দুই বাংলাদেশি নারী যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নির্বাচনে লড়বেন
মোঃ নাসির, নিউ জার্সি, আমেরিকা থেকে :
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ অংশ নিতে যাচ্ছেন দুই বাংলাদেশি নারি। যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য পেনিসিলভিনিয়া থেকে অংশ নেবেন নিনা আহমেদ, অপরদিকে টেক্সাসের ডিস্ট্রিক্ট ৩১ থেকে অংশ নেবেন ডোনা ইমাম। তরুন প্রার্থী হিসেবে দুইজনই এগিয়ে রয়েছেন অন্যান্য প্রার্থীদের শীর্ষে। দুজনেই তাদের চারিত্রিক বৈষিষ্ট্য আর গুনাবলী দিয়ে জয় করেছেন ভোটারদের মন । তবে নির্বাচনের মাঠে তাদের ব্যক্তিগত ইমেজ অন্যান্য হেভিওয়েট প্রার্থীদের কতটা রুখে দিতে পারবে সেটিই এখন চিন্তার বিষয়।
নিনা আহমেদ। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ থেকে পাড়ি জমান প্রায় ১৪ হাজার কিলোমিটার দূর যুক্তরাষ্ট্রে। দীর্ঘ ৯ বছর পর মার্কিন নাগরিকত্ব পান তিনি। বাংলাদেশি এই তরুনী রসায়নে সম্পন্ন করেন পিএইচডি। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের থমাস জেফারসন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে থেকে মেডিক্যাল ফেলোশিপ করেন তিনি।তাছাড়া নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে পেনসিলভানিয়ার অডিটর জেনারেল পদে নির্বাচনের জন্য ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়নের দৌড়ে থাকা ৬ জনকে উল্লেখযোগ্য ব্যাবধানে হারিয়ে হারিয়ে দলীয় মনোনয়ন লাভে সমর্থ হন তিনি। নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী টিমোথি ডেফোর।
আর এই অর্জনের মধ্যে তিনি ইতিহাস গড়েন বাংলাদেশি আমেরিকান এ নারী। আলাপকালে তিনি বলেন আমেরিকায় বাংলাদেশি কমিউনিটিকে তাদের চিরস্থায়ী বিদেশির মত অবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। লোকজন যেন কমিউনিটির অবস্থান বুঝতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন পেনসিলভানিয়ায় নিবন্ধিত রিপাবলিকানদের চেয়ে নিবন্ধিত ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যা আট লাখ বেশি। আর এটিই আমাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।
রাজনীতির পাশাপাশি নিনা আহমেদ একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আণবিক জীববিজ্ঞানী।
অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের ডিস্ট্রিক্ট ৩১ থেকে লড়বেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান ডোনা ইমাম। টেক্সাসে জন্মগ্রহণকারী ডোনা ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন শেষে নিজেই একটি ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেখানে কাজের পাশাপাশি মার্কিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী বাছাইয়ের নির্বাচনে ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়ে টেক্সাসের কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট-৩১ প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত হন তিনি।
অস্টিনের উইলিয়ামসন কাউন্টি এবং সেনা ছাউনি অধ্যুষিত ফোর্ট হুড নিয়ে গঠিত এই নির্বাচনী এলাকার ৮ লাখ ৩০ হাজার মানুষের শতকরা ৫৯.১৯ ভাগ হলেন শ্বেতাঙ্গ। এশিয়ানের সংখ্যা মাত্র ৫.২ ভাগ। হিসপানিক হচ্ছে ২৩.৯৩ ভাগ এবং কৃষ্ণাঙ্গ ১১.২৪ ভাগ। এই আসনে কখনোই ডেমোক্রেটরা জয়ী হতে পারেনি। এবারই প্রথম বাংলাদেশি আমেরিকান ডোনা ইমাম রিপাবলিকানদের একটি ধাক্কা দিয়ে জয়লাভ করেছেন। ইতোমধ্যেই তিনি অভিবাসী সমাজে আলোড়ন সৃষ্টির পাশাপাশি মধ্যম আয়ের শ্বেতাঙ্গদেরও পাশে টানার চেষ্টা করেছেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যমে মন্তব্য করা হয়েছে।
জানা গেছে, ডোনা ইমাম প্রাথমিক পর্ব অতিক্রম করেছেন অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে। সাম্প্রতিক ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের আগে কঠোর পরিশ্রমী মানুষের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে সোচ্চার ছিলেন। ডোনার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন জন কার্টার। আরও রয়েছেন লিবারেল পার্টির ক্লার্ক প্যাটারসন এবং স্বতন্ত্র জেরেমী ব্রেভো। ডোনা একমাত্র নারী প্রার্থী হিসেবে ভোটারদের কাছে ইতোমধ্যেই আলাদা একটি জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছেন।
ইতিমধ্যে ডোনাকে সমর্থন দিয়েছে ‘বাংলাদেশি আমেরিকান ফর পলিটিক্যাল অ্যাকশন’ নামক একটি সংগঠন। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের বল নিজের কোর্টে আনতে লড়াই করে যেতে হবে শেষ পর্যন্ত। নির্বাচনে বাংলাদেশি প্রার্থীদের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বাংলাদেশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গরা। সবে শেষ পর্যন্ত কি ঘটবে তার দিকে তাকিয়ে আছে সাধারণ মানুষ।