প্রচ্ছদ

জীবনের কথা, পর্ব-৫০

  |  ১৭:২৩, অক্টোবর ০৪, ২০২০
www.adarshabarta.com

ছেলের জন্যে মায়ের আব্দার

:: মোঃ রহমত আলী ::

আমার স্ত্রীকে যখন অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করতে যাই তখন তার শেষ আবদার ছিল, ছেলের মন যাতে খুশি থাকে এ ধরনের আচরণ যেন আমি তার সাথে করি। কারণ আমাদের একটি মাত্র ছেলে। আমি ভেবেছিলাম হয়তো তিনি বলবেন আমার ছয় মাসের ছোট মেয়েটির কথা তাকে কিভাবে আমি একা লালন-পালন করব। কারণ সে মেয়েটিকে আমি তিনি হাসপাতলে থাকাকালীন লালন পালন করেছি। আমি সে কথাটা তখন স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণ করেছি এবং ছেলে মেয়ের পার্থক্য না করে সবাই যাতে খুশি থাকে সে ধরনের মনোভাব পোষণ করেছি। তবে এটা বলতে দ্বিধা নেই যে মায়ের কাছে ছেলেরা এবং বাবার কাছে মেয়েরা তুলনামূলক বেশি আদরের হয়ে থাকে। যা আমি সব সময় বাস্তবে দেখে আসছি।
আমার স্ত্রী তখন মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন। আমি লন্ডনে চলে আসার পর প্রায় ১০ বছর অপেক্ষা করে আমার পরিবারের সবাই এখানে চলে আসে। আর এর এক বছরের মধ্যেই তার মধ্যে এ সমস্যা দেখা দেয়। প্রথমে আমি অনেক তাবিজ-কবজ ও কবিরাজি করিয়েছি কিন্তু কোন কিছুতেই কোন ফলাফল আসে নাই। বরং এতে আমার অনেক আর্থিক ও মানসিক ক্ষতি হয়েছে। তা ছাড়া এগুলি আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছি, যার বিরুদ্ধে সব সময় আমি সোচ্চার ছিলাম। তখন উপলব্ধি করেছি আমরা যখন যেটাই বলি না কেন যখন নিজের উপরে পড়ে তখন এগুলি রক্ষা করা যায় না। অনিচ্ছা থাকলেও তা গ্রহন করতে হয়।
সে যাই হোক, আবার আমার স্ত্রীর কথায় ফিরে আসি। তিনি আমাদের ছেলেকে খুশি থাকার ব্যাপারটা শুধু অধিক স্নেহ-মমতার কারণেই বলেননি, এর আরো কিছু কারণও রয়েছে। বিগত প্রায় ১৮ বছর যাবত সে আমার সাথে দর্পণ ম্যাগাজিনে কাজ করছে। এ সময় পত্রিকার, টাইপ, ডিজাইন ও সার্কুলেশনসহ যাবতীয় কাজ সে সম্পাদন করে। আমি শুধুমাত্র কিছুটা পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকি। এর সাথে কিছু কিছু কাজ আমি করে থাকি। কিন্তু এ থেকে যা আয় হয়ে থাকে তার মাধ্যমে বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল দেয়া সম্ভব হয় না আমাদের বেতন নেওয়া তো দূরের কথা। এটা আমাদের “নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মত অবস্থা”। আমার বেলায় যাই হোক, ছেলে তার যাতায়াত খরচ সংগ্রহের জন্য প্রায় সময় মেয়েদের কাছে হাত পাতে। আর এ নিয়ে মেয়েদের মধ্যেও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করে সেটা আমি বুঝতে পারি। তারা আমাকে কিছু বলার সাহস না পেলেও তার মা বিষয়টি আমার নজরে প্রায় সময় আনেন আমি শুনেও না শোনার ভান করতাম আর এটাই ছিল আমার স্ত্রীর আসল উদ্দেশ্য।
আমি সম্পূর্ণ লোকসানের বাগি হয়েও কেন দর্পণ মেগাজিন চালাই তার কারণ মাঝে মাঝে আমার পরিবারের সবার সাথে আলাপ করি কিন্তু তারাও এটা শুনে না শোনার ভান করে। আমি বলেছি যে, দর্পণ ম্যাগাজিনের সূত্র ধরে আমি বিলেতে এসেছি যে কারণে তোমাদের এখানে আসার সুযোগ হয়েছে তাই এ কাজটি আমি ছেড়ে দিতে পারব না। তাছাড়া বর্তমানে আমার আর কোন কাজ করার সাধ্য নাই এবং সময় কাটানোর কোন সুযোগ নাই তাই যতদিন সম্ভব এটা অব্যাহত রাখতে হবে। তবে শুধু ম্যাগাজিনে নয়, ইতিপূর্বে বেশ কয়েকটি পত্রিকায় লিখেছি এবং বর্তমানে আরো কিছু বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখে পাচ্ছি। তা ছাড়া এখন দর্পণ টিভি পরিচালিত করছি। তাই সে যদি আমাকে সহযোগিতা থেকে বিরত থাকতো তবে আমার তা চালানো সম্ভব হতো না। বলতে গেলে আমি একেবারেই অচল তাই তাকে অনুরোধ করেছি ব্যাপারে আমাকে সে যাতে তাঁর সাহায্য বা হত রাখে বর্তমানে সে অন্য একটি কাজ করলেও আমার কাছে অব্যহত রেখেছে তার কাজের কোনটা লম্বা হয়ে গেলে অনেক সময় আমি তাকে বিরক্ত না করে পারি না কিন্তু সেসব কিছুই নিরবে সহ্য করে যায়।
আর আমার ছেলে মেয়েরা যখন বিলেতে আসে তখন আমার এক ছোট ভাই একই গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস বলেছিল যে, তারা দেশ থেকে আসায় আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, তারা কখনো আপনার কথার অবাধ্য হবে না। তাই বিগত দিনে পরিবার-পরিজন ছাড়া আপনি যে কষ্ট করেছেন আগামীতে তারা তা পুষিয়ে দেবে। আপনার ভবিষ্যৎ ভাল হবে। সত্যি বলতে কি আমি এখন তার কথার শতভাগ প্রমাণ পাচ্ছি। হয়তো তারা যদি এদেশে জন্ম গ্রহণ করত তবে আমাকে এভাবে সহযোগিতা করার সুযোগ হতো না অথবা সহযোগিতা করতে সচেষ্ট হতো না। তাই মহান আল্লাহতালার কাছে এ জন্য শুকরিয়া আদায় করছি। (চলবে)।

লেখক: যুক্তরাজ্য প্রবাসী প্রবীণ সাংবাদিক ও দর্পণ ম্যাগাজিন সম্পাদক। ইমেইল: rahmatali2056@gmail.com