জীবনের কথা, পর্ব-৩৫
কলাম লিখে আমি আ্যাওয়ার্ড লাভ করেছিলাম ২০১৮ সালের ২৪ জুন
:: মোঃ রহমত আলী ::
আগামী ২০২২ সালে আমার লেখালেখির বয়স হবে ৫০ বছর। ১৯৭২ ইং থেকে তা শুরু করেছিলাম যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে। এরই মধ্যে আমি একটি আ্যওয়ার্ডেরও অধিকারী হয়েছি। হয়তো আগামীতে আরও কোন আ্যওয়ার্ড আমার ভাগ্যে জুটতে পারে। সেটা হতে পারে ইহ জগতে অথবা পর জগতে। আর পর জগতে হলে এর নাম হবে ‘মরনোত্তর পদক’। আমি অনেক সময় চিন্তা করি, যাকে এ মরনোত্তর পদক দেয়া হয় সে যখন তা দেখতে পারলো না- তখন এ পদক দেয়ার মানেটা কী?। তার বদলে যদি সেই ব্যক্তির কোন জীবিত সন্তানকে সরাসরি এটা প্রদান করা হয় তবেই তা হবে শ্রেয়। যেহেতু তারাই সে মৃত ব্যক্তির পক্ষে এটা গ্রহন করে থাকে।
অনেকের হয়তো মনে হতে পারে যে, আমি পদক প্রাপ্তির জন্য বিষয়টি উপস্থাপন করেছি। কিন্তু আসলে তা নয়। এ পদক সংক্রান্ত কিছু বিষয় লেখার জন্যই এ প্রসঙ্গের অবতারণা। তার আগে বলে নেয়া ভাল যে, বিভিন্ন সময় আমি বিভিন্ন পত্রিকায় যে সমস্ত কলাম লিখেছি তার মধ্যে স্মরণযোগ্য নামগুলি হল, গ্রাম বাংলায় লন্ডনের প্রভাব, সময় চিন্তা, সমাজ দর্পণ, লন্ডনের রোজ নামচা, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি এবং বর্তমানে জীবনের কথা লিখে যাচ্ছি। তা ছাড়া সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে আরো অনেক কিছু লিখেছি।
যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশীদের মধ্যে মিউজিক, আর্টস এবং মিডিয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যাদের মেধা, যোগ্যতা ও কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাঁদের কাজের স্বীকৃতি ও সম্মাননা জানাতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ’ইস্ট ঊড’ অ্যাওয়ার্ডস। এটাকে অনেকে প্রবাসে বাঙালীর অস্কার হিসাবেও আখ্যায়িত করে থাকেন। ২৪ জুন (২০১৮) অনুষ্ঠিত হয় এর দ্বিতীয় অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠান। এতে কলামিস্ট ক্যাটাগরীতে আমাকে এ অ্যাওয়ার্ড দিয়ে বলা হয় যে, আমি নাকি সাংবাদিকতার পাশাপাশি কলাম লেখক হিসাবেও বেশ সুখ্যাতি অর্জন করেছি। যাই হোক, এ অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠানকে সফল করতে যে সকল ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও মিডিয়া বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন তাঁরাসহ এর প্রতিষ্ঠাতা মিনহাজ কিবরিয়া ও চেয়ারম্যান সিরাজ হককে ধন্যবাদ জানাই। এ আ্যওয়ার্ড সম্পর্কে উদ্যোক্তারা বলেন, ‘হলিউড’ হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চলচিত্র জগতের তীর্থস্থান। এটি ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলস শহরে অবস্থিত। সেখানে আমেরিকার চিত্র জগতসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। তাই এ কারণে এর সর্বশেষ সংস্করণ হচ্ছে এই ‘ইস্টউড’ যা ইস্ট লন্ডনে প্রতিষ্ঠিত।
এবারে পদক নিয়ে লেখা শুরু করছি। পদককে ইংরেজিতে Medal বলা হয়ে থাকে। তবে মেডেল শব্দটিও বাংলায় বহুল প্রচলিত। আজকাল এ শব্দের আরো একটি অভিধা যুক্ত হয়েছে। যাকে বলা হয় “আ্যাওয়াডর্”। সাধারণতঃ গোলাকৃতি বস্তুবিশেষ যা ব্যক্তি, দল কিংবা প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কৃত করার লক্ষ্যে হস্তান্তর করা হয়। বিশেষ বিশেষ পদক ছাড়াও বিভিন্ন স্থরে অবদানের জন্য ব্যক্তি কিংবা সংস্থাকে পদক প্রদানের মাধ্যমে মূল্যায়ণ করা হয়।
পদক সাধারণতঃ গোলাকৃতি হলেও কখনো কখনো চতুর্ভূজ আকৃতিরও তৈরী করা হয়ে থাকে, যাকে প্লাক নামে অভিহিত করা হয়। চতুর্ভূজ আকৃতির পদকগুলো বৃহৎ ধরণের। এতে সাধারণতঃ যে-কোন প্রতীক, প্রতিকৃতি কিংবা অন্য কোন চিত্রকে পদকে প্রতিস্থাপন করা হয়। খোঁদাই করে, ছাঁচে ঢেলে, ছাপ প্রয়োগ করে অথবা অন্য কোনভাবে ছাপ মেরে পদককে আকর্ষণীয় ও স্মারক হিসেবে রাখা হয়। স্বতন্ত্র কোন ব্যক্তি কিংবা ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্যেও পদক তৈরী হতে পারে। এছাড়াও শৈল্পিক চিত্রকর্মের অভিব্যক্তি, বিমূর্ত ভাবনা বা প্রতিচ্ছবি পদকে প্রকাশ করা হয়।
সচরাচর পদকের সম্মুখদিকই দৃশ্যমান ও সুশোভন করা হয়। এতে প্রতিকৃতি, দৃশ্যমালা অথবা অন্য কোন চিত্র খোদাই করা কিংবা কোন কিছু লেখা থাকে। পদকের উল্টোভাগ ব্যবহার করা হয় না বিধায় সাধারণতঃ খালি থাকে অথবা গুরুত্বহীন বিষয়াদি থাকতে পারে। প্রয়োজনে পদকের কিনারে গোপন চিহ্ন, প্রতীক, ধারাবাহিক নম্বর ইত্যাদি লুক্কায়িত অবস্থায় রাখা হয়ে থাকে।
এদিকে পদক অনেকভাবে প্রদান করা হয়ে থাকে। কোনটি সুন্দর করে টেবিলে রাখার উপযোগি করে, কোনটি একটি বক্সের মধ্যে রেখে আবার কোনটি পদকপ্রপ্ত ব্যক্তির গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হয়ে থাকে। অবশ্য এ জন্য চিকন ফিতা ব্যবহারের করতে হয়। এছাড়াও, পোষাকে এটা গেঁথে দেয়ার জন্য নিরাপদ পিনও ব্যবহৃত হয়।
পদক বিভিন্ন ধাতুর মাধ্যমে অথবা এক ধরনের উজ্জল ব্রোঞ্জ পদার্থের মাধ্যমেই তৈরী হয়ে থাকে। সুবিধাজনক আর্থিক সীমারেখা, দীর্ঘস্থায়িত্বসহ সহজপ্রাপ্যতাই এর মূল কারণ। কিন্তু বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অন্যান্য প্রতিযোগিতায় সিলভার বা রৌপ্য, প্লাটিনাম এবং সোনা ব্যবহারের মাধ্যমে পদক তৈরী লক্ষ্যণীয়। এছাড়াও, কাঁচ, পোর্সেলি, কয়লা, কাঠ, কাগজ, এনামেল, প্রভৃতির সাহায্যেও পদক তৈরী করা হয়ে থাকে।
মাঝেমধ্যে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিবিশেষের প্রচেষ্টায় এ এওয়ার্ড প্রদানের হিড়িক পড়তে দেখা যায়। আর এ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় আয়োজনকারী ও সম্ভাব্য এওয়ার্ডপ্রাপ্তদেরকে। কোন কোন সময় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েও এরুপ এওয়ার্ডের নমিনেশন আহবান করা হয়। এরপরও সাড়া না পাওয়া গেলে ব্যক্তিগত যোগাযোগ করা হয়। এ থেকেই প্রতিয়মান হয় যে, এওয়ার্ড গ্রহিতা ও এওয়ার্ড প্রাপ্তদের মধ্যে নেপথ্যে কোন দরকষাকষি হয় কি না। তবে সব সংগঠন বা এওয়ার্ড প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এভাবে করছে না। তারা নমিনেশন আহবান করে এর বাছাই এর জন্য নিয়োজিত প্যানেল বোর্ডসহ আরও অনেক কিছু যথানিয়মে সম্পাদন করেই তা প্রদান করছে। আর এর ফলে প্রকৃত যারা এওয়ার্ড পাওয়ার যোগ্য তারাই এওয়ার্ড পাচ্ছেন। আর এর মাধ্যমে আমাদের খ্যাতিমান ব্যক্তিদের পরিচিত সহ নানা কার্যক্রমের প্রমাণ আমরা জানতে পারছি। সাথে সাথে এওয়ার্ড প্রাপ্তদের যারা জীবিত তাঁরা এটা পাওয়ার পর নিজেদের মেধা ও যোগ্যতার আলোকে নতুন উদ্দীপনায় কাজ করে যাচ্ছেন। যার ফলে দেশ, জাতী ও সমাজ জীবনে তারা তাঁদের মর্যাদাকে আরো উচুতে নিয়ে যাচ্ছেন।
তবে হতাশার কথা কোন কোন সময় যোগ্যতার বিবেচনায় অনেককে খুব কমই মূল্যায়ন করতে দেখা যায়। প্রকৃত যারা এওয়ার্ড পাওয়ার অধিকারী তাদেরকে কেউ খোঁজ খবর নেন না, বা তাদের এওয়ার্ড প্রদানের জন্য তেমন কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়না। অথচ অনেকের কর্মকান্ডের সামান্যতম স্বীকৃতি নেই, এমন অনেকের হাতেই তুলে দেয়া হচ্ছে এ সমস্ত এওয়ার্ড। কিছু কিছু এওয়ার্ড প্রদানকারীও কোন ব্যক্তিবিশেষ অথবা সমাজে পরিচিত নেই এমন অনেককে এটা প্রদান করতে দেখা যায়।
আমাদের সমাজে অনেক ব্যক্তি রয়েছেন যারা কখনও পদক, সনদ বা এওয়ার্ডের প্রত্যাশী নন কিন্তু তাদের বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কার্যক্রম আমাদেরকে আলোকিত করে যাচ্ছেন। সুতরাং প্রকৃত মানদন্ডে তারাই এওয়ার্ড পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু বাস্তবে ইদানিং কিচূ কিছু কাজ চলছে তা শুধু নাম জাহির আর টু-পাইস কামাইয়ের জন্য। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে এওয়ার্ড গ্রহনের ব্যাপারে অনেকে উৎসাহিত নাও হতে পারে। সাথে সাথে প্রকৃতপক্ষে যারা এওয়ার্ড প্রদানের যোগ্য তারাও লজ্জায় আর এদিকে অগ্রসর হবেন না। সুতরাং সংশ্লিস্ট সকলের স্বার্থে ও এওয়ার্ডের মানমর্যাদা সমুন্নত রাখতে এমনভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিৎ যাতে মাথা উচু করে দাঁড়ানো যায়। (চলবে)।
লেখক: যুক্তরাজ্য প্রবাসী প্রবীণ সাংবাদিক ও দর্পণ ম্যাগাজিন সম্পাদক। ইমেইল: rahmatali2056@gmail.com