা, সংকোচ এবং সংশয়।
আজ যাঁর সাথে বসে আলাপচারিতা করে এখানে উপস্থাপন করব তিনি লন্ডনে আমার অত্যন্ত প্রিয় এবং শ্রদ্ধেয় ব্যাক্তি জনাব মোহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ। তিনি কানাইঘাট এসোসিয়েশন ইউকে-এর প্রাক্তন সেক্রেটারি, সভাপতি এবং বর্তমান এডভাইজারি পরিষদের সদস্য। তিনি অত্যন্ত নম্র, ভদ্র, মার্জিত, অমায়িক, মৃদুভাষী, প্রচারবিমুখ এর পাশাপাশি সৎ, নিষ্ঠাবান, জ্ঞানী এবং সর্বোপরি একজন আলোকিত মানুষ।
মোহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ ১৯৬২ সালের জুন মাসে সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলার ৭নং দক্ষিণ বাণীগ্রাম ইউনিয়নের নওয়াগাও গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর পিতা হাজী হাবিব আলি ও মাতা মোসাম্মাৎ হাফসা বিবি। দাদা আব্দুল মুকিত এবং দাদি মারিয়া বিবি। নানা হাজী মসদ্দর আলি চৌধুরী এবং নানি মোসাম্মাৎ সরবান বিবি। নানার বাড়ি একই ইউনিয়নের নিজ বাউরভাগ গ্রামে।
দুই ভাই এবং এক বোনের মধ্যে মোহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ সবার ছোট। বড় ভাই মোহাম্মদ ছইফ উল্লাহ এবং বোন মোসাম্মাৎ মরিয়ম বেগম।
তাঁর শৈশব ছিল বড়ই বৈচিত্র্যময় বড়ই আনন্দের। বড় হয়েছেন যৌথ পরিবারে আর সেখান থেকেই শিক্ষা পেয়েছেন মানবিক মূল্যবোধের এবং একে অন্যের বিপদ আপদে সাহায্য সহযোগীতার গুরুত্ব সমন্ধে। তখন তিনি ছিলেন পড়ালেখা বিমুখ। খেলাধুলা আর পরিবারের বিভিন্ন কর্মকান্ডে তিনি ছিলেন ব্যাস্ত। তবে, বাড়ির বাউন্ডারীর ভিতরে ছিল নওয়াগাও পশ্চিম মহল্লা মসজিদ। শৈশবে এই মসজিদের মক্তবে তিনি ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করেন। সেখানে তিনি আরবি কুরআন পড়া এবং ইসলামের মৌলিক মাসআলা- মাসায়েল ও এর প্রয়োজনীয়তা শিখেছেন।
১৯৬৭ সালে তিনি নওয়াগাও প্রাইমারি স্কুলে পড়ালেখা শুরু করেন। তবে, তিনি স্কুল একাডেমিক বছর শুরু হওয়ার কিছুদিন পর ভর্তি হয়েছিলেন। এ জন্য প্রথম শ্রেণীতে তিনি পড়েন মাত্র পাঁচ মাস। তিনি ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত এই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন। তখন থেকেই তাঁর মধ্যে জাগ্রত হয় পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ। আর দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতিবছর বার্ষিক পরিক্ষায় তিনি ক্লাসে প্রথম হন। একাত্তরে দেশে যখন যুদ্ধ চলছে তখন স্কুলের প্রধান শিক্ষক বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ করেননি। তাই ১৯৭১ সালেই তিনি কৃতিত্ত্বের সাথে পঞ্চম শ্রেণী শেষ করেন।
১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচনের জন্য সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে এলাকার প্রার্থীদের নাম, নির্বাচনী প্রচারণার মজার মজার স্লোগান এবং অন্যান্য কার্যক্রম এখনও তাঁর স্পষ্ট মনে আছে।
১৯৭২ সালে তিনি জমশেদ আহমদ উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। এই স্কুলটি বিয়ানীবাজার উপজেলার কাকুরাতে অবস্থিত। সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশে পাঠ্যপুস্তক না থাকার কারণে ষষ্ঠ শ্রেণীতে প্রথম কয়েক মাস পঞ্চম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক পড়ানো হয়। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। এই স্কুলেও তিনি ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতিবছর বার্ষিক পরিক্ষায় ক্লাসে প্রথম হন। এই স্কুলটি মেট্রিক পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল না। তাই তিনি গোলাপগঞ্জের মোহাম্মদ চৌধুরী একাডেমীতে মেট্রিক পরীক্ষা দেন। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে যাতায়াতের সুবিধার্থে প্রায় এক মাস তিনি মান্দার গ্রামে তাঁর এক বন্ধু সালেহ আহমদের বাড়িতে ছিলেন। মেধাবী মোহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ ১৯৭৭ সালে মানবিক বিভাগে কৃতিত্ত্বের সাথে মেট্রিক পরীক্ষা পাশ করেন এবং ভালো ফলাফলের জন্য বৃত্তি পান।
তিনি ছোটবেলায় বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়া আসার পথে এলাকার বড়দের আনেকের সাথে তাঁর দেখা সাক্ষাত এবং কথাবার্তা হত। পাশাপাশি তিনি প্রায়ই গ্রামের বড়দের পাশে বসে তাদের আলাপ-আলোচনা মনযোগ দিয়ে শুনতেন এবং জানার আগ্রহ নিয়ে তাদের কাছে প্রশ্ন করতেন। তাদের প্রায় সবার নাম উনার এখনও স্পষ্ট মনে আছে। আমি উনার বাসা থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণ পর যখন A12 রাস্তায় ড্রাইভ করছিলাম, তিনি এর মধ্যেই আমাকে টেক্সট ম্যাসেজের মাধ্যমে তাদের অনেকের নাম পরিচয় পাঠিয়ে দেন। বর্ষাকালে তিনি স্কুলে যাতায়াতের সুবিধার্থে সাধারণত প্রায় চার মাস বাণীগ্রামে তাঁর ফুফুর বাড়িতে থাকতেন। ছোটবেলার এসব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তিনি বিশেষ কিছু দক্ষতা অর্জন করেন আর তা হল এলাকার মানুষের বংশ পরিচয় এবং মৌলিক ধর্মীয় বিষয়ের মৌখিক ইতিহাস (oral history)। তখন থেকেই ইতিহাসের প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ জন্ম নেয়।
১৯৭৭ সালে তিনি সিলেট এমসি কলেজে মানবিক বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৭৯ সালে কৃতিত্ত্বের সাথে ইন্টারমিডিয়েট শেষ করেন। পরবর্তীতে তিনি একই কলেজ থেকে ১৯৮২ সালে বিএ ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।
তিনি নিজ আগ্রহে, ১৯৮৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি কোর্সে ভর্তি হন। তখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মোহাম্মদ মহসিন আবাসিক হলে থাকতেন। সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন জট ছিল আর এ কারণে যথাসময়ে পরিক্ষা হয় নাই। পরে তিনি ১৯৮৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে কৃতিত্বের সাথে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।
তবে, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশন জটের সময়কে থাযথভাবে কাজে লাগান এবং ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ ল কলেজে LLB কোর্সে ভর্তি হন। তিনি ১৯৮৮ সালে তা সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করেন।
পরবর্তীতে তিনি সিলেট চলে আসেন এবং ১৯৮৮ সালের অক্টোবর মাসে সিলেট কোর্টে যোগদান করেন। তিনি সিলেটের স্বনামধন্য উকিল সুলেমান রাজা চৌধুরী সাহেবের অধীন প্রায় ৯ মাস কাজ করেন। সেই সময়, তিনি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এবং চাঞ্চল্যকর কেইসে উনার সহযোগী হিসেবে কাজ করেন।
মোহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ ১৯৮৮ সালের জুন মাসে নওয়াগাও গ্রামের মুহাম্মদ মমতাজ আলি ও মোসাম্মাৎ আসিয়া বিবির বড় মেয়ে মোসাম্মাৎ মনওয়ারা বেগমের (আফিয়া) সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
তিনি তাঁর বিয়ের প্রায় এক বছর পর, ১৯৮৯ সালের আগস্ট মাসে ইউকেতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য চলে আসেন। এখানে আসার পর প্রথম কয়েক মাস তিনি ইষ্ট লন্ডনের ব্রিকলেনস্থ একটি ট্রাভেল এজেন্টে কাজ করেন। পাশাপাশি তিনি তৎকালীন লন্ডন গিল্ডহল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন এবং কিছুদিন সেখানে পড়ালেখা করেন।
তিনি ১৯৯০ সালে ইস্ট লন্ডনের অ্যালডগেইট আন্ডারগ্রউন্ড স্টেশন এর পাশে Alie ষ্ট্রীটে অবস্থিত ‘Namaste’ রেস্টুরেন্টে কাজ শুরু করেন। ১৯৯৫ সালে রেস্টুরেন্টির নাম পরিবর্তন করে ‘Café Spice Namasté’ নামকরণ করা হয় এবং Tower of London এর পাশে প্রেস্কট ষ্ট্রীটে স্থানান্তরিত হয়। তিনিও তখন সেখানে চলে আসেন। এটি Celebrity Chef Cyrus Todiwala OBE র মালিকানাধীন পুরস্কার প্রাপ্ত রেস্টুরেন্ট গুলোর মধ্যে একটি।
তিনি দীর্ঘদিন থেকে Mr Todiwala র সব রেষ্টুরেন্ট এবং অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের HR ম্যনেজার হিসেবে ২০২১ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। তবে, ২০২১ সালের শেষের দিক থেকে একই মালিকানায় Royal Dock এ Mr Todiwala’s Academy নামে নতুন করে ব্যবসা শুরু হলে তিনি আবারও HR ম্যনেজারের দায়িত্ব পান। তিনি দীর্ঘ প্রায় ৩৩ বছর থেকে একই মালিকানাধীনের আওতায় ভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সুনামের সাথে কাজ করছেন। বর্তমানে তিনি এই একাডেমির এইচআর ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
চাকুরীর পাশাপাশি ২০০২ সালের জানুয়ারী মাস থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর Spice Mania নামে একটা কোম্পেনীর ডাইরেক্টরও ছিলেন তিনি।
আমাদের আলাপচারিতার মধ্যেও আতিথেয়তা এবং আন্তরিকতার কোনো কমতি ছিল না। পরিবেশন করা হলো টেবিল ভর্তি নানা রকম ফলমূল, সমোসা, পিঠা আর চা বিস্কুট। আমরা আমাদের কথোপকথনের ফাঁকে ফাঁকে একটু একটু করে খেয়ে নিলাম।
মোহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ বাংলাদেশে তাঁর স্মৃতি এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা অত্যন্ত সাবলীলভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্লাটফর্মে মাঝে মাঝে শেয়ার করেন। তিনি যখন বাংলাদেশে ছিলেন তখন তিনি বিশেষ করে তাঁর এলাকা কানাইঘাটের শিক্ষা ও আর্থসামাজিক অবকাঠামোলক উন্নয়ন কর্মকান্ডের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সংঘ কানাইঘাট এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ১৯৮৬ সালে তিনি এই সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনা গাছবাড়ি সমাজ কল্যান সমিতির আজীবন সদস্য।
তিনি যুক্তরাজ্যে আসার পরও এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। ১৯৮৯ সালে লন্ডনে আসার মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যেই তিনি যুক্তরাজ্যে কানাইঘাট এলাকার মানুষের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বিলেতে বসবাসরত কানাইঘাটবাসীদের প্রতিনিধিত্বকারী প্রথম এবং একমাত্র অরাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন কানাইঘাট এসোসিয়েশন ইউকের সাথে সম্পৃক্ত হন।
তিনি ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত এই সংগঠনের সাধারন সদস্য ছিলেন। তবে, তিনি ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত এসিস্টেন্ট সেক্রেটারি ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৯৯-২০০২ এবং ২০০২-২০০৪ পর্যন্ত দুই মেয়াদে এ সংগঠনের জেনারেল সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি যথাক্রমে ৬ বৎসর কার্যকরী কমিটির সদস্য এবং ৫ বৎসর সহ-সভাপতি ছিলেন। পরে তিনি ২০১৫-২০১৭ টার্মে সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সাল থেকে তিনি এই সংগঠনের একজন সম্মানিত উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। গত প্রায় ৩৪ বছর থেকে তিনি এই সামাজিক সংগঠনের বিভিন্ন পদে তাঁর বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। বর্তমানেও তিনি এই সংগঠনের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকান্ডে সাধ্যমতো অবদান রাখছেন।
তিনি একজন সমাজ ও রাজনীতি সচেতন মানুষ। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে তিনি গভীর জ্ঞান ধারণ করেন এবং এ বিষয়ে তিনি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত একজন মানুষ। তিনি দীর্ঘ ৩৪ বছর থেকে বিলেতে বসবাস করছেন। লন্ডনে ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত আছেন। সামাজিক যে কোন ভাল কাজের সাথে তিনি নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন এবং যথাসম্ভব কাজ করেন।
লন্ডনে কানাইঘাটী কমিউনিটির অনেকেই তাঁকে “Encyclopedia Britannica” এর সাথে তুলনা করেন এবং “এনসাইক্লপিডিয়া কানাইঘাট” বলে থাকেন। পাশিপাশি, এই কমিউনিটির অনেকেই উনাকে কানাইঘাটের “ডিকশনারী” বলে থাকেন। বিশেষ করে, তিনি এ উপজেলা এবং এলাকার মানুষ সম্বন্ধে গভীর জ্ঞান ধারণ করেন।
যুক্তরাজ্যে আসার পর থেকেই তিনি ইস্ট লন্ডনের ফরেস্ট গেইট এলাকাতে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তিনি প্রায় ২০ বছর ছিলেন। পরে তিনি ২০১১ সালে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ইলফোর্ড এলাকায় চলে যান। এখানে তিনি প্রায় ১২ বছর যাবত বসবাস করছেন।
মোহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ একজন সফল এবং গর্বিত পিতা। উনার তিন মেয়ে আর তিনজনই ইংল্যান্ডের বিখ্যাত রাসেল গ্রুপ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে পড়ালেখা শেষ করেছেন। তাঁর প্রথম মেয়ে মোসাম্মাৎ রোকেয়া বেগম University College London (UCL) থেকে Pharmacy তে মাস্টার্স ডিগ্রি করেন। দ্বিতীয় মেয়ে তাসনিমা বেগম Queen Mary University (QMU) থেকে Dentistry তে distinction সহ ডিগ্রি শেষ করে আবার কৃতিত্ত্বের সাথে এমএসসি সম্পন্ন করেন। আর ছোট মেয়ে জাকিয়া বেগম বড় বোনের মতো University College London (UCL) থেকে Pharmacy তে মাস্টার্স ডিগ্রি করেন। উনার তিনজন মেয়েই National Health Service (NHS) এ উচ্চ পদে চাকুরীতে নিয়োজিত আছেন। বড় মেয়ে ও মেজো মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বড় মেয়ের ঘরে দুই নাতি এবং মেজো মেয়ের ঘরে এক নাতি।
তিনি দীর্ঘদিন থেকে রন্ধনসম্পর্কীয় এবং খাদ্য পরিষেবা ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন। তারপরও ঘরের রান্না শাক, সবজি এবং মাছের তরকারি আর বিশেষ করে আইড় মাছ ভূনা খাবার তাঁর খুব প্রিয়। তিনি কখনও ঘরের রান্নার স্বাদ সম্পর্কে কোন নেতিবাচক মন্তব্য করেননি। তাঁর প্রিয় ফুল গোলাপ আর প্রিয় ফল আম এবং কাঠাল।
তিনি তাঁর অবসর সময়ে নাতিদের নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। পাশাপাশি তিনি বাড়ির পাশে একটি গার্ডেনের প্লট লিজ নিয়েছেন এবং সেখানে শাক সবজির চাষ করেন। পরিবার-পরিজন এবং সন্তান-সন্ততি নিয়ে তিনি একজন সুখী ও সফল মানুষ।
আমরা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করি যেন তিনি মোহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ সাহেবকে দীর্ঘ, সুস্থ এবং নেক হায়াত দান করেন। আমিন।
———————————–
লন্ডন, ৩০ আগস্ট ২০২৩