জীবনের কথা, পর্ব-২
যে কোন কাজের সফলতা একদিন না একদিন আসবেই
:: মোঃ রহমত আলী ::
ছোট হউক, বড় হউক অথবা কঠিন হউক, সহজ হউক যে কোন কাজে লেগে থাকলে একদিন না একদিন তা থেকে সফলতা আসবেই। রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি বা অন্য যে কোন বিষয়ে সেটা হতে পারে। তবে মোট কথা, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে সেটা করতে হবে। অন্যান্যদের ক্ষেত্রে যাই হোক, আমার নিজের বেলায় অন্তত: তার প্রমাণ পেয়েছি। জীবনের কঠিন বাস্তবতায় আমি সে কাজের স্বীকৃতির মাধ্যমে উত্তরণের সূযোগ পেয়েছি, অনুপ্রাণিত হয়েছি।
আজ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এটা উপলদ্ধি করতে পেরেছি যে, একদিন যে কাজগুলিকে পন্ডশ্রম মনে করতাম সেগুলিই আমার জীবনের মূল ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সবার কাছে অনুরোধ কেউ কোন কাজ ইচ্ছায় হউক, আর অনিচ্ছায় হউক শুরু করলে তা যেন অর্ধেক পথে গিয়ে শেষ না করে, সমাপ্তি পর্যন্ত যেন প্রচেষ্টা চালান। এটা আমার নিজের কথা নয়, এটা অনেক মনিষিদের কথা।
আমি সমাজের কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নই বা স্বনামধন্য কোন মহা পন্ডিতও নই। একজন সাধারণ মানুষ হিসাবে আমার জীবনের মাত্র দুটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করবো। এগুলির একটি হলো সাংবাদিকতা অন্যটি হলো রাজনীতি। তবে রাজনীতির চাইতে সাংবাদিকরাই আমাকে বেশী পরিচিতি দিয়েছে।
১৯৭২ সাল। এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ফলাফলের অপেক্ষায় আছি। আমার এক বড় ভাই উপদেশ দিলেন যে, বেকার থেকে লাভ নেই, একটা কিছু কর। আমি এ বেকার সমস্যায় বিনা পয়সায় যে কাজটি করি তা হলো লেখালেখি। সংবাদ পাঠাতে থাকি সিলেটের তৎকালীন প্রাচীনতম সাপ্তাহিক যুগভেরী পত্রিকায়। এ যেন ‘নিজের খেয়ে বনের মহিষ তাড়ানোর’ মতো কাজ। এর সূত্র ধরে একবার বিশ্বনাথের প্রথম পত্রিকা হিসাবে
‘মাসিক বিশ্বনাথ দর্পণ‘ প্রকাশ করি। সেটিও ছিল শতকরা ৯৯ ভাগ মুনাফাবিহীন কাজ। সামান্য কিছু টাকা পেলেই একটি সংখ্যা প্রকাশ করতাম। পরে প্রেস থেকে তা বাকী রেখেই নিয়ে আসতাম ও পরে কর্জ পরিশোধ করতাম। ‘৯২ থেকে ‘৯৪ সাল পর্যন্ত এভাবেই দর্পণ প্রকাশ অব্যাহত রাখি।
হঠাৎ এ দর্পণের সূত্র ধরেই লন্ডন আসা হয়ে যায়। আর শুধু আসা নয় এ সাংবাদিকতার কারণে সাপ্তাহিক সুরমা পত্রিকায় কাজও পেয়ে যাই। যদি সে সময় এ কাজ না পেতাম তবে হয়তো দেশেই চলে যেতাম। এরপর এখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের সূযোগ। সুতরাং আমি মনে করি সে সময় ‘৭২ থেকে ৯৪ পর্যন্ত যে সময় আমি এর পেছনে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়েছিলাম তার ফলেই এ সফলতা পেয়েছি। শুধু সফলতা নয় এর ফলে আজকে আমাকে বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের ‘প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি’ ও ‘বিশ্বনাথের প্রথম পত্রিকা’ প্রকাশকারী হিসাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
কলেজে লেখাপড়া করার সময় জেনারেল ওসমানী প্রতিষ্ঠিত জাতীয় জনতা পার্টির ছাত্র সংগঠন ‘জাতীয় ছাত্র ফ্রন্ট‘ করতাম। আমার বাড়ী থেকে কলেজে লেখাপড়া করার জন্য যে টাকা-পয়সা দেয়া হতো সেটা এ কাজেই ব্যয় হতো বেশী। ভাবতাম রাজনীতি করে কি লাভ হবে? তবে অর্থনৈতিকভাবে কিছু না পেলেও একটি শান্তনা আজও লালন করে আছি যা হলো, জেনারেল ওসমানী আমার বিয়ে সময় ‘বরযাত্রী‘ ছিলেন।
সে যাই হোক, এখনও লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছি। কলাম লেখা ছাড়াও কয়েকটি বই প্রকাশ করেছি। বলা যায় না আগামীতে কোন রাস্ট্রীয় পুরস্কারও পেয়ে যেতে পারি। (চলবে)।
লেখক: যুক্তরাজ্য প্রবাসী প্রবীণ সাংবাদিক ও দর্পণ ম্যাগাজিন সম্পাদক।