প্রচ্ছদ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও সাম্প্রতিক রাজনীতি শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

  |  ১২:৫৬, আগস্ট ১৭, ২০২৪
www.adarshabarta.com

আদর্শবার্তা ডেস্ক :

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও সাম্প্রতিক রাজনীতি শীর্ষক এক আলোচনা সভা গত ১৪ই আগস্ট বিকেল ৭টায় পূর্ব লন্ডনের ১১৫নিউরোডস্থ একটি রেস্টুরেন্ট হলে অনুষ্ঠিত হয়।

অধ্যাপক ওমর ফারুকের সভাপতিত্বে ও ডা. গিয়াসউদ্দিন আহমদের উপস্থাপনায় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সৈয়দ আব্দুল মাবুদ, লবিদ আহমদ, এডভোকেট শিব্বির আহমদ তালুকদার, হারুনুর রশিদ, এম এ মুকিত চৌধুরী, এনামুল হক চৌধুরী, একেএম আব্দুল হান্নান, এডভোকেট সফিক উদ্দিন আহমদ, আনসার আলী, কয়সর আহমদ, জয়নাল আবেদীন সরকার, মোহাম্মদ আলী মাসুম, ও মহিউদ্দিন প্রমুখ। বিশেষ কারণে অনুপস্থিতিজনিত এপোলজি স্বীকার করেন বাবুল তালুকদার।

সভায় বক্তারা কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে শেষাবধি সরকার পতনের নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মুক্ত আলোচনা করেন। বক্তারা তাদের স্বাধীন মতামত ব্যক্ত করেন।

সভায় হারুনুর রশিদ বলেন, প্রবাসে বসবাসরত আমরা বাংলাদেশী বাঙালি। দেশ ভালো থাকলে আমাদের ভালো লাগে। কারো ভুলে বা কারো হীন স্বার্থে দেশ ধ্বংস হোক তা আমরা চাই না। তিনি বলেন, আমরা চাই দেশের টেকসই উন্নয়ন, বৈষম্য বিরোধী নীতি-আদর্শ ও যুগোপযোগী গণতান্ত্রিক রাজনীতি।

এডভোকেট শিব্বির আহমদ তালুকদার বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান স্মরণকালের উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তিনি বলেন, মানুষ মাত্রেই লোভী কিন্তু দেশ জাতির ক্ষতির কারণ হোক এমন লোভ লালসা মোটেই কারো কাম্য নয়। রাজনীতির সংকীর্ণ মনোভাব সরাতে হবে। নিরপেক্ষ বিচার বিশ্লেষণ দরকার। রাজনীতির মতপার্থক্য থাকতে পারে। লন্ডনেও দাঙ্গা হাঙ্গামা হয়েছে। এসব হতেই পারে। কিন্তু গণতান্ত্রিক প্রাকটিস থাকা দরকার। দরকার আইনের শাসন ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা।

এম এ মুকিত চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে প্রকৃত অর্থে ভোটাধিকার নেই। নেই জবাবদিহিতা। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বারবার। সবকিছুতেই দলীয়করণ। এসব একদিনে হয়নি। স্বাধীন ছাত্র সংগঠন থাকা দরকার। লেজুড়ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি মোটেই কাম্য হতে পারে না। রাজনীতি, শিক্ষানীতি, বানিজ্যনীতি সব বিষয়ে সঠিক প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পিয়নের ৪০০ কোটি টাকা অবৈধ আয় সত্যি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তিনি মনে করেন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যেকোন দুর্বলতার কারণে প্রতিবিপ্লবের আশংকা অমূলক নয়। তাদেরকে সময়োপযোগী কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তার মতে অধিকাংশ জনগণের মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে। কাজেই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ পরিচালনা করতে হবে।

আনসার আলী বলেন, আগস্ট মাসে সকল শহীদদের স্মরণ করছি। দেশের উন্নয়নে আমাদের নতুন স্বপ্ন দেখা ভালো। রাজনীতিতে শুধু দোষারোপ চলছে, তেমন গাইড লাইন নেই। ভালো চাই আগামীর বাংলাদেশ। টাকার বিনিময়ে রাজনীতি, নির্বাচন বানিজ্য এসব মোটেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। রাজনীতির নতুন মেরুকরণ দরকার।

বক্তব্যে এ কে এম আব্দুল হান্নান বলেন, আমরা লন্ডন থেকে কিভাবে দেশকে সাহায্য করতে পারি, এ বিষয়ে সঠিক চিন্তা ভাবনা দরকার। ১৯৭১ সালে ও পরেও যুক্তরাজ্য থেকে প্রবাসীরা দেশের স্বার্থে সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছেন। সারা পৃথিবীর দেড়কোটি প্রবাসীরা ইচ্ছা করলে দেশের জন্য অনেক কিছু করতে পারেন। কিভাবে উন্নয়নের অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতা বাড়ানো যায় তা নিয়ে গবেষণা দরকার। আমরা সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতায় একটি বিশ্বমানের ভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করতে পারি। প্রত্যেকে তার নিজ এলাকায় একটি করে এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে পারেন যাতে করে রোগীরা দ্রুত হাসপাতালে যেতে পারে।

কয়সর আহমদ বলেন, দেশটাকে সুন্দর করে সাজাতে হবে। দেশের ক্ষতির কারণ কি? কে বা কারা এসব করেছে তা জনগণ জানতে চায়। বিচার বিভাগকে নিরপেক্ষ করতে হবে। আইনের শাসন ও আইনের সঠিক প্রয়োগ দরকার। শুধু দোষারোপ করলে হবে না , সকলকে এগিয়ে আসতে হবে উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার স্বার্থে।

মোহাম্মদ আলী মাসুম বলেন, দেশের জন্য আমাদের টান রয়েছে। আমি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। তবে আন্দোলনে আমার পায়ে গুলি লেগেছে। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে অনেকের ত্যাগ রয়েছে। আবার কেউ কেউ লাভবান হয়েছেন। সিলেট বিভাগ বাস্তবায়নে তার বিশেষ ভূমিকা ছিলো। তিনি বলেন, শাহজালাল ভার্সিটি নামকরণে তিনি অন্যতম প্রস্তাবক ছিলেন। হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর প্রচেষ্টায় এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পায়। তিনি বলেন, উন্নয়নের ব্যাপারে রাজনীতিবিদদের নানা গ্রুপিং এর কারণে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ ব্যাহত হয়েছে।

জয়নাল আবেদিন সরকার বলেন, দেশের সার্বিক অবস্থা এই সময়ে মোটেই ভালো নয়। চারিদিকে সংকট আর সংকট। চুরি ডাকাতি ছিনতাই বেড়ে চলেছে। দুর্নীতি দমনে প্রকৃত জ্ঞান মেধা কাজে লাগানো দরকার। কিভাবে শান্তি ফিরিয়ে আনা যায় তার জন্য তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে।

এডভোকেট সফিক উদ্দিন আহমদ বলেন, সমস্যা যেখানে, সেখানেই সমাধান খুঁজতে হবে। সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। সকল ক্ষেত্রে সিস্টেমের পরিবর্তন দরকার। তিনি বলেন, সিস্টেম পরিবর্তনের এখনই উপযুক্ত সময়। কৃত্রিম বন্যার কারণে জনজীবন বারবার বিপর্যস্ত। অনিয়ম আর তোষামোদই হচ্ছে রাজনীতিবিদদের বৈশিষ্ট। প্রতিটি সেক্টরে সংস্কার দরকার। জবাবদিহিতা বাড়াতে হবে। রেমিটেন্স যোদ্ধারা শুধু নামে ঘোষণা দিলে হবে না, তাদেরকে উন্নয়নের সুযোগ দিতে হবে। দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতি হচ্ছে আজ সবচেয়ে বড় বাধা।

লবিদ আহমদ বলেন, আমরা রাজনীতির ক্ষেত্রে বারবার প্রতারিত হয়েছি। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। প্রহসনমূলক নির্বাচন ও ক্ষমতার অপব্যবহার জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ওয়ান ইলিভেন থেকে কেউ শিক্ষা নেয় নি। যার কারণে ছাত্র জনতার এই গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। বিচার ব্যবস্থা কুক্ষিগত হয়েছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি বলেছেন, অধিকাংশ লিখিত রায় বঙ্গভবন থেকে আসতো। আয়না ঘরের আইন বহির্ভুত অমানবিক নির্যাতন ইতিহাসের জঘন্যতম কালো অধ্যায়। তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হবার পর জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা ছিলো সময়ের দাবি। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। দলীয়করণ ও আত্মীয়করণের কারণে ছাত্র লীগের দ্বিখণ্ডিত রূপে জাসদ নামক রাজনীতির প্রতিষ্ঠা। সবশেষে বর্তমান ছাত্র জনতার গণঅভ্যুথানকে সফল করা আগামী বাংলাদেশ গঠনের জন্য একটি মাইলফলক হিসাবে গণ্য হবে।

সৈয়দ আব্দুল মাবুদ বলেন, দেশপ্রেম হবে আমাদের প্রধান চালিকা শক্তি। প্রবাস থেকে আমরা অনেক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারি। একাত্তর সালেও এই যুক্তরাজ্য থেকে প্রবাসীরা স্বাধীনতা আন্দোলন সংগ্রামে বলিষ্ট ভূমিকা পালন করেন। তিনি বলেন, ছাত্রদের কোটা আন্দোলন থেকে সরকার পরিবর্তনের এক দফা দাবি এই শতাব্দীর এক গণবিপ্লব, যা আগামী দিনের মাইলফলক হিসাবে বিবেচিত হবে। তিনি বলেন, আমরা পরিবর্তন চাই। বিমান বন্দরের হয়রানি বন্ধ হোক। প্রবাসীদের জান মালের নিরাপত্তা বিধোনে সরকার যেনো আরও তৎপর হয়, এটা আমাদের সময়ের দাবি।

মহিউদ্দিন তার বক্তব্যে অপরাজনীতির নানা প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রধান তিনটি দলের মধ্যে দলীয় গণতন্ত্রের চর্চা নেই। তারা কিভাবে দেশে গণতন্ত্রের আশা করেন। তাদের স্বৈরাচারী মনোভাবের কারণে আজ দেশের মেধাবী তরুণরা রক্ত দিতে হলো। আর কত রক্ত দিতে হবে, এ সবের অবসান দরকার।

এনাম চৌধুরী বলেন, আমরা নতুনত্ব চাই। দেশের টেকসই উন্নয়ন চাই। যতদিন লাগুক রাষ্ট্র সংস্কার করে দেশকে এক নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টাসহ সকলকে সব ধরনের সহযোগিতা দরকার। দেশকে পুনর্গঠন করতে হবে। দুষ্টচক্রের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে।

গিয়াসউদ্দিন আহমদ বলেন, দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পরিবারতন্ত্রের অশুভ রাজনীতির কবল থেকে দেশকে উদ্ধার করতে হবে। অংশীদারিত্বের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশকে একটি বিজ্ঞান মনস্ক, আধুনিক রাষ্ট্র হিসাবে শক্ত গণতান্ত্রিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাহলেই প্রকৃত অর্থে শহীদদের ত্যাগের প্রতি যথার্থ মূল্যায়ন করা হবে।

সভাপতি তার বক্তব্যে রাষ্ট্র সংস্কারসহ সকল মন্ত্রণালয়ের আধুনিকীকরণের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন প্রবাস থেকে দলমত নির্বিশেষে সকলকে দেশের জন্য কাজ করতে হবে। সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। ত্যাগের মহিমায় আমাদের সময় ও জীবনকে উৎসর্গ করতে হবে।