মুহম্মদ আজিজুল হক-এর কবিতা ‘একটন বেদনার ভার’
একটন বেদনার ভার
মুহম্মদ আজিজুল হক
তুমি চলে গেছো তাই, একটন
ব্যথা বুকে নিয়ে চলি সারাক্ষণ।
তোমাকে ভালোবেসেছিলাম, যেমনি
করে কেউ ভালোবাসে নি কারেও
কস্মিনকালে। বিবিক্ত বিরহে এখন
আমি দেখি তোমার মুখ যেদিকে
রাখি দুটি চোখ; জলে, স্থলে,
কিংবা অরণ্যানীর পাতায় পাতায়;
নিপট আঁধার রাত্রির নিযুত তারায়।
এক কাক-জোছনার হৈমন্তী সাঁঝ রাতে
সেদিন হেঁটেছিলাম পদ্মাপারে, বিহারে;
দেখি, মাথা রেখে ওপারে, শায়িত
জল-শয্যায় একাদশীর চাঁদ;
ঝিরঝিরে ঢেউয়ের অসংখ্য মুকুরে
চাঁদের পাশে ফুটে আছো তুমি, যেন
আরো এক চাঁদ; অগ্ণ্য মূরতি হয়ে।
তোমাকে আমি ভালোবেসেছিলাম
যেমন করে কেউ ভালোবাসে নি
কস্মিনকালে কারেও। ভেবেছিলে তা
ছিল কেবলই ছল। তাই আলেয়ার
আলোর মতো তোমার অঘোষিত
চলে যাওয়া; মরুর মরীচিকার
মতো সহসাই উবে যাওয়া। সেই
থেকেই বয়ে বেড়াই দুর্বিষহ
এই ব্যথার বোঝা।
চেয়েছিলাম পদ্মার গভীর জলে
ডুবাতে এ ব্যথার বিশাল পাথর;
যেমনি করে পূজো শেষে
ভক্তরা দেবীরে ডুবায়।
হয় নি তাও আর। তাই আজো
আমি, রাহু কবলিত সূর্যের মতো,
বহি একটন বেদনার ভার!
(মুহম্মদ আজিজুল হক
চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত)।