এমসিএ’র মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা
আদর্শবার্তা ডেস্ক :
নেই কেহ নেই আল্লাহ ছাড়া- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। এমন গানে গানে মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ছিল ইস্ট লন্ডনের এলএমসি প্রাঙ্গনে। সময়ের আগেই জড়ো হতে থাকেন নবীন-প্রবীণ শিল্পী ও সংগীত প্রেমিরা। মুসলিম কমিউনিটি এসোসিয়েশন (এমসিএ) আয়োজিত কালচারাল কন্ফারেন্সে যোগ দিয়ে ছিলেন ১১ সংগঠনের বিপুল সংখ্যক সাংস্কৃতিক কর্মী।
শুক্রবার (১ মার্চ ২০২৪) অনুষ্ঠিত এই সংগীতসন্ধ্যা উপভোগ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। শিল্পীদের কন্ঠ লহরিতে মুগ্ধ-আপ্লুত হয়েছেন তারা। তরঙ্গায়িত হয়েছেন বাংলা ভাষার এমন সৃষ্টি সৌকর্ষে।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধান অতিথি ব্যারিষ্টার হামিদ আজাদ একঝাক বাছাই করা শিল্পী নিয়ে কালজয়ী শিল্পী মতিউর রহমান মল্লিকের গানে কন্ঠ দিলেন। তিনি যে এমন ভালো গাইতে পারেন তা অনেকের জানা ছিল না। প্রাণ খুলে গাইলেন দারুণ মিষ্টি কন্ঠে। সবার মন ছুঁয়ে গেল।
“পাখির গানে গানে হাওয়ার তানে তানে ঐ নামেরই পাই মহিমা হলে আপনহারা” পংক্তিটি এমন হৃদয় দিয়ে গেয়েছেন, মনটা যেন মুচড় দিয়েছে। আর তখনই উপস্থিত সকলে শিল্পীদের সাথে সুর ধরলেন “ফুলের ঘ্রাণে ঘ্রাণে অলির গুঞ্জরণে ঐ নামেরই গান শুনে মন দেয় যে নীরব সাড়া”। “আকাশ নীলে নীলে মুখর ঝিলে ঝিলে ঐ নামেরই ঝর্ণাধারা আকুল ব্যাকুল পারা”। পুরো গানটাই যেন সকলের মুখস্ত।
এরপর প্রাণবন্ত আসরে চলেছে একের পর এক গান, কবিতা আবৃত্তি, নাটিকা ও মূকাভিনয়। অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করে ম্যাসেজ কালচারাল গ্রুপ, ওয়াননেস কালচারাল গ্রুপ, ভিশন কালচারাল গ্রুপ, রেনেসাঁ কালচারাল গ্রুপ, প্রেরণা কালচারাল গ্রুপ, সাইট এন্ড সাউন্ড কালচারাল গ্রুপ, প্রয়াস কালচারাল গ্রুপ, আল হেরা কালচারাল গ্রুপ, থেম্স কালচারাল গ্রুপ, ফ্লাওয়ার বাড ও তারান্নুম কালচারাল গ্রুপের শিল্পীবৃন্দ।
তবে সুরের স্রোতে আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যায়নি কল্পলোকে। জাগিয়েছে চেতনা ও প্রেরণা। কেবল নাটক আর গান নয়, আলোচনাও ছিল শিক্ষনীয়। মুগ্ধতায় ভরপুর। মনের ক্যানভাসে যেন আঁকিয়ে দেয়া সত্য সুন্দরের ছবি।
মুসলিম কমিউনিটি এসোসিয়েশন (এমসিএ) আয়োজিত কালচারাল কন্ফারেন্সে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রেসিডেন্ট ব্যারিষ্টার হামিদ হোসাইন আজাদ বলেছেন, আমাদের সংস্কৃতি হবে প্রশান্তিময় গতিশীল সমাজ গঠনের সংস্কৃতি। এটি বেহায়াপনার উদ্দাম চর্চা নয়, অনৈকিতকতার সুড়সুড়ি মাখা গানের চর্চা নয়, স্বার্থপরতার পদলেহী নাটকের মঞ্চায়ন নয়, হিংসা ও পরশ্রীকাতরতায় পূর্ণ কাব্য গাথা নয়, দানবিকতার উন্মেষ ঘটানোর নগ্ন হাতিয়ার নয়, ইতিহাস বিকৃতির গাল্পিক প্রতিযোগীতাও নয়। বরং আমাদের সংস্কৃতি আত্নিক ও মানবিক মূল্যবোধের উজ্জীবন ঘটানোর সংস্কৃতি, আমাদের সংস্কৃতি সুন্দর ও সাবলীল সমাজ বিনির্মানের সংস্কৃতি, আমাদের সংস্কৃতি সামাজিক ঐক্য ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার সংস্কৃতি, আমাদের সংস্কৃতি ন্যায় ও নৈতিকতার বিকাশ সাধনের সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতি স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির নৈকট্য প্রতিষ্ঠার সংস্কৃতি।
ব্যারিষ্টার হামিদ দৃঢ়তার সাথে বললেন, আমাদের সংস্কৃতি হবে ফিলিস্তিন ও মিয়ানমার সহ বিশ্বময় নিষ্পেষিত মজলুমের পক্ষে ঊদ্দীপনা সৃষ্টির গান, আমাদের সংস্কৃতি হবে হতাশাগ্রস্থ অসহায় মানুষের মনের আকাশে আশার ধ্রুবজ্যোতি জালানোর গান। পাহাড় বনানী, সাগর নদী আর পাখ পাখালির সুরের তানে আমাদের সংস্কৃতি হবে বিশ্ব জাহানের মালিকের শ্রেষ্টত্বের গান। মহান রবের একত্বের গান।
অনুষ্ঠানটি লাইভ সম্প্রচার করেছে ব্রিটেনের জনপ্রিয় টেলিভিশন ইসলাম চ্যানেল। এছাড়া অনলাইনে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেখেছেন বহু সংখ্যক সঙ্গীতপ্রেমী মানুষ।
এমসিএ’র কালচারাল ডিপার্টমেন্টের ডাইরেক্টর মনোয়ার হোসেন ও মাহদী হাসান ভূঁইয়ার পরিচালনায় অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল মতিন চৌধুরী। উপস্থিত সকল অতিথি এবং দেশ-বিদেশে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহনকারীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অনুষ্ঠানের পরিচালক।
এমসিএ’র কালচারাল কন্ফারেন্সে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন লেখক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ। প্রধান অতিথির সাথে প্রতিধ্বনি করে তারাও বলেছেন- এমন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আমাদের মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটাবে। যেটি আলোকিত পৃথিবী গড়ার কথা বাতলাবে। বলবে মানবতার কথা, সামাজিক ঐক্যের কথা, জালিমের বিরূদ্বে সোচ্চার প্রতিবাদী হওয়ার কথা। বলবে স্বাধীনতার কথা, কোরআনের কথা। চারদিকে ছডিয়ে দেবে প্রিয়নবীর আদর্শ জীবনের আলোকচ্ছটা।