লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে সাংবাদিদের জন্য জরুরী সহযোগিতা
মোঃ রহমত আলী
কোভিড ১৯ এর ফলে গোটা বিশ্ব আজ লন্ডভন্ড। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ নিয়ে চলছে নানা সতর্কতামূলক কর্মকান্ড, চিকিৎসা প্রদান এবং জনগনের পুনর্বাসনের লক্ষে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহন ইত্যাদি। আর এ সঙ্কটময় মুহূর্তে সেবাদানকারি ডাক্তার, নার্স, প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য জরুরী সংস্থা মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু এ সমস্ত কার্যক্রমকে যারা সবার সামনে তুলে ধরছে তার মূল কারিগর সাংবাদিকদের নাম খুব কমই উল্লেখ হতে দেখা যায়। অথচ তারাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন দিনের পর দিন।
তবে মূল কথা হলো সাংবাদিকরা সবকিছুর কথা লিখতে পারেন, কিন্তু লিখতে পারেন না শুধু নিজের কথা, নিজের সমস্যার কথা, অর্থনৈতিক সংকটের কথা। এটাই সাংবাদিকদের জন্য চরম অসহায়ত্ব ও বেদনাদায়ক। এই অসহায়ত্ব আর বেদনাকে উপেক্ষা করেই সাংবাদিকদের কাজ করে যেতে হয়।
সে ধারাবাহিকতায় বর্তমান ভয়াবহ করোনাভাইরাসকালেও সাংবাদিকরা অন্যান্য সেবাদানকারীর ন্যায় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে চলেছেন। আমার মনে হয় বর্তমান পর্যায়ে জরুরী সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত সবাই যেভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন সাংবাদিকরাও এর থেকে ব্যতিক্রম নন। কিন্তু প্রশ্ন হলো সাংবাদিকরা এ জন্য কতটুকু সূযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। অন্যান্য সেবাদানকারীদের জন্য একটা নির্দিষ্ট আয়ের উৎস থাকলেও কতজন সাংবাদিকের সেটা আছে। বিশে^র বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকরা কে কতটুকু সূযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান আমার জানা নেই বলে অক্ষমতা প্রকাশ করেই বৃটেনের বাংলা সংবাদ মাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের কথাই শুধু বলতে চাই।
আমার মনে হয় আমাদের বিলেতের বাঙালী মিডিয়া হাউজের যে কয়টির স্বাবলম্বীতা নিয়ে আমরা এতদিন আলাপ করতাম সেগুলি বা সেটিও এ পরিস্থিতিতে নাজুক অবস্থায় আছে। অন্যগুলির কথা নাইবা উল্লেখ করলাম। এমতাবস্থায় বিভিন্ন মিডিয়ায় জড়িত আমাদের প্রেসক্লাবের কয়েকশত সাংবাদিকের অবস্থা বর্তমানে কোন পর্যায়ে তা সহজেই অনুমেয়। আমি বলছি না যে, এর সাথে জড়িত সকলের অবস্থা নাজুক বা তারা শুধুমাত্র এ পেশার উপর নির্ভরশীল। কিন্তু যদি মোট ক্লাব সদস্যের ১০ পার্সেন্টও এ পরিস্থিতিতির সম্মুখীন হয়ে থাকেন তবে বাকী ৯০ পার্সেন্টের উচিৎ নয় কী এ পরিস্থিতিতে তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা। তাই আমি এ ব্যাপারে একটি প্রস্তাব তুলে ধরতে চাই।
এ কথা বলার অবকাশ রাখে না যে, আমাদের ক্লাবে একদিকে যেমন অসচ্ছল সাংবাদিক আছেন তেমনী আছেন স্বচ্ছল সাংবাদিকও। তাই মানবিক একটি শ্লোগানের কথা উল্লেখ করেই এ ব্যাপারে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করতে চাই। যা হচ্ছে “ মানুষ মাসুষের জন্যে” আর আমাদের শ্লোগান হউক “সাংবাদিক সাংবাদিকের জন্যে”। আমাদের ক্লাবের স্বচ্ছল ও বিত্তবান সাংবাদিকের সংখ্যা যদি ৫০ জন হন তা হলে অন্য অসচ্ছল ৫০জন সাংবাদিককে সহযোগিতা করা মোটেই অসম্ভব কিছু নয়।
মনে করুন, প্রত্যেক সচ্ছল সাংবাদিক যদি প্রতিজনে এক হাজার পাউন্ড অথবা ৫শত পাউন্ড করে জমা করে ক্লাবের মাধ্যমে ‘আপাতকালীন একটি ফান্ড’ গঠন করার পর তার মাধ্যমে আবেদনের ভিত্তিতে জরুরী বিবেচনায় তা প্রদান করা হলো। এতে প্রতি জনকে অন্তত এক হাজার পাউন্ড করে প্রদান করা হলেও গ্রহিতা জরুরী কিছু কাজ যেমন, ইউটিলিটি বিল, রেন্ট, খাদ্যদ্রব্য বা শিশুখাদ্য অথবাা অন্য কোন জরুরী কাজ সমাধা করতে পারলেন। এটা পরিমানে কম হলেও এ মূহুর্তে এটা অনেক বড় সহযোগিতা বলে আমি মনে করি। এ ব্যাপারে আমি যদিও তেমন কোন সচ্ছলতার অধিকারী নই তবুও ৫শত পাউন্ড এ ফান্ডে জমা দিতে রাজি আছি।
তবে এ ক্ষেত্রে আমার প্রস্তাবটির ব্যাপারে আরো খোলাসা করে বলতে চাই। সেটি হলো এ সহযোগিতাটি দ’ুভাবে হতে পারে। প্রথমত যাদের সহযোগিতা করা হবে তারা পরবর্তীতে এটি ফেরত দিয়ে দিবেন যখন তারা স্বাবলম্বী হবেন। অর্থাৎ ‘করজে হাসানার’ মত। আর অন্যটি হলো অফেরতযোগ্য। তবে সেটি ক্লাব নেতৃবৃন্দের আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে।
এ ব্যাপারে আমি আরো একটি প্রস্তাব করতে চাই যা ক্লাবের পক্ষ থেকে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। যেমন, বিশে^র বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন সাংবাদিকদের কল্যানে বিভিন্ন ফান্ড গঠন করেছে যা সাংবাদিকদের জন্য জরুরি সাহায্য হিসাবে বিবেচিত হয়।
যেমন, নিউ ইয়র্কে অবস্থিত সিপিজে তাদের জার্নালিস্ট অ্যাসিসট্যান্স প্রোগ্রামের মাধ্যমে ঝুঁকিতে থাকা সাংবাদিকদের মেডিক্যাল, আইনি এবং রিলোকেশন সহায়তা দিয়ে থাকে। প্যারিস ভিত্তিক সংগঠন আরএসএফ সাংবাদিক এবং সংবাদমাধ্যমকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করে, যাতে তারা নানা ধরনের আক্রমণ (মামলা বা হামলা) থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে। বন্দী সাংবাদিকদের পরিবারকেও আরএসএফ সাহায্য করে থাকে।
ডাচ সাংবাদমাধ্যম উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড সাংবাদিক ও মিডিয়া হাউজকে সরাসরি সহায়তা দেওয়ার জন্য এর তহবিল আছে। ইন্টারন্যাশনাল উইমেনস মিডিয়া ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠান কর্মরত মহিলা সাংবাদিকদের মেডিক্যাল, আইনি বা রিলোকেশনসহায়তা দিয়ে থাকে । সুইডেনে অবস্থিত ক্যালিটি ফাউন্ডেশন কাজের কারণে কারাগারে আটক সাংবাদিক ও ফটোগ্রাফারদের আর্থিক সাহায্য দিয়ে থাকে। লাইফলাইন ফান্ড দমন-পীড়ন এবং আক্রমণের শিকার হওয়া সাংবাদিক ও সিভিল সোসাইটি প্রতিষ্ঠানকে জরুরি সহায়তা দিয়ে থাকে। লন্ডনে অবস্থিত মিডিয়া ডিফেন্স লিগ্যাল ইনিশিয়েটিভ, সাংবাদিক, ব্লগার ও স্বাধীন সাংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে আইনি সহায়তা দেয়।
পরিশেষে বলতে চাই, এটি সম্পুর্ন আমার ব্যক্তিগত মতামত। সুতরাং তা সেভাবেই দেখবেন-এটাই প্রত্যাশা।
লেখক : মোঃ রহমত আলী, দর্পণ ম্যাগাজিনের সম্পাদক ও লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সাবেক ইসি মেম্বার।
Sent from Yahoo Mail on Android