নিউইয়র্কে গ্রোসারি ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন
মোঃ নাসির, নিউ জার্সি, আমেরিকা থেকে :
নিউইয়র্ক সিটির রেস্টুরেন্টগুলোতে বসে খাওয়ার সেবা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছেন নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো ও নগরীর মেয়র বিল ডি ব্লাসিও। এই ঘোষণায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে বাংলাদেশি গ্রোসারি ব্যবসায়ীরা একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছেন।
আমেরিকায় করোনার তাণ্ডব এখনো চলছে। রি-ওপেন করা ৩২টি স্টেটে করোনা দিন দিন বাড়ছে। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র বিল ডি ব্লাসিও বলেছেন, ‘আমরা একটি কঠিন সময় অতিক্রম করছি। এখন অবহেলা করার সময় নয়। ইনডোরে এখনো সমস্যা বিদ্যমান। তাই নিউইয়র্ক সিটির রেস্টুরেন্টে ইনডোর ডাইনিং চালু করা এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। এক সপ্তাহ আগেও আশাবাদী ছিলাম যে আমরা ইনডোর ডাইনিং চালু করতে পারব। তবে দেশজুড়ে যে সংবাদ নিয়মিত পাচ্ছি, তা দিনদিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। এটা নিউইয়র্কের উপরও প্রভাব পড়তে পারে।’
নিউইয়র্ক নগরীর রেস্টুরেন্টগুলোতে আউটডোর বা বাইরে বসে খাওয়া এবং ডেলিভারি দেয়া চালু হয়েছে। যে কারণে অধিকাংশ এলাকায় দেখা যাচ্ছে সাইড লাইনে আসন করা হয়েছে এবং খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় রাস্তার একাংশ ব্লক করে রেস্টুরেন্ট চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো বলেছেন, ‘অবস্থার পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত নিউইয়র্ক নগরীতে ইনডোর ডাইনিং স্থগিত থাকবে। তৃতীয় ধাপে নিউইয়র্ক উন্মুক্ত করার যে পরিকল্পনা ছিল, তাও পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের প্রথম এবং প্রধান কাজ হচ্ছে মানুষের জীবন রক্ষা করা। আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে ভয়াবহ এক পরিস্থিতি থেকে আমরা সকলের প্রচেষ্টায় একটা অবস্থানে এসেছি। আমরা অতীতের বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে ফিরে যেতে চাই না। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’
নিউইয়র্ক সিটিতে রেস্টুরেন্টগুলোতে বসে খাওয়ার নিয়ম না থাকলেও বাইরে বসে খাওয়া যাবে এবং খাবার কিনে অন্যত্র নেয়া যাবে। সিটির অধিকাংশ এলাকায় দেখা যায়, রেস্টুরেন্টের পাশে সিট বসানো হয়েছে। কোথাও কোথাও রাস্তার একটি অংশ দখল করে সিট বসানো হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা এই সুযোগ খুব একটা নিতে পারছেন না। কারণ বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সব জায়গায় করা হয়েছে, যেখানে পাশে সিট দেয়ার মতো জায়গা নেই। বিশেষ করে জ্যাকসন হাইটস ও জ্যামাইকা এলাকায় যেসব বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট রয়েছে সেসব এলাকায় ফুটপাতে সিট বসানোও সম্ভব হচ্ছে না।
জ্যামাইকা, বেলরোজে প্রতিষ্ঠিত প্রিমিয়াম সুপার মার্কেটের বাবু খান বলেন, ‘এখনো করোনা মহামারির প্রভাব রয়েছে। বাজার এখনো স্থিতিশিল নয়। আমরা একটা ইমব্যালেন্স টাইম অতিক্রম করছি। এক সপ্তাহ ভালো ব্যবসা হলে পরবর্তী সপ্তাহ মন্দা যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, আমেরিকার অর্থনৈতিক অবস্থাতো খুব একটা ভালো না, তার প্রভাব রয়েছে বাজারে। চলতি মাসে যদি স্টিমুলাস চেক বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে কী অবস্থা দাঁড়াবে বলা যাচ্ছে না। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সুপার মার্কেটগুলো ঘুরে দাঁড়াবে।
জ্যাকসন হাইটস এবং জ্যামাইকার খাবার বাড়ি রেস্টুরেন্ট এবং খামারবাড়ির কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, ‘রেস্টুরেন্টের অবস্থা খুবই খারাপ। তবে আগের তুলনায় একটু ভালো হচ্ছে। রেস্টুরেন্টের ভেতরে বসিয়ে খাবার সরবরাহ করা গেলে ভালো হতো এবং টিকে থাকতে পারতাম। ভেতরে বসার সুযোগ দিলে আমার অনেক জায়গা ছিল, পার্টি হল ছিল, সামাজিক দূরত্ব বাজায় রেখে ব্যবসা করতে পারতাম। তবে লকডাউনের পর গত রমজান থেকেই ডেলিভারি সিস্টেমে রেস্টুরেন্ট খোলার উদ্যোগ নিয়েছি। রমজানে মানুষের সেবা করার চেষ্টা করেছি।’
তিনি জানান, নিউইয়র্কে করোনাকালে রেস্টুরেন্ট খোলার পর যে অবস্থা ছিল, এখন পরিস্থিতি তার চেয়ে কিছুটা ভালো এবং ক্রমশ ভালো হচ্ছে। রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়ার সুযোগ না দিলে টিকে থাকাটাই মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে। গ্রোসারি সম্পর্কে তিনি বলেন, গ্রোসারি ব্যবসা আস্তে আস্তে উন্নতির দিকে। এভাবে চলতে থাকলে আশা করছি ঘুরে দাঁড়ানো যাবে।
জ্যাকসন হাইটসের হাটবাজার রেস্টুরেন্ট এবং গ্রোসারির মুনসুর চৌধুরী বলেন, রেস্টুরেন্ট এবং গ্রোসারি ব্যবসা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। করোনার কারণে মানুষ এখন রেস্টুরেন্টের খাবার খেতে চায় না। আবার করোনার কারণে অনেকেই বাসায় আগে খাবার ক্রয় করে রেখেছিলেন। কেউ কেউ ছয় মাসের চাল, ডাল ক্রয় করে রেখেছেন। এখন মানুষ শুধু মাছ, মাংস এবং শাকসবজির জন্য বাজার করে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যবসা কবে ঘুরে দাঁড়াবে তা বলা মুশকিল। কারণ আমেরিকার অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। কবে নাগাদ ভালো হবে তাও বলা যাচ্ছে না।
জ্যাকসন হাইটসের ইত্যাদি গ্রোসারি এবং রেস্টুরেন্টের আবু নোমান শাকিল বলেন, এখন ব্যবসা মোটামুটি, তবে আগের মতো না। গ্রোসারির অবস্থা মাঝামাঝি। তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্রেতাদের মধ্যে অনেকেই আসতেন আশপাশের স্টেট থেকে। তারা এখন এসে রেস্টুরেন্টে বসতে পারছেন না। এ কারণে তারা আসছেন না।’ তিনি বলেন, ‘এই দুর্যোগের সময় আমরা টিকে থাকার চেষ্টা করছি। আমাদের চিন্তা এখন সারভাইব করা, ব্যবসা করা নয়। যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তখন ইনশাল্লাহ ব্যবসা করতে পারব। তারপরেও আল্লাহ কাছে হাজার শোকর আমরা মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছি এবং ব্যবসা করে টিকে রয়েছি।’
জ্যামাইকার ফাতেমা গ্রোসারির ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার বলেন, বাজারে এখন অনেক কিছুর সংকট রয়েছে। বিশেষ করে করোনার কারণে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে যেসব পণ্য আসতো। তা বন্ধ ছিল। আবার করোনার কারণে শাকসবজি বাগানেও লোকজনের সংকট রয়েছে। যে কারণে বাজারে সবুজ সবজি ও ফলমূলের সংকট রয়েছে। সংকটের কারণে কিছু কিছু পণ্যের দামও একটু বেশি। অন্যদিকে মানুষের মধ্যে এখনো সংশয় রয়েছে, তারা বুঝেশুনে বাজার করছেন। তিনি বলেন, এখন মানুষের হাতে টাকা রয়েছে। ব্যবসার অবস্থা খুব একটা খারাপ নয়। ব্যবসা মোটামুটি ভালোই আছে।