রাজলক্ষ্মী মৌসুমী-এর কবিতা ‘স্বর্গীয় উর্মির অনুভূতি’
স্বর্গীয় উর্মির অনুভূতি
রাজলক্ষ্মী মৌসুমী
সাগরের উত্তাল ঢেউ আমাকে ইশারায়
ডাকে।
তোমার বালুকাময় ভালোবাসার পরশ
পাওয়ার অনুভূতি আমায় স্টার ফিস
আর জীবন্ত ঝিনুকের কাছে টেনে নিয়ে
যায়।
ঝিনুক সমূদ্রের উত্তাল তরঙ্গে তীরে এসে
আঁছরে পরে ঠিক আমারি কোলে।
আমি ওকে জড়িয়ে ধরি যত্ন করে।
ভিতর থেকে ছোট করে মুখ বের আমায়
দেখে, কী যেনো বুঝাতে চায়। সমূদ্র সেচে
মুক্ত কুড়ানোর কথা মনে হলো।
না না না আমি তা চাইনা।
ছোট ছোট পায়ে পিল পিল করে চলে
গেলো।
খুব কষ্ট লাগছিলো– আমার কাছে আর
একটু সময় থাকলো না কেনো?
ঢেউ একের পর এক আমাকে পরশ
বুলিয়ে পায়ের নীচের মাটি সরিয়ে নেয়।
আমি একটু টলে যাই, ভয়ও পাই।
হাটছি শুধু হাটছি হঠাৎ দেখি স্টার ফিস আমার একেবারে পায়ের কাছে। ধরতে
গেলাম একটু ভয় পেয়েছি। শামুক
হেলেদুলে জলের বালিতে খেলা করছে।
কী সুন্দর জীবন। সাগর পাড়ে অসংখ্য
মানুষ সাগরে ঝাঁপাঝাপি করছে।
বন্ধু তুমি বলেছিলে তোমার জন্ম সাগর
পাড়ে।
হয়তো কী অদ্ভুত অনুভূতি তোমার
জন্মদাত্রি মায়ের।
তুমি কী এই পরিবেশের স্বাদ অনুভব
করো?
চলোনা দু”জনে সাগরের বুকের
ভালোবাসা নিংড়ে নিয়ে আসি।
গচ্ছিত করে রাখবো বুকের লুকানো
কোটরে।
কেউ জানতেও পারবেনা। শুধু আমদের
দু”জনার।
দোলায়িত উর্মির পরতে পরতে যেন
সোহাগ দিয়ে আমায় এক ঝাপটায় লোনা
জলে ভিজিয়ে দিলো।
আমি একটু একটু করে সাগর জলে যেতে থাকলাম।।
বন্ধু আমার হাত ধরে রাখলো ।
যদি তলিয়ে যাই গভীর জলে?
বিশাল ঢেউ আমার মাথার উপরে দিয়ে
এক ঝাপটায় আমায় নিয়ে চলে গেলো
সাগরের তীরে।
কে যেন বলছে আমায় কানে কানে
সাবধান—-
আর গভীর জলে যাসনে
যেনো।
এখন ভাটার সময় একটু থমকে গেলাম।
আবার ভাবলাম এই উচ্ছলতা, এত
চঞ্চলতা, মাতোয়ারা প্রগাঢ় প্রেমের
অভিলাষের সাধ জাগে শুধু এমনি
পরিবেশে, কী শান্তি, কী আনন্দ আর
কোথাও নেই।
উজানের ঢেউ যেনো প্রতিটি কূলেই
আনন্দচ্ছটার ধারা বয়ে চলেছে।
সাগরকে বলতে ইচ্ছে করে —-
তোমার বিশাল বক্ষে উর্মি নিজের
গতিতে খেলা করে বয়ে চলো।
আবার ভাটায় তুমি নিজেকে গুটিয়ে
ফেলো।
একেবারে তুমি চুপসে যাও সেই সূদুরে
চলে যাও।
পরে থাকে শুধু বালি আর বালি।
ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা কুড়িয়ে নেয় মরা
শৈবাল আর ছোট্ট ঝিনুক।।
বন্ধু মনে পরে তোমার! আমাকে প্রথম
দেখাতেই মুক্তোর মালা আমায় পরিয়ে দিয়েছিলে?
বিকেলের শেষ প্রান্তে লাল টকটকে
সূর্যের আলোতে সাগরের কী অপরূপ
দৃশ্য চোখে পরলো।
সাগর তীরের সৌন্দর্যে বিমোহিত
সব মানুষ।
রক্তিম সূর্যটা ধীরে ধীরে
সাগরের বুকে তলিয়ে যাচ্ছে
আমি অপলক নয়নে শুধু দেখছি
সমূদ্রের আর রক্তিম সূর্যের মিলনের
প্রতিচ্ছবি।
অতল গহ্বরে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে গেলো রক্তিম সূর্য।
সাগর যেনো স্তব্ধ, নিঃশ্চুপ ভাবে
প্রেমের বাহুডোরে আঁকড়ে ধরলো।
সাগরের উথাল পাতাল ঢেউ
যেন আর মানুষের মনকে দোলায়িত
কররে না।
সূদুর থেকে রাতের অন্ধকারে কানে আসে
সমূদ্রের শোঁ শোঁ আওয়াজ।
অনুভব কোরলাম তোমারও আমাদের মতো
মন ভারাক্রান্ত হয়।
তোমার ক্রন্দন ধ্বনির করুণ আওয়াজ
মর্মে মর্মে উপলদ্ধি কোরলাম আমি।
তোমার বিশালতা, তোমার উদারতায়
আমাদের শরীর, সাস্থ্য, মন, প্রফুল্লতায় ভরে ওঠে।।
তাইতো তোমার কাছে সবাই ছুটে যাই,
তোমার কাছে সবাই চিরদিন ঋণি।।