যত তাড়াতাড়ি নির্বাচন হবে, তত দেশের জন্য মঙ্গল :ফখরুল
আদর্শবার্তা ডেস্ক :
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘নির্বাচিত সরকার ছাড়া জনগণকে আর কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। সে জন্য সংস্কার করতে হবে। সেই সংস্কার জাতীয় সংসদে অনুমোদন করা হবে। জনগণের জনপ্রতিনিধিকে দিয়ে সেটা করতে হবে। সুতরাং, নির্বাচন যত তাড়াতাড়ি হবে, তত দেশের জন্য মঙ্গল।’
বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আস্থা রেখে এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কোথাও ফাঁদ থাকলে সেখানে গণতন্ত্রের শত্রম্নরা বিপস্নবকে ব্যর্থতায় পরিণত করতে সুযোগ পাবে এবং পাচ্ছে। বিভিন্ন মহল বিভিন্ন জায়গায় দাবি-দাওয়া নিয়ে আসছে। তারা কেনো আগে করেনি। এখন কেনো নিয়ে আসছে? অপেক্ষা করেন। জনগণের সরকার আসুক। এরপর দাবি নিয়ে আসুন। এসব বিষয়গুলো বুঝা উচিত। মাথায় রাখা উচিত। অনেকে বলে যে, এতদিন পারিনি, তাই এখন দাবিগুলো নিয়ে আসছি। কিন্তু এতে দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়।’
কিছু উপদেষ্টার কথায় ‘খটকা’ লাগে উলেস্নখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা একটা সরকারে আছেন, দায়িত্ব পালন করছেন। এমন কোনো কথা বলবেন না বা এমন কোনো কাজ করবেন না, যাতে জনগণ বিভ্রান্ত হয়। স্থানীয় সরকারের উপদেষ্টা হাসান আরিফ বলেছেন, ‘চার বছর সরকারের মেয়াদ।’ এটা তার বলার কথা নয়। তারা কমিশন গঠন করেছেন সেই কমিশন প্রস্তাব দেবেন, জনগণ গ্রহণ করবে, এরপর সবকিছু নির্ধারণ হবে। কিন্তু যিনি ক্ষমতায় বসে আছেন, তিনি যদি বলেন যে, সরকারের মেয়াদ চার বছর হবে। তাহলে একটা চাপ পড়ে যায়। এই কাজটা হাসিনা (শেখ হাসিনা) খুব ভালোভাবে করতেন যেকোনো মামলার রায়ের আগে বলে ফেলতেন। ওইটা কখনো সঠিক পথে নিয়ে যাবে না। তাই অনুরোধ করব, এমন কথা-বার্তা না বলা- যেটাতে জনগণ বিভ্রান্ত হয়।
বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাসী উলেস্নখ করে তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ আমরা অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করি। আমরা সব সময় সব সম্প্রদায়
একসঙ্গে কাজ করে আসছি, একসঙ্গে যুদ্ধ করেছি। ইদানীং দেখছি, একটা সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে বড় রকমের আন্দোলন সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। যেটা বক্তব্যের সঙ্গে মিলে যায়। যেটা বাংলাদেশের বিপস্নবকে অনেকাংশে বিপণ্ন করার চেষ্টা। এ কথা বলতে আমি বাধ্য হলাম। আমাকে বিদেশের সাংবাদিকরা টেলিফোন করেন। বিশেষ করে ভারতের সাংবাদিকরা বলতে চান যে, ড. ইউনূস কি রাষ্ট্র চালাতে পারছেন না ? এ ধরনের কথা-বার্তা তাদের কাছ থেকে আসে। আমি তাদের বলি, প্রশ্নই উঠতে পারে না। গোটা দেশের মানুষ তার ওপর আস্থাশীল। তিনি সুন্দরভাবে দেশ চালাচ্ছেন। যাকে মানুষ সমর্থন দেয়, সেখানে কোনো কিছু থাকতে পারে না।’
জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রবের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ভাসানী অনুসারি পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জেএসডির তানিয়া রব, শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
পলাতক প্রেতাত্মারা এখনো ষড়যন্ত্র করছে : নিতাই রায়
এদিকে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী বলেছেন, ‘পলাতক প্রেতাত্মারা এখনো ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু এই ষড়যন্ত্র টিকবে না। কারণ, এবার সম্মিলিতভাবে সব জাতি তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। যে জাতি একবার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে, এই জাতি আর মাথা নিচু করবে না।’
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট আয়োজিত ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্র রুখে দাও’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, ‘পরাজিত শক্তি (আওয়ামী লীগ) আর ফিরে আসতে পারবে না। তারা যদি ফিরে আসত, তাহলে হিটলার ফিরে আসত, নমরুত ফিরে আসত, চেঙ্গিস খান ফিরে আসত। আইয়ুব খান, টিক্কা খান তারা ফিরে আসত। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করে যারা একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল, তারা ফিরে আসত। এ ছাড়া শেখ হাসিনা এ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। তারা হলো পলাতক শক্তি। এই দুর্নীতিবাজ লুটেরা মেরুদন্ড সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। তাই তারা আর ফিরে আসতে পারবে না।’
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সভাপতি বিজন কান্তি সরকারের সভাপতিত্বে সংগঠনের মহাসচিব এস এন তরুণ দে’র সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- গণফোরামের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কবি আব্দুল হাই শিকদার, সাবেক সহ-সভাপতি আমিরুল ইসলাম কাগজী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক সুশান্ত কুমার চক্রবর্তী, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের উপদেষ্টা অমলেন্দু দাস অপু, ভাইস চেয়ারম্যান রমেশ দত্ত, তপন চন্দ্র মজুমদার প্রমুখ।
তাড়াতাড়ি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন : ফারুক
অন্যদিকে অন্তর্র্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, ‘তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে দেন এটা আমরা চাই না। আমারা চাই, যিনি গণহত্যা চালিয়েছেন, গত ১৬ বছর আমাদের ওপর জুলুম, নির্যাতন চালিয়েছেন, সেই শেখ হাসিনা যেন এ দেশে রাজনীতি না করতে পারে। গত ১৬ বছর এ দেশের সাধারণ জনগণ যারা ভোট দিতে পারেননি, তারা যেন সুস্থভাবে ভোট দিতে পারেন। অতি তাড়াতাড়ি একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।’
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন। ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপস্নব ও সংহতি দিবসকে পুনরায় সরকারি ছুটি ঘোষণার দাবিতে ওই অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করে বাংলাদেশ উন্মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিষদ।
সরকারের উদ্দেশে জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ‘অচিরেই একটি নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করুন। যে নির্বাচনের মাধ্যমে এ দেশের জনগণ ভোটের অধিকার ফিরে পাবে। দেশের জনগণ তাদের পছন্দ মতো প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন। তখন একটা সংসদ হবে, সেই সংসদে সিদ্ধান্ত হবে রাষ্ট্রপতি কে হবেন। সংবিধানের কী হবে।’
অবস্থান কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মো. রহমতউলস্নাহ, কৃষকদলের সহ-সভাপতি ভিপি ইব্রাহিম, সহ-সাধারণ সম্পাদক এম জাহাঙ্গীর, ছাত্রদলের সাবেক নেত্রী রুমা প্রমুখ।