জীবনের কথা, পর্ব-৪৯
ঔষধ ঘরে মওজুদ থাকা না থাকার মধ্যে টেনশনের একটা সম্পর্ক আছে
:: মো. রহমত আলী ::
অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থান এ পাঁচটি হচ্ছে মানুষের মৌলিক অধিকারের বিষয়। তাই যে সমস্ত দেশ এগুলি যতবেশী মানুষকে সরবরাহ করতে পারছে সে দেশগুলিকে তত বেশী ওয়েলফেয়ার বা জনকল্যানমূখী রাষ্ট্র হিসাবে বর্ণনা করা হয়ে থাকে। বৃটেন হচ্ছে এ সমস্ত ওয়েলফেয়ার রাষ্ট্রের একটি। তবে বৃটেনে এগুলি ছাড়াও মানুষের নিরাপত্তা, বাক স্বাধীনতা, সমানাধিকার প্রভৃতি বিষয় গুরুত্ব সহকারে স্থানলাভ করে আছে। তাই যে কেউ এদেশে বসবাস করার ক্ষেত্রে সব সময়ই সাচ্ছন্ধবোধ করে থাকেন।
আজকে আমার আলোচনা বৃটেনের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কিছু বিষয় নিয়ে। এ ব্যাপারে বৃটেনে যারা বসবাস করেন তাদের অনেকের মধ্যে অনেক মত থাকতে পারে বা রাজনৈতিকভাবে ভিন্নমত থাকতে পারে। তবে আমাদের দেশের মত উন্নয়নশীল দেশ থেকে যারা এ দেশে এসে বসবাস করছি তাদের ক্ষেত্রে বৃটেনের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সযোগ সুবিধা এক অকল্পনীয় ব্যাপার বলেই আমি মনে করি। জরুরী ভিত্তিতে কল করলেই এম্বুলেন্স চলে আসা, ক্ষেত্র বিশেষে বিনামূল্যে ডাক্তার দেখানো ও ঐষধপত্র এবং সর্বোপরী শিশু, মা ও প্রবিণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তাদের যে ভূমিকা রয়েছে তা স্ববিশেষ উল্লেখযোগ্য।
আমি এখনো প্রবীণ হইনি বা পেনশনও লাভ করিনি। কারণ বয়স ৬৭ হয়নি। তবে বয়স ৬০ হলেই যে সমস্ত সূযোগ সুবিধা বৃটেনে পাওয়া যায় তার কিছুটা লাভ করছি। সাথে সাথে পূর্ন ঘন্টার পরিবর্তে খন্ডকালীন কাজের সুবাধে যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় তাও উপভোগ করছি। তার মধ্যে একটি হচ্ছে ফ্রি ওয়েস্টার ভ্রমন কার্ড। যেটি দিয়ে লন্ডনের নির্দিষ্ট এলাকায় বিনামূল্যে ট্রেন ও বাস চলাচলের সুবিধা রয়েছে। অন্যটি হচ্ছে ডাক্তার দেখানো ও ঐষধপত্র ফ্রি পাওয়া।
সাধারণ অসুখ-বিষুখের জন্য সকলকেই প্রাথমিকভাবে জিপি বা জেনারেল প্রেক্টিশনারের কাছে যেতে হয়। ইতিপূর্বে এ জন্য এপয়েন্টমেন্ট করলে সিরিয়ালমত তারিখ দেয়া হতো। এতে অনেকে সপ্তাহ বা তার চাইতে অধিক দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। ফলে ডাক্তারের নির্ধারিত এপয়েন্টমেন্ট আসার সময় পর্যন্ত রোগটির তারতম্য ঘটতো অনেক ক্ষেত্রে। কিন্তু এখন ‘প্রথম আসলে প্রথম‘ ভিত্তিতে প্রতিদিনি সকালে ফোন করতে হয় আর তখনই তা বুক করা হয়। না থাকলে অন্য কোথাও পাঠানো হয়। এরপর ডাক্তার দেখা শেষে প্রেসকিপশন দেয়া হয়। কিন্তু এ প্রেসক্রিপশন আগে হাতে করে ফর্মেসিতে নিয়ে আসতে হতো। কিন্তু এখন আর তা হাতে করে নিয়ে আসতে হয় না। সেখান থেকে সরাসরি ফার্মেসিতে পাঠিয়ে দেয়া হয় এবং সে ফার্মেসি থেকে ঔষধ গ্রহণ করা যায়।
এদিকে যদি কেউ সব সময় নির্দিষ্ট ঔষধ গ্রহণ করে থাকেন তবে তাকে ঔষধ শেষ হওয়ার পর আর ডাক্তারের কাছে যেতে হয় না। ঘরে বসে ফোন করলেই রিপিট প্রেসক্রিপশনের ব্যবস্থা করা হয় এবং তা সরাসরি ফার্মেসিতে পাঠানো হয়। তাই পূর্বের মত শুধুমাত্র ফার্মেসিতে গিয়ে ‘কালেকশন‘ বলেই সে সমস্ত ঐষধপত্র গ্রহণ করা হয়।
বর্তমান পেনডামিকের কারণে আমিও আর ঘর থেকে বেশ বের হইনা। তাই টেলিফোনের মাধ্যমেই নির্দিষ্ট ঐষধপত্রগুলি সংগ্রহ করে থাকি। সে ধারাবাহিকতায় আমি এবারও আমার রিপিট প্রেসক্রিপশনের জন্য ফোন করি এবং এর কয়েকদিন পর ফার্মেসিতে গিয়ে ঐষধ সংগ্রহ করতে চাই। কিন্তু ফার্মেসির লোকজন জানালো আমার ঔষধের কোন অর্ডার তারা পায় নাই। আমি তখন সাথে সাথে জিপিতে ফোন করি। তারা জানালো আমার ঔষধের অর্ডার তাদের লিপিবদ্ধ তালিকায় নেই। তাই আবার অর্ডার করতে হবে। আমি তখন পুনরায় অর্ডার দিলাম। তখন বলা হলো দুইদিন পর ফার্মেসিতে যোগাযোগ করার জন্য।
কিন্তু এ সময়ে আমার পূর্বের ঔষেেধর মধ্যে একটি একেবারে শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাই আমার এ ঔষধ নিতে ২/৩দিন বিলম্বে হবে বিধায় আমার মধ্যে একটি শংকা তখন থেকে শুরু হলো। আমি যেন তখন সে ফার্মেসি থেকে নিজ ঘরে হেটে আসতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল, এ দিনগুলি কিভাবে আমি ঔষধছাড়া কাটাবো। আর এর ফলে আমার শারিরীক দুর্বলতা যেন বেড়েই চলতে লাগলো। ফলে একটা টেনশনের মধ্যে পড়ে গেলাম। কিন্তু অনেক সময় ঘরে ঔষধ পর্যাপ্ত থাকলেও কোন কারণে তা ২/৩দিন গ্রহণ না করলেও সে টেনশন হতো না। তাই আমি ভাবলাম ঔষধ ঘরে মওজুদ থাকা না থাকার মধ্যে টেনশনের একটি সম্পর্ক আছে।
এ প্রসঙ্গে আমি আরও একটি কথা উল্লেখ না করে পারছি ন। একসময় আমি কয়েক বছর সিগারেটের প্রতি দারুন আসক্ত ছিলাম। তখন যদি কোন কারণে রাত্রে ঘুমানোর আগে সিগারেট শেষ হয়ে যেত তখন মহা টেনশনে পড়ে যেতাম। সহজে ঘুম আসতো না। আমার মধ্যে যেন তখন একটা অশান্তি বিরাজ করতো। কোন কোন দিন আমি এ টেনশনের কারণে এই রাত্রিবেলা স্থানীয় বাজারে চলে যেতাম। তখন যদি দোকান বন্ধ হয়ে যেত তবে খোঁজ করে দোকান মালিককে বের করে তবেই সিগারেট নিয়ে আসতাম। অথচ সে সিগারেট কিন্তু আর রাত্রে পান করতাম না। মনের শুধু শান্তনা থাকতো যে আমার পাশে সিগারেট আছে প্রয়োজনে তা পাওয়া যাবে।
আমার মনে হয় এ নেশা অনেকের মধ্যে আছে। যাদের ভাত খাওয়ার চাইতে সিগারেটের টেনশনের নেশা বেশী থাকে। তবে আজকাল অবশ্য আর সেভাবে সিগারেটের নেশায় মানুষ বিভোর থাকে না। কারণ আরো অনেক ব্যবস্থা আছে যা দিয়ে এ নেশাকে বশিভূত করা যায়। তবে ধুমপান বিষ পান তাই যারা এতে আসক্ত আছেন তাদের সেটা ছেড়ে দেয়াই ভাল। তখন অর্ধের স্বাশ্রয় হবে ও স্বাস্থ্য ভাল থাকবে। (চলবে)
লেখক: যুক্তরাজ্য প্রবাসী প্রবীণ সাংবাদিক ও দর্পণ ম্যাগাজিন সম্পাদক। ইমেইল: rahmatali2056@gmail.com