প্রচ্ছদ

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি : ৬ উপজেলা প্লাবিত

  |  ১৯:০২, মে ৩১, ২০২৪
www.adarshabarta.com

আদর্শবার্তা ডেস্ক :
ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে সিলেটের ৬টি উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। কয়েকদিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে ভারত সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর উপজেলায় সারি নদী আগেই বিপদসীমার ওপরে ছিল। সেই সঙ্গে বুধবার রাতে মেঘালয়ের পাহাড় থেকে নামা ঢলে দ্রুতই তলিয়ে যেতে থাকে উপজেলা।
পাশাপাশি পাহাড়ি ঢলে ভয়াল বন্যার একইচিত্র সিলেটের গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জকিগঞ্জ উপজেলাতেও। নতুন করে বিয়ানীবাজারের বিভিন্ন এলাকায় বাড়ছে পানি। সবমিলিয়ে এই ৬ উপজেলায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় সুনামগঞ্জ জেলায়ও নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। ফলে বন্যার আশঙ্কায় রয়েছেন হাওরপাড়ের মানুষ।
সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বাড়লেও উদ্ধার তৎপরতার তেমন কোন চিত্র চোখে পড়েনি। পানিবন্দী অনেক মানুষের আর্তনাদের চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। একই সাথে ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকেই নৌকা নিয়ে পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার করতে যান। এখনো অনেক মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টায় সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় সারি নদী একদিনে ২০২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ছাড়াও, সুরমা নদী কানাইঘাট উপজেলা পয়েন্টে ১৯৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ১৬৬ সেন্টিমিটার ওপর, কুশিয়ারা নদী জকিগঞ্জের অমলসীদ পয়েন্টে ২২০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ২০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে ৬৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যার ফলে সিলেটের নদ-নদীর পানি দ্রুত বেড়েছে।
এদিকে পানিবন্দি বাসিন্দাদের জন্য সিলেটের ৫টি উপজেলায় ৪৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সিলেটের জেলা প্রশাসন সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এসব উপজেলার দূর্গত মানুষের জন্য শুকনো খাবার, চাল ও নগদ টাকা সংশ্লিষ্টদের হস্তান্তর করা হয়েছে।
বুধবার থেকে সিলেটের গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জকিগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দারা ভয়াবহ বন্যার কারণে পানি বন্দি হয়ে পড়েন। এতে অনেকেই ঘড়-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করেছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বন্যা দুর্গতদের জন্য সিলেট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী সিলেটের ৫ টি উপজেলার প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন সিলেট জেলা কালেক্টরেটের সহকারী কমিশনার মো. ওমর সানী আকন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সিলেট ৫টি উপজেলা গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জকিগঞ্জ উপজেলার বন্যাদুর্গত বাসিন্দাদের জন্য ১ হাজার বস্তা শুকনো খাবার, ৭৫ মেট্রিক টন চাল ও নগদ আড়াই লাখ টাকা ও ত্রাণসামগ্রী উপবরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এসব উপজেলায় আরও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হবে।
সিলেটের ৫টি উপজেলায় মোট ৪৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৫৬টি, জৈন্তাপুর উপজেলায় ৪৮টি, কানাইঘাট উপজেলায় ১৮টি, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ৩৫টি ও জকিগঞ্জ উপজেলায় ৫৮টি রয়েছে।
বিজিবি সিলেট সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় পানিবন্দি দুই শতাধিক মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ রক্ষায় স্থানীয়দের নিয়ে কাজ করা হয়। এছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষদের জন্য ৪৫০ প্যাকেট রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করছেন এবং পানিবন্ধী মানুষের দুর্ভোগের খোঁজ খবর নেয়ার খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা গেছে।