ত্রাসের নাম নোভেল করোনা ভাইরাস
মোঃ নাসির
ত্রাসের নাম নোভেল করোনা ভাইরাস। এই মুহূর্তে বিশ্ববাসীর ভয়ের এক ও একমাত্র কারণ। চীন,ইটালী,ইরান থেকে ইউরোপ, আমেরিকা – এক জীবাণুর কামড়ে কুপোকাত সকলে। উন্নত, শক্তিধর দেশগুলিও একে কাবু করতে ব্যর্থ। প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে চরম আশঙ্কায়। কেমন সেই পরিস্থিতি, কিছু অনলাইনে নিউজের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে লিখলেন মো: নাসির, নিউ জার্সি, আমেরিকা থেকে।
” আমি গত ৩০বছর ধরে আমেরিকায় আছি। প্রথমে কাজের সূত্রে এসেছিলাম। এখন পরিবার নিয়ে থাকি। এক সময়ে রিসেশনের জন্য বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলিতে চাকরির সংকট দেখা দিলেও, তা থেকে বেরিয়ে এসেছে সংস্থাগুলো। আমার মতো আরও অনেক বাংলাদেশেী কর্মী নিশ্চিন্তে কাজ করছেন এখানে। তো ওই সময়েও আমরা এতটা চিন্তিত হয়ে পড়িনি, যতটা চিন্তা হচ্ছি এখন।
করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় গোটা আমেরিকায় ন্যাশনাল এমার্জেন্সি জারি হয়েছে। সকলে ঘরবন্দি। সবচেয়ে অসুবিধের বিষয়, এই মুহূর্তে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস – হ্যান্ড সানিটাইজার, মাস্ক টিসসু, এসব ।সেই ১১মার্চের প্রথম দিন থেকে। আপাতভাবে মনে হতে পারে যে প্রথম বিশ্বের দেশে এ ধরণের জরুরি পরিসেবা পাওয়া কোনো ব্যাপারই না। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। যাবতীয় অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্রের বেশিরভাগটা মেডিক্যাল এমারজেন্সির জন্য সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। তারপর যেটুকু আছে, তা স্টোর থেকে কিনতে গিয়ে নাকানিচোবানি খেতে হচ্ছে আমাদের। ভোর হতেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্টোরের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো। এখানকার স্টোরগুলো কম সময়ে খোলা থাকছে ।নিউজাসির দোকান গুলি ত্রখন সকাল থেকে রাত ৮ টা পযনত খোলা। কিছু বাটার, দুধ, পাঁউরুটি এবং নিত্যদিনের খাবার জিনিস কেনার পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এখানে আবার আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনাও আছে। তাপমাত্রা ওঠানামা করে, তবে সামগ্রিকভাবে শীতের ছোঁয়া থাকে। মাঝেমধ্যে মেঘলা , বৃষ্টি। এই পরিবেশে স্টোরের সামনের লাইনে দাঁড়িয়ে টের পাচ্ছে, বিপদ কাকে বলে…এখানে বেশিরভাগ মানুষ প্রাইভেট গাড়িতে যাতায়াত করেন। তাঁরা প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বেড়ছেন না। আমি থাকি নিউ জার্সি Secaucus , অফিস নিউ ইয়র্কে। সাধারণত পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাতায়াত করি। বাড়ী থেকে অফিস পৌঁছতে ৩০মিনিট সময় লাগে। এমারজেন্সি জারি হওয়ার আগে পর্যন্ত স্রেফ করোনা আতঙ্কেই মানুষজন এত কম বাইরে বেরিয়েছেন, যে অফিসের ব্যস্ত সময়েও লোকাল ট্রেনে যাত্রীর সংখ্যা ৯০ শতাংশ কমে গিয়েছে! রাত আটটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত রাস্তায় বেরনো একেবারে নিষিদ্ধ। আমেরিকায় এই মুহূর্তে করোনা পরিস্থিতি মোটেই সুবিধাজনক নয়। খাস হোয়াইট হাউসের এক কর্মী শুনেছি করোনা পজিটিভ। মৃতের সংখ্যা হু হু করে বেড়ে চলেছে। তবে সবটাই এত হতাশাজনক নয়। এখানকার স্বাস্থ্যকর্মী এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা যতটা সম্ভব পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আমার ত্রকজন ভালো বনধু ডাঃ কারল সে ত্রই পরিসিহতে খুবই ব্যসত ।আমার মেয়ে আদিয়া নাসির ও যে স্কুলে পড়ে, সেখানে অনলাইন ক্লাস চলছে। আদিয়া ত্র বৎসর সেপ্টেম্বর থেকে বিশববিদ্যালয়ে যাবে ।তবে স্কুল থেকে কিনডার গাডেন ছাত্রছাত্রীদের প্রয়োজনমতো খাবার এবং মেডিক্যাল সাপ্লাই দেওয়া হচ্ছে। তাই ছোটদের নিয়ে চিন্তা একটু কম। কিন্তু নিজেদের সুরক্ষার কথা তো নিজেদেরই ভাবতে হচ্ছে। ভাইরাস সংক্রমণ না হলেও, আমাদের মধ্যে তীব্র ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে ওই জীবাণু। একটি বুলেটও ছোড়া হয়নি, কিন্তু গোটা বিশ্বে এখন যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। এর কারণ, একটি অতি ক্ষুদ্র ভাইরাস, যার নাম করোনা। এর প্রথম প্রভাব পড়েছে অর্থনীতি, ব্যবসা ও বাজারের ওপর। এখন এটি পরিষ্কার, বিশ্বে একটি মন্দা দেখা দেবে। সময় এখন কিছুটা মানুষের প্রতি দয়া দেখানোর ,মানুষের প্রতি কিছুটা সমবেদনা দেখানোর। সময়ের এই মুহুর্তে আমরা কী করি তা গুরুত্বপূর্ণ। ত্রই সরকার, এটি যদি ভালভাবে তদারক করে ,তবে অনেক জীবন বাঁচবে।”
লেখক: আমেরিকা প্রবাসী, সাংবাদিক,কলামিস্ট